সমস্যাটা শুরু হয়েছিল গত অক্টোবরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীনই। নেপালের কাঠমান্ডুতে নারী ফুটবলারদের কয়েকজন কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন, তিনি নাকি সিনিয়রদের পছন্দই করেন না। সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশ আসার পর এক সিনিয়র ফুটবলারতো গনমাধ্যমকে বলেছিলেন পিটার বাটলার কোচ থাকলে তিনি ক্যাম্পেই উঠবেন না।
দলের সিনিয়র কয়েকজন জোট বেঁধেছিলেন পিটারকে তারা চান না। বাফুফে সেই পিটার বাটলারকে নারী ফুটবল দলের প্রধান কোচ হিসেবেই রেখে দিয়েছে এবং নতুন চুক্তি করেছে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ছুটি কাটিয়ে পিটার এরই মধ্যে ঢাকায় ফিরে নারী দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে তার অধীনে মাঠের অনুশীলন শুরু হয়নি। শুরু হবে কি করে, সাবিনা-ঋতুপর্ণাদের অনুশীলনের জন্য তো মাঠই পাচ্ছে না বাফুফে। কমলাপুর স্টেডিয়ামে নতুন টার্ফ স্থাপনের কাজ চলছে, বাফুফে ভবন সংলগ্ন মাঠের টার্ফের অবস্থা বেহাল।
কিবল্প হিসেবে বাফুফে ভাড়া করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ। পিটার বাটলার আসার আগে সহকারী কোচদের অধীনে বুয়েট মাঠে অনুশীলন শুরুও করেছিল নারী ফুটবল দল। তবে সেখানকার মাঠ শক্ত ও অনুশীলনের অনপুযোগী বলে অভিযোগ করেছেন মেয়েরা। একজন মেয়ে নাকি ব্যথাও পেয়েছেন।
সবকিছু মিলিয়ে বুধবার বিকেলের খবর, নারী ফুটবলাররা নাকি অনুশীলন বর্জন করেছেন। যদিও সিনিয়র এক নারী ফুটবলার জাগো নিউজকে বলেছেন, তারা জিম করেছেন। অনুশীলন সিডিউলে ছিল না। তবে এটাও জানা গেছে যে, পিটার ফিরে এসে যে টিম মিটিং ডেকেছিলেন সেখানে মেয়েরা উপস্থিত হননি।
তাহলে কি হয়েছিল? কিছু সিনিয়র ফুটবলার যে পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন করতে চান না সেটা সত্য। কোচ নিয়ে সমস্যা ও মাঠ সংকটের মধ্যেই উঠে এসেছে অনুশীলন বর্জনের খবর। বিকেলে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বাফুফের সদস্য ও টেককিনক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান কামরুল হাসান হিলটন।
জানা গেছে, পিটার বাটলারের অধীনে মেয়েরা অনুশীলন করতে চান না, এ বিষয়ে কি বলবেন? জবাবে হিলটন বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমি বলবো খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করে তো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চলবে না। আমাদের ম্যানেজমেন্ট আছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা আছেন, তারা সবকিছু চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের কোনো কথা এখানে চলবে না।’
এসব ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে হিলটন বলেছেন, ‘থাকেই তো। খেলার মধ্যে কিছু কিছু সমস্যা তো থাকতেই পারে। ছোট ছোট যে ঘটনা তা আমরা ফয়সালা করে দেবো।’
তাহলে কি ফুটবলারদের কোনো মতামতই থাকবে না? ‘খেলোয়াড়দের মতামতের বিষয়টি অন্য জায়গায়। এখানে শৃঙ্খলার বিষয় আছে। অনেক কিছুর বিষয় আছে। শৃঙ্খলার সাথে তো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন মিনিমাইজ করবে না’- বলেছেন কামরুল হাসান হিলটন।
এ বিষয়ে বাফুফের সহ-সভাপতি ফাহাদ করীম বলেছেন, ‘আমি কিছু জানি না। শুনেছি মেয়েদের অনুশীলনের জন্য মাঠ সমস্যা আছে। কোচ পিটার বাটলার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠ দেখেছেন। তিনি মনে করেন, সেখানে অনুশীলন সম্ভব। তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দ্রুত অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে কিনা সে বিষয়টাও আছে। বিকল্প হিসেবে বসুন্ধরা কিংসের মাঠের কথাও ভাবা হচ্ছে।’
এ দিকে বাফুফের একটি সূত্র দাবি করেছে, তারা শৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর। ছোট-খাট বিষয় কম্প্রোমাইজ করলে সামনে আরো বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। তারা অনেক ভেবেচিন্তে এবং বিকল্প না পেয়েই সাফল্য এনে দেওয়া এই ইংলিশ কোচকে আবার দায়িত্ব দিয়েছে। পিটার বাটলারের অধীনেই সবাইকে অনুশীলন করতে হবে। বাফুফের অনেকে মনে করেন, কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের মতামত পুরো দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বুধবার বিকেলে বাফুফের সদস্য ও নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারপার্সন মাহফুজা আক্তার কিরণ বসেছিলেন নারী ফুটবলারদের সাথে। লম্বা একটা সময় তিনি কথা বলেছেন মেয়েদের সাথে। জানা গেছে তিনিও মেয়েদের পরিস্কার বলে দিয়েছেন পিটার বাটলারের অধীনেই অনুশীলন করতে হবে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন