ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সৌদি আরব কি সত্যিই শক্ত অবস্থানে?

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে প্রবল চাপ সত্ত্বেও এবার ফিলিস্তিন ইস্যুতে বেশ শক্ত অবস্থান দেখাচ্ছে সৌদি আরব। সম্প্রতি ইসরায়েলি টিভি চ্যানেল ১৪’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু দাবি করেন, সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের তিন বছর ধরে ‘গোপন সম্পর্ক’ চলে আসছিল।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের পক্ষে মাত্র চারজন এবং সৌদি আরবের পক্ষেও সীমিতসংখ্যক ব্যক্তি এই সম্পর্কের বিষয়ে অবগত ছিলেন। তবে এই দাবি কতটা সত্য তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ অতীতে নেতানিয়াহু বহুবার বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করেছেন।

 

ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদির নীতি পরিবর্তন

সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক কেবল রাষ্ট্রীয় কূটনীতি নয়, বরং এটি ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থেও প্রভাবিত। ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে থাকা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর মাধ্যমে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চেয়েছিলেন।

২০১৭ সালে তিনি গোপনে ইসরায়েল সফর করেন এবং এরপর একাধিকবার ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে বলেছিলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে অথবা ‘চুপ থাকতে’ হবে।

 

গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পরও সৌদি সরকার কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। বরং গত ১৫ মাস ধরে দেশটিতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি, মক্কায় হজ পালন করতে গিয়ে গাজার জন্য দোয়া করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

কিন্তু নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্য সৌদির অবস্থানে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। তিনি বলেছেন, সৌদি আরব চাইলে তাদের নিজস্ব ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করতে পারে, তাদের তো অনেক জমি আছে।

 

এই বক্তব্যের পর আরব বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। মিশর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, কাতার ও কুয়েত নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যের নিন্দা জানায়।

কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানায় সৌদি সরকারও। এক বিবৃতিতে বলা হয়, সৌদি আরব পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকার ক্ষুণ্ন করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করবে।

আরও বলা হয়, ফিলিস্তিনি জনগণ অনুপ্রবেশকারী বা অভিবাসী নয়, যাদের ইসরায়েল ইচ্ছামতো উচ্ছেদ করতে পারবে। তাদের ভূমির ওপর ঐতিহাসিক, আইনি ও আবেগপূর্ণ অধিকার রয়েছে।

 

এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে সৌদি আরব তা মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে প্রত্যাখ্যান করে। পাশাপাশি, দেশটির সাবেক গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল আরব ও মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

মিশর ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি আরব লীগের জরুরি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।

সৌদি নীতির পরিবর্তন কি স্থায়ী হবে?

মোহাম্মদ বিন সালমান বর্তমানে সৌদি আরবে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কমিয়ে আরব ও মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্যগত নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার করতে চাইছেন।

 

এছাড়া, সৌদি জনগণের মধ্যেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে ব্যাপক সহানুভূতি দেখা গেছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আগ্রহী না হলেও এমবিএস স্বীকার করেছেন, তার দেশের ৭০ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী এই সংকটকে গুরুত্ব দেয়।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নেতানিয়াহু যদি আঞ্চলিক অস্থিরতা আরও বাড়ান, তবে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের সম্ভাবনা আরও কমে যাবে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র যদি মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধ বাধাতে চায়, তবে সৌদি আরব এতে জড়িত হতে চাইবে না। ট্রাম্পের উচিত এই বাস্তবতা বুঝতে পারা। কারণ ইতিহাস বলে, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত শুরু করা সহজ, কিন্তু তা থামানো অত্যন্ত কঠিন।

 

(মিডল ইস্ট আইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান সম্পাদক ডেভিড হার্স্টের মতামত অবলম্বনে)

 

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন