সৌদি আরবে রুশ-মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক কাল

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা মঙ্গলবার সৌদি আরবে বৈঠকে বসবেন। সেখানে দুই দেশের ভঙ্গুর সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পথ তৈরির আলোচনা হতে পারে।

কিয়েভ জানিয়েছে, তারা রিয়াদে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় আমন্ত্রণ পায়নি। অন্যদিকে মস্কোর প্রতি ওয়াশিংটনের হঠাৎ নীতি পরিবর্তনে হতভম্ব ইউরোপীয় নেতারা প্যারিসে জরুরি নিরাপত্তা সম্মেলন করেছেন।

 

সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক হবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বৈঠক। এজেন্ডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্ভাব্য এক শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ট্রাম্প তিন বছর ধরে চলমান এই সংঘাতের দ্রুত সমাধান চান, আর মস্কো তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ইউরোপে ওয়াশিংটনের সামরিক উপস্থিতি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের অভিযোগের বিরুদ্ধে ছাড় পাওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভ ‘এই আলোচনার বিষয়ে কিছুই জানে না’ এবং ‘আমাদের ছাড়া আমাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বা চুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়’।

 


 

মস্কো বৈঠকের আগে জানিয়েছে, ট্রাম্প ও পুতিন ‘অস্বাভাবিক সম্পর্ক’ কাটিয়ে উঠতে চান এবং ইউরোপীয়দের জন্য কোনো আলোচনার জায়গা দেখছে না। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও পুতিনের জ্যেষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ বৈঠকে অংশ নেবেন। অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন।

সম্ভাব্য ট্রাম্প-পুতিন সম্মেলন
এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের জানান, আলোচনা ‘প্রাথমিকভাবে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে’ এবং ‘ইউক্রেনসংক্রান্ত সম্ভাব্য সমঝোতা ও দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক আয়োজন’ নিয়ে হবে।

রুশ প্রতিনিধিরা মধ্যপ্রাচ্যসংক্রান্ত আলোচনা করতে প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

মস্কো দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত ব্যাপক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চায়, শুধু ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নয়। রাশিয়া কয়েক বছর ধরে ন্যাটোর মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে উপস্থিতি কমানোর চেষ্টা করে আসছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণের আগে পুতিন সামরিক জোটের সেনা, সরঞ্জাম ও ঘাঁটি কয়েকটি পূর্ব ইউরোপীয় দেশ থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছিলেন, যা কোল্ড ওয়ারের সময় মস্কোর প্রভাব বলয়ে ছিল।

তবে এই আলোচনাগুলো যুদ্ধ বন্ধের কোনো চুক্তিতে পরিণত হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

কিয়েভ ও মস্কো—উভয়ই নিজেদের ভূখণ্ড থেকে কোনো ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেছে এবং গত বছর পুতিন দাবি করেছিলেন, ইউক্রেনকে আরো বেশি এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।

 


 

জেলেনস্কির সফর
অন্যদিকে জেলেনস্কি মঙ্গলবার তুরস্ক সফরে যাবেন। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। এরপর বুধবার তিনি সৌদি আরবে যাবেন।

তবে জেলেনস্কির মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন বা রুশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা করেননি।

জেলেনস্কি গত সপ্তাহে বলেছিলেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, তবে তার আগে ইউক্রেন ও তার মিত্রদের মধ্যে যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে একটি অভিন্ন অবস্থান গড়ে তুলতে হবে।


 

‘তাদের আমন্ত্রণ জানাব কেন?’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ সোমবার বলেছেন, ইউক্রেন আলোচনা নিয়ে অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি মস্কোয় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি জানি না তারা আলোচনার টেবিলে কী করবে...যদি তারা সেখানে বসতে চায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য, তাহলে তাদের আমন্ত্রণ জানাব কেন?’ 

জার্মানি সোমবার আলোচনা নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বার্লিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ থাকা মোটেই খারাপ নয়, যদি এটি একটি স্থায়ী ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় খোঁজার জন্য হয়।’ 

এ ছাড়া ফ্রান্সের প্রেসিডেন্সি জানিয়েছে, ইউরোপীয় নেতারা প্যারিসে জরুরি বৈঠকে বসবেন ‘ইউক্রেনের পরিস্থিতি’ ও ‘ইউরোপের নিরাপত্তা’ নিয়ে আলোচনা করতে।

ট্রাম্প ইউরোপকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় আরো বড় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে কিয়েভকে সহায়তা করার সঠিক কৌশল নিয়ে বিভক্ত মতামত রয়েছে, যার মধ্যে সেনা মোতায়েনের ধারণাটিও রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স শান্তি রক্ষা বাহিনী পাঠানোর বিষয়ে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে, তবে জার্মানি সোমবার জানিয়েছে, এখনো এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সময় হয়নি। আর পোল্যান্ড বলেছে, তাদের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই।

যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অগ্রগতি
রাশিয়া সাম্প্রতিক সামরিক সাফল্য নিয়ে আলোচনা টেবিলে বসতে যাচ্ছে। তাদের আরো উন্নত সেনারা এক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করছে।

এ ছাড়া কিয়েভ মার্কিন সামরিক সহায়তা হারানোর আশঙ্কার মুখোমুখি, যা নিয়ে ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা করে আসছেন।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সোমবার জানিয়েছে, তারা উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের একটি ছোট এলাকা দখল করেছে এবং তাদের পশ্চিমের কুরস্ক অঞ্চলে একটি গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে, যেখানে ইউক্রেন গত আগস্টে একটি আকস্মিক পাল্টা হামলা চালিয়েছিল।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন