ওয়াশিংটনে উড়োজাহাজ-হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারালেন যাঁরা

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সামরিক হেলিকপ্টার ও যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ সংঘর্ষের ঘটনায় ৬৭ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৪০ জনের মরদেহ পটোম্যাক নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। মৃতের তালিকায় রয়েছেন রাশিয়ার জনপ্রিয় স্কেটারসহ অধ্যাপক, পুলিশ কর্মকর্তা ও আইনজীবী। বিবিসির এক প্রতিবেদনে মৃত কয়েকজনের নাম-পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে।

ক্যাপ্টেন জোনাথন জে. ক্যাম্পোস : সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হওয়া যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটির ক্যাপ্টেন ছিলেন জোনাথন জে. ক্যাম্পোস। আট বছর ধরে পিএসএ এয়ারলাইনসে কর্মরত ছিলেন ৩৪ বছর বয়সী ক্যাম্পোস। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বেড়ে ওঠা তাঁর। ক্যাম্পোসের খালা বেভারলি লেন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘তিন বছর বয়স থেকে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখত ক্যাম্পোস। সে স্বাধীন হতে চেয়েছিল, পাখির মতো উড়তে চেয়েছিল।’

পাইলট স্যাম লিলি : ২৮ বছর বয়সী পাইলট স্যাম লিলি। তাঁর বাবা টিম লিলি নিউজনেশনকে বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা পার করছিল স্যাম। তার স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়া। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাইলটের লাইসেন্স পেয়েছিল সে। শিগগিরই বিয়ের পরিকল্পনা ছিল তার।’ এবিসি নিউজের সঙ্গে স্যামের বোন টিফানি গিবসন বলেন, ‘স্যাম অসাধারণ মানুষ ছিল। সে মানুষকে ভালোবাসত, অ্যাডভেঞ্চার করতে পছন্দ করত। খুব ঘুরে বেড়াত সে। সে জীবন নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবত। সে ভাবত তার একটা কুকুর থাকবে। একটা বাড়ি আর বাচ্চা থাকবে।’

ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ইয়ান এপস্টেইন : উড়োজাহাজটির ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন ইয়ান এপস্টেইন। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। তিনি ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের কাজটি উপভোগ করতেন। কারণ তিনি, ছিলেন ভ্রমণপ্রিয়। নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন তিনি। পরিবারকে খুব ভালোবাসতেন ৫৩ বছর বয়সী ইয়ান।

ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ডানেসিয়া এল্ডার : মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে ডানেসিয়া এল্ডারের পরিবার নিশ্চিত করেছে যে তিনি ওই উড়োজাহাজে ছিলেন। উত্তর ক্যারোলিনার শার্লোটের বাসিন্দা তিনি। তাঁর পরিবার জানায়, ডানেসিয়া স্ত্রী, অভিভাবক, বন্ধু হিসেবে দারুণ মানুষ ছিলেন। ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হওয়া তাঁর স্বপ্ন ছিল।

ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের ক্রু চিফ রায়ান ও’হারা : সিবিএস নিউজ জানায়, মার্কিন সামরিক বাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের ক্রু চিফ ছিলেন ২৯ বছর বয়সী রায়ান ও’হারা। স্থানীয় রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কর্পস (আরওটিসি) সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তাঁর স্ত্রী ও এক বছর বয়সী ছেলে আছে। ও’হারা আরওটিসির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

মিসিসিপির চিফ ওয়ারেন্ট অফিসার ২ অ্যান্ড্রু ইভস : মিসিসিপি গভর্নর টেট রিভস নিশ্চিত করেছেন, চিফ ওয়ারেন্ট অফিসার ২ অ্যান্ড্রু ইভস এই সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। অ্যান্ড্রু ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের পাইলট ছিলেন তাঁর স্ত্রী ক্যারি ইভস। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আপনারা আমাদের পরিবার ও বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা করুন। আজ যাঁরা কষ্ট পাচ্ছেন, তাঁদের পরিবারের জন্যও প্রার্থনা করুন। আমরা শোক প্রকাশ করে শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি।’

আইস স্কেটারদের ১৪ জনের দল : যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটিতে স্কেট ক্যাম্পফেরত আইস স্কেটার ও কোচসহ ১৪ জনের একটি দল ছিল। এ দলে ছিলেন রাশিয়ার জনপ্রিয় আইস স্কেটার এভজেনিয়া শিষকোভা ও ভাদিম নাউমভ। তাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে ক্রেমলিন। ১৯৯৪ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী এই অবসরপ্রাপ্ত রুশ স্কেটার জুটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ দিতে গিয়েছিলেন। দলটিতে আরও ছিলেন ১৬ বছর বয়সী আইস স্কেটার স্পেনসার লেন ও তাঁর মা ক্রিস্টিন লেন (৪৯)। এ ছাড়া ১৩ বছর বয়সী জিন্না হানের সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা জিন। মার্কিন স্কেটার ১২ বছর বয়সী অলিভিয়া টের উড়োজাহাজটিতে ছিলেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা অলিভিয়া তাঁর প্রতিভা, দৃঢ়তা ও খেলুড়ে মানসিকতার জন্য সবার অনুপ্রেরণা ছিল।

আইস স্কেটার কোরি হাইনোস, তাঁর বাবা রজার হাইনোস ও মা স্টেফানি ব্র্যানটন হাইনোসের সঙ্গে ইউএস আইস স্কেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোরির পরিবারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তাঁর এক স্বজন বলেন, কোরি অসাধারণ স্কেটার ছিলেন। তাঁরা আশা করছিলেন, তিনি শিগগিরই অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

অধ্যাপক কিয়া ডাগগিনস : হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় অধ্যাপক কিয়া ডাগগিনস মারা গেছেন। তিনি একজন নাগরিক অধিকার আইনজীবী ছিলেন। আগামী শরতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল ফ্যাকাল্টিতে পাঠদান শুরুর কথা ছিল তাঁর। টেনেসি, টেক্সাস ও ওয়াশিংটন ডিসিতে অবৈধ পুলিশিং এবং অর্থের বিনিময়ে অবৈধ জামিন প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তিনি।

আইনজীবী সারা লি বেস্ট ও এলিজাবেথ কিজ : ওয়াশিংটনে দুজন আইনজীবী ওই উড়োজাহাজে ছিলেন বলে তাঁদের প্রিয়জনেরা নিশ্চিত করেছেন। নিহত সারা লি বেস্ট ও এলিজাবেথ কিজ উইলকিনসন স্টেকলোফ প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে কর্মরত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা বেথ উইলকিনসন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তাঁরা আইনজীবী, সহকর্মী ও বন্ধু হিসেবে চমৎকার ছিলেন। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা।’ ৩৩ বছর বয়সী সারা লি বেস্টের স্বামী ড্যানিয়েল সলোমন ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, তাঁরা দশম বিবাহবার্ষিকী উদ্‌যাপনে হাওয়াই যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। আইনজীবী এলিজাবেথ কিজের (৩৩) বন্ধু ডেভিড সাইডম্যান জানান, জন্মদিনের দিনেই মৃত্যু হলো এলিজাবেথের।

আসরা হুসেন রজা : ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সী আসরা হুসেন রজা ওই উড়োজাহাজে ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন তাঁর স্বামী হামাদ রজা। তিনি বলেন, আসরা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর করেছিলেন। তিনি একটি হাসপাতালকে সহায়তা করতে গিয়েছিলেন। আসরা তাঁর কাজকে খুব ভালোবাসত।

ফিলিপাইনের পুলিশ কর্মকর্তা পারগেন্টিনো এন. মালাবেদ : ফিলিপাইন পুলিশ নিশ্চিত করেছে, তাদের এক কর্মকর্তা কর্নেল পারগেন্টিনো এন. মালাবেদ ওই উড়োজাহাজে ছিলেন। পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, পটোম্যাক নদী থেকে কর্নেল মালাবেদের পাসপোর্টসহ একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিপাইনের পুলিশের জন্য পুলিশ ভেস্ট পরীক্ষা করতে মালাবেদ দুজন অফিসারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। ওয়াশিংটনে ফিলিপাইনের দূতাবাসে যাচ্ছিলেন তিনি।

কেসি ক্রাফটন : কানেকটিকাটের সেলেম লিটল লিগ নামে একটি বেসবল ক্লাবের কোচ ছিলেন কেসি ক্রাফটন। রাজ্যটির গভর্নর নেড লামন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। সেলেম লিটল লিগ এক বিবৃতিতে বলেছে, ক্রাফটন পরিবার সেলেমের সবকিছুর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিল। পরিবারটির অপূরণীয় ক্ষতিতে তাঁরা দুঃখিত। এ ছাড়া একসঙ্গে শিকার ভ্রমণে যাওয়া ছয় বন্ধু ওই উড়োজাহাজে ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের পরিবার। তাঁদের মধ্যে মাইকেল স্টোভাল ও জেসি পিচার নামে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন