দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও লুৎফুন্নাহার লাকী নামের আওয়ামী লীগের এক নেত্রীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।
আওয়ামী লীগের নেত্রী লুৎফুন্নাহার লাকী ওরফে এল নাহার ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বাতুয়াদি গ্রামের মো. শামছুল আলম খন্দকারের মেয়ে। তিনি নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী মহিলা লীগের আহ্বায়ক ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য।
নান্দাইল থানাসূত্রে জানা যায়, সিআর মোক নং ২৫১/১৯ ময়মনসিংহ যুগ্ম দায়রাজজ আদালত-এর মামলায় এক বছরের সাজা ও ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা। সিআর মোক নং- ২০৪৩/১৬ চার মাসের বিনাশ্রম সাজা ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। সিআর মোক নং-৬০৫(১)/১৮ কিশোরগঞ্জ ২ বছরের সাজা। সিআর মোক নং-১০৮৯/১৮ যুগ্ম মহানগর দায়রাজজ আদালত ঢাকা।
২ বছরের সাজা। এই চারটি সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে নান্দাইল থানায়।
জানা যায়, লাকী ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সিংরুইল ইউনিয়নের তেলিয়াগ্রামের আনিছুল হকের মেয়ে নান্দাইল উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য লাভলী আক্তার ময়নার কাছে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন। টাকা দেওয়ার সময় তিনি নিজের মোবাইলেও ধারণ করে রাখেন।
পরে দীর্ঘদিনেও চাকরি না দেওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর নান্দাইল কৃষি ব্যাংক শাখার একটি চেক দেন নেত্রী লাকী। পরে ময়না ২০১৯ সালের ৩০ জুন টাকা উত্তোলন করতে গেলে ব্যাংক জানায়, ওই হিসাবে কোনো টাকা নেই। পরে তিনি নান্দাইল থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে আদালত বিভিন্ন সময় নোটিশ পাঠিয়েও কোনো সারা না পেয়ে ‘দি নেগেটিভ ইনস্টোমেন্ট অ্যাক্ট-এর ১৩৮ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে পরোয়ানা জারি করেন।
তাতেও তিনি হাজির না হওয়ায় আদালত পলাতক দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তার অনুপস্থিতিতেই ময়মনসিংহ যুগ্ম ও জেলা দায়রা জজ ২য় আদালতে ঘটনা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় লুৎফুন্নাহার লাকীকে গত ২৮ মার্চ ২০২৩ সালে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে রায় প্রদান করেন। এরপর থেকেই তিনি পলাতক থাকেন।
অপরদিকে, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জের বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে লাকী টাকা হাতিয়ে নেন। পরে চাকরি না দিতে পেরে টাকা ফেরতের চেক দিলে চেকের হিসাবে কোনো টাকা পায়নি ভুক্তভোগীরা। এ অবস্থায় ডিজঅনার মামলা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন।
এদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অর্থের বিনিময়ে উত্তীর্ণ করিয়ে দেবার কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে লাকীসহ অপর এক আওয়ামী লীগ নেত্রীকে আটক করা হয়েছিল। ওই সময় ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়।
এ ছাড়া ২০১৮ সালের দিকে একটি মামলায় তদবির করতে যান ঈশ্বরগঞ্জ চৌকি আদালতের বিচারকের এজলাসে। ওই বিচারক তার এজলাস থেকে বের হয়ে যেতে বলায় বিচারকের ওপর চড়াও হয়। তখন মামলা হলেও লাকী ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত ১৫ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন অপকর্ম-কুকর্ম করলে প্রভাবের কারণে তাকে কিছুই করা যায়নি। এমনকি কেউ যদি তার এসব কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদ করতেন, তাহলে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হতো।
এ বিষয়ে নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মেদ জানান, আগে কেন লুৎফুন্নাহার লাকীকে ধরা হয়নি তা জানা নেই। তবে বর্তমানে তাকে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন