জিবি নিউজ প্রতিনিধি//
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে উপজেলা প্রশাসন নির্মিত কৃষকের ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রবিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষকের ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি এই প্রথম শুনলাম। আমি অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। আর যারা এটা করছে তারা বেকুব ছাড়া আর কিছু নয়।
এর আগে শুক্রবার রাতে একদল লোক মিছিল নিয়ে এসে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন্দ পয়েন্টে 'কৃষান চত্বর' নামের ওই ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলে।
শনিবার ভাঙচুর করা ভাস্কর্যের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।
বিশ্বম্ভরপুরের পর্যটন বিকাশ, সৌন্দর্য বর্ধন ও ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু ভাস্কর্য ও স্থাপনা নির্মান করা হয়। এই উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদি উর রহিম জাদিদের উদ্যোগে এগুলো নির্মান করা হয়েছিলো। এরমধ্যে হাওরপ্রধান এ উপজেলার কৃষি ও কৃষকের ঐতিহ্য তুলে ধরতে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের পাশে উপজেলার চালবন্দ পয়েন্টে কৃষকেএ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিলো। যা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া উপজেলার কারেন্টের বাজার মোড়কে 'বোয়াল চত্বর' নামকরণ করে নির্মান করা হয়েছিলো বোয়াল মাছের আদলে একটি ভাস্কর্য। ইউএনও'র এসব উদ্যোগ সেসময় প্রশংসা কুঁড়িয়েছিলো।
তবে শুক্রবার কৃষকের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলে একদল লোক।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের সামনে ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এরপর শুক্রবার রাতে একদল লোক কৃষাণ চত্বরের থাকা কৃষকের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভাস্কর্য ভাঙার একটি ভিডিওতে দেখা দেখা যায়, কয়েকজন লোক হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙছেন। এ সময় পেছন থেকে কয়েকজন ‘শেখ হাসিনার আস্তানা, বাংলাদেশে হবে না’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, বাংলাদেশে হবে না’, ‘শাহজালালের তলোয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সুনামগঞ্জ থেকে এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বাড়িতে যাওয়া আসা করেন তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা বেসিরকারি চাকরিজীবী সুলেমান আহমদ। তিনি বলেন, কৃষক ও বোয়ালের ভাস্কর্য, হাওর বিলাসসহ কিছু স্থাপনা বিশ্বম্ভরপুরের সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিলো। এগুলোর সাথে তো রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই। তাই কৃষকের ভাস্কর্যটা ভেঙে ফেলা ঠিক কাজ হয়নি।
ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার কথা শুনেছেন জানিয়ে বিশ্বম্ভরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, একদল বিক্ষোব্দ লোক এটি ভেঙে ফেলেছে। কিন্তু ভাঙচুরকারীদের পরিচয় জানতে পারিনি। তাই আইনী ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
এটি পুণনির্মাব করা হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাঙচুরের বিষয়টি উর্ধনত কতৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাবো। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
যার উদ্যোগে এই ভাস্কর্য নির্মান করা হয়েছিলো সেই মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বর্তমানে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হিসেবে কর্মরত আছেন। এ ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন