‘২০২৪'র গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্ররাই ছিলেন প্রথম কাতারে। এটি যেমন সত্য ঠিক তেমনই সত্য যে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশ গ্রহন করেছে। আন্দোলনের পেছনে তো জনগণের বিরাট আকাঙ্খা ও স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নটা হলো, দেশবাসী ফ্যাসীবাদী শাসনের কবলে থাকা এ রকম দেশ চায় না, ভয়াবহ দুর্নীতি, নজিরবিহীন নিপীড়ন ও কণ্ঠরোধ আর দেখতে চায় না। বার বার জনগনের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করতে চায় না। নতুন কোন ফ্যাসীবাদী শক্তি প্রতিষ্ঠিত হোক তাও চায় না জনগন’ বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, ‘স্বৈরশাসকের কবলে পড়ে ১৬ বছরে দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন, বিচার বিভাগ সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের সবখানে ঘুণে ধরে গেছে। এই বাস্তবতায় রাতারাতি বিশাল কোন পরিবর্তন হবে, তা কতটুকু আশা করা যায় ? বাংলাদেশ এত রক্তপাত দেখেছে, অনাচার দেখেছে, এরপর রাজনৈতিক দলগুলো যদি সহিষ্ণুতার পরিচয় না দেয়, আত্মসমালোচনা না করে, তাহলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’
তারা বলেন, ‘নির্বাচনের আগে কিছু বিষয়ে মৌলিক সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। পুলিশ, জনপ্রশাসন, নির্বাচন কমিশন এবং সংবিধান তার মধ্যে অন্যতম। সাবেক সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক ব্যবসায়ী দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে। তাদের অনেকেরই কেশাগ্র স্পর্শ করা যায়নি। বরং শোনা যাচ্ছে যে, তাদের পুনর্বাসিত করা হচ্ছে, চ্যানেলের হাতবদল হচ্ছে, ব্যাংকের হাতবদল হচ্ছে। সংস্কার না হলে তো দেশ উল্টো পথেই যাত্রা করবে। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে বিভক্তি জাতির জন্য শুভ নয়। এর জন্য সমগ্র জাতিকে কঠিন মাশুল দিতে হতে পারে। এগুলো কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না।’
নেতৃদ্বয় আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ‘মেরামত’ করার, সংস্কার করার উদ্দেশ্যে যেসব স্লোগান ও বক্তব্য ব্যক্ত করা হচ্ছে, তা লক্ষ করে সকলকে মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের বেলায় শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি সীমাবদ্ধ না রেখে মানুষের মনের দিকটাতেও যথোচিত গুরুত্ব দিতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে বর্তমান সরকার বিদায় নিলে আশঙ্কা থাকবে রাজনীতির পুরোনো সংকট ফিরে আসার।’
তারা বলেন, ‘সরকারকে দীর্ঘ সময় দেওয়ার ব্যাপারে গণ-অভ্যুত্থানকারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মতপার্থক্য। সরকার সংস্কার করে গেলেও পরবর্তীকালে সেগুলো টিকে না থাকার শঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের তরফ থেকে আবার বলা হচ্ছে, শুধু একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ছাত্র-জনতা এভাবে রক্ত দেয়নি। এটাও নির্মম সত্য, মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছে বলেই এর ভেতর দিয়ে প্রত্যাশিত সবকিছু অর্জিত হয়ে যাবে না। পরিবেশ-পরিস্থিতি একটি বড় বিষয়। অন্তর্র্বতী সরকার তো বলিষ্ঠভাবে দেশ পরিচালনা করতেও পারছে না। গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সংহতির বদলে দূরত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্দোলনের ফসল বেহাত হবার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। যা সমগ্র জাতির মধ্যে উৎকন্ঠা সৃষ্টি করছে।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন