---- এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া ----
০১. ২৫ ফেব্রুয়ারী ২৫ বিডিআর বিদ্রোহ ও পিলখানা ট্রাজেডির ১৬ বার্ষিকী। ২০০৯ সালের এই দিন ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নাটক মঞ্চস্থ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করার চক্রান্ত শুরু হয়েছিল। ২৫ ফেব্রæয়ারি পিলখানা ট্র্যাজেডি ইতিহাসের ঘৃণীত অধ্যায়। সেদিন বাংলা হারিয়েছিল জাতির সূর্য সন্তানদের। বিডিআর বিদ্রোহের নেপথ্য রহস্য জাতিকে বিগ ফ্রাসীবাদী শাসনক জানতে দেয় নাই। বর্তমান সরকারের উপর প্রত্যাশা করতেই পারি তারা বিডিআর বিদ্রোহের প্রকৃত রহস্য জাতিকে জানাবেন। এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে ঘটিত কমিশন নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে কাজ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতিকে এর রহস্য জহানাবেন। সেই সঙ্গে সেনা হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়কদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন।
ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহাসিক বিডিআরের চেতনাকে ধ্বংস করেছে। ১৯৭১‘র মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩ মার্চ যে বাহিনী প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিল সেই বাহিনীকে করেছে কলংকিত। শুধু বাংলাদেশ নয়, সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে এতজন সেনাকর্মকর্তাকে নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানায়।
বাংলাদেশের ওপর আধিপত্যবাদী শক্তির দখলদারিত্ব চীরস্থায়ী করতে ফ্যাসীবাদী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের অংশই ছিল পিলখানা হত্যাকান্ড। এটি কোনো বিদ্রোহ ছিল না, ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে দেশকে চোরাবালির সন্ধিক্ষণে দাঁড় করানো হয়েছিল।
০২. জাতি হিসাবে আমাদের দুর্ভাগ্য, দীর্ঘ পাঁচ দশকেও আমরা আমাদের ঘর সামলাতে সক্ষম হইনি। পারিনি শক্ত মাটিতে পা রেখে চলতে। কে আমাদের বন্ধু এবং কে আমাদের শত্রæ তাও সঠিকভাবে নির্নয় করতে পারিনি। ইতিহাস বলে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে যুদ্ধের নামে যে প্রহসন সংঘটিত হয়, তার অদূরে হাজারো জনতা আগ্রহ ভরে দেখেছিল কি হচ্ছে। দেখতে দেখতে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য্য অস্তমিত হয়। দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছর লেগেছে সেই সূর্য্য ছিনিয়ে আনতে। আবারো পাকিস্তানী শাসকগেষ্টির বিরুদ্ধে আরেকটি রক্তক্ষয়ি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় লাল সবুজের পতাকা আর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। দুঃখজনক হলেও সত্য যে যে রাষ্ট্রের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তরে, সেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ শুকুনীর কালো থাবায় ক্ষত-বিক্ষত।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিআর বিদ্রোহের যে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল তা যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে উপর চরম আঘাত তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। ঐদিন বিডিআর সদর দফতরে সেনাকর্মকর্তাদের হত্যার মাধ্যমে যে বিপুল ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা পূরনে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করে ২০-২৫ বছর লেগে যাবে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা সে কাজটি সূচরুভাবে সম্পাদন করতে পেরেছিল তাদের আভ্যন্তরিন দালালদের সহযোগতায় আর আমাদের জাতীয় ঐক্য না থাকার সূযোগে। এই হত্যাকান্ড তো বাংলাদেশের কারো লাভ হয়নি, তাহলে লাভ হয়েছে কাদের? তাদেরই যারা বাংলাদেশকে দেখতে চায় একটি অকার্যকর, দুর্বল, ভঙ্গুর ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে চায় তাদেরই। সেনাকর্মকর্তাদের ওপর পরিচালিত এই গণহত্যায় নিঃসন্দেহে দুর্বল হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষার জনগনের আস্থার স্থল বিডিআর। বিডিআরের বীরত্ব ও সাহসীকতা সর্বজনবিদিত।
০৩. ২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিআর বিদ্রোহের আগের দিন হঠাৎ করেই বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ নিরাপত্তা জোরদার করে তোলে। আমদানি-রফতানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এঘটনা থেকে প্রশ্ন উদ্বেগ হওয়াটা স্বাভাবিক তাহলে কি ভারত জানত পরদিন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন ঘটনা ঘটছে? স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের অব্যাহত আগ্রাসনের কারনে বাংলাদেশ কখনো মাথা সোজা করে দাড়াতে পারেনি। গুটি কয়েক ভারতীয় পাচাঁটা দালাল বাদে ভারতের অব্যাহত সীমান্ত-সাংস্কৃতিক-পানি-বাণ্যিজ্য আগ্রাসনের কারনে দেশবাসী মনেই করে ভারত কখনো বাংলাদেশের সৎ প্রতিবেশীর পরিচয় দিতে পারেনি।
স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করার যে চক্রান্ত ধাপে ধাপে সে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রæয়ারী পিলখানায় নির্মম হত্যাকান্ড সেই ষড়যন্ত্রেই অংশ। এই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ধারাবাহিকতায়ই বিডিআর বিদ্রোহের নাটক মঞ্চস্থ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিডিআর দু‘টোকেই দুর্বল করে দিতে সক্ষম হয়েছে। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের এতগুলো কর্মকর্তাকে একসাথে হত্যা কোন কাতালীয় ঘটনা কিংবা দুঘর্টনা হিসাবে চিহ্নিত করার কোন সুযোগ নেই। ৬৩জন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মেধা ও সক্ষমতাকে বাঁধাগ্রস্থ করা হয়েছে। অপর দিকে যে বিডিআর স্বাধীন বাংলাদেশে দীর্ঘ ৩৭বছর ধরে অতন্ত্র প্রহরীরুপে সীমান্তে বিদেশী আগ্রাসন সফল ভাবে প্রতিহত করেছে, সেই প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব মুছে গেছে। ঐতিহ্যবাহী বিডিআর এখন বিজেপি নাম ধারন করেছে।
আর সীমান্তে প্রতিনিয়ত জোরদার হয়েছে ভারতীয় বিএসএফের আগ্রাসন। এখনো সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করছে ভারতীয় বিএসএফ, হত্যার পর ফেলানী লাল কাটা তাঁরে ঝুলিয়ে রেখে উল্লাশ করেছে বিএসএফ। পিলখানার ঘটনা যে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেবার জন্যই যে ঘঁটানো হয়েছিল তা আজ দিবালোকের মতই স্পষ্ট। এটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ঠান্ডা মাথায় ষড়যন্ত্র। এক ধরনের প্রতিশোধও বটে।
০৪. বিডিআর ট্রাজেডির ১৬বছর হলেও এখন পর্যন্ত এর প্রকৃত রহস্য জাতি জানতে পারেনি। দুটি তদন্ত কমিটি গঠন হলেও একটি তদন্ত কমিটির আংশিক প্রকাশ হলেও পুরোটা আজও জাতি জানে না। সেনাবাহিনীর আভ্যন্তরিন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জাতি জানে না। দুঃখ ১৬বছরে জাতীয়ভাবে ২৫ ফেব্রæয়ারীকে শোক দিবস হিসাবে পালন করতে পারিনি আমরা। রাজনৈতিক দলগুলো এখনও এই বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। প্রকারন্তরে ২৫ ফেব্রুয়ারী নিয়ে অনেক রাজনৈতিক দলগুলোর ভুমিকা দেখলে মনে হয় ভারত অখুশি হতে পারে বলেই তারা বিষয়টি এড়িয়ে চলেন।
২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানা ট্রাজেডির গতানুগতিক বিচারে কি প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে। জাতির স্বার্থেই এই ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা উচিত। চিহ্নিত করে যদি অপরাধীদের বিচার করা সম্ভব না হয় তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আজকের নেতৃত্বে ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। জাতীর এই কলংক জনক অধ্যায়কে মুছে ফেলতে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এতগুলো চৌকশ কর্মকর্তাকে একদিনে হত্যা করা জাতির স্বাধীন অস্তিত্বের জন্য কত বড় আঘাত তা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। এই ঘটনা নিরব পলাশী হিসাবে যেন চিহ্নিত না হয়। জাতীয় ইতিহাসের এই পলাশীতে কারা নব্য মীরজাফর, কারা নব্য জগৎশেঠ-রাজবল-ক্লাইভ তাদের চিহ্নিত করতে হবে। গত ১৬ বছরেও সেটা চিহ্নিত করতে না পারাও কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ ? এই রাষ্ট্রঘাতি চক্রান্তের ভয়বহতা যদি আমরা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে না পারি তাহলে জাতি আমাদের কিছুতেই ক্ষমা করবে না। ২৫ ফেব্রুয়ারী শুধুমাত্র একটি হত্যাকান্ড নয় এটি হলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর চরম আঘাত।
০৫. বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক পাতাই রক্তে রঞ্জিত। অনেক রক্ত আমরা দেখেছি, দেখেছি উম্মুক্ত প্রান্তরে, শহরের রাজপথে কিংবা সেনাছাউনীতে। আর কত উচ্ছৃঙ্খলতা, কত হানাহানি, কত রক্তক্ষরন বাকী ? এর শেষ হবে খোথায় ? পিলখানার ট্রাজিডির কলংক কবে মুছবে ? আর কত নতজানু হতে হবে জাতিকে? ক্ষমতায় যেতে কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকতে শাসগোষ্টির ভারতীয় প্রভুদের পদলেহনের দৃশ্য আর কত কাল দেখবে জাতি ? আমাদের শাসকগোষ্টি মাথা নত করতে করতে এখন মাটিতে মাথা ছুয়ে ফেলেছে বলেই হয় ২৫ ফেব্রæয়ারীকে দায়সারা ভাবে স্মরণ করতে চাইছি। কে এই দিনটি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালন করতে পারছি না ?
আমরা সেই সব সন্তানদের প্রতি লজ্জিত এবং দুঃখিত, যারা পিলখানার নারকীয় হত্যাকান্ডে তাদের পিতামাতা হারিয়েছেন, যারা স্বামী হারিয়েছেন। স্বজনহারা এসব পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না দেবার ভাষা আমাদের জানা নাই। যেদিন এই হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার হবে, সেদিন হয়তো স্বজনহারারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত সরকারের তদন্ত কমিশিন জনগনের সেই আশা পূরন করতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
০৬. পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের সদিচ্ছা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা ও সদিচ্ছা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসররা পুরো প্রক্রিয়াকে ধামাচাপা দিতে কিংবা ব্যাহত করতে সদা সক্রিয় রয়েছে। তা নাহলে এমন একটি জাতীয় ট্রাজেডির সাথে জড়িত এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কিভাবে দেশ ত্যাগ করার সুযোগ পেল! অনেক দেরিতে হলেও আ ল ম ফজলুর রহমানের মত সাহসী দেশপ্রেমিক সেনানায়ককে প্রধান করে নতুন তদন্ত কমিশন গঠনের দুইদিনের মধ্যেই সাবেক বিজিবি মহাপরিচালককে বিদেশে যাওয়া বারিত করার মধ্য দিয়ে পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনার তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে।
পিলখানায় একটি পরিকল্পিত গণহত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সেখানে ডাল-ভাত কর্মসূচি নিয়ে অসন্তোষ ও বিদ্রোহের প্রচারণা চালিয়ে প্রকৃত অপরাধী ও মূল কুশীলবদের তদন্ত ও বিচারের বাইরে রাখা হয়েছিল। ভারতের পুতুল সরকারের পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সরকারের এ বিষয়ে দায়সারা, গা ছাড়া ভাব মেনে নেয়া যায়না। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও পাচারের হোতাদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। শেখ হাসিনাসহ বিডিআর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রভাবশালী কুশীলবদের যারা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে, তাদের বিষয়েও তদন্ত হওয়া দরকার বলে জনগন মনে করে। অসম সাহসী সেনানায়ক আ ল ম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিশন পিলখানা হত্যাকান্ডের মূল হোতাদের বিচারসহ দেশি-বিদেশি চক্রান্তের মুখোশ উন্মোচন করতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশাবাদি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনাকে ব্যর্থ করে দেয়ার ব্যাপক ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হলে প্রথমেই পিলখানা হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় নবগঠিত তদন্ত কমিশন পিলখানা হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচারে নতুন গতি আনতে সক্ষম হবে। দেশবাসী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দেশের নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
০৭. আমরা যদি ক্ষমতায় টিকে থাকতে কিংবা ক্ষমতায় যেতে আধিপত্যবাদী ও আগ্রাসী শক্তির কাছে নিজেদের বিবেক-বিবেচনা বন্ধক দেই, যদি আমরা পরাভূত হই সেই অপশক্তি ও অপশক্তির দালালদের কাছে, আপস করে ফেলী, তাহলে আমি নিশ্চিত ২৫ ফেব্রুয়ারীর চাইতে ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। অপশক্তির লালনকারীরা ধারকে ও বাহকরা আরও উৎসাহিত হয়ে তাদের স্বার্থ চরিতার্থে আরও ভয়ংকর ঘটনা ঘঁটাবে এই কথা দ্বীধাহীনভাবে বলা যায়। আর যারা আপোষ করবেন তাদের স্থান হবে ইতিহাসের আস্তাকুরে। আপোষ করে হয়ত ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে কিংবা কিছু সময়ের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে কিন্তু ইতিহাসে মীরজাফর হিসাবেই চিহ্নিত হয়ে থাকতে হবে।
আজ আমাদের ঐ আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আজ প্রয়োজন, জরুরী প্রয়োজন, একান্ত প্রয়োজন আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য। দলীয় সংকীর্ণতার উর্দ্বে উঠে, ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার মোহমুক্ত হয়ে সবাই সবাইকে নিয়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত হওয়া, নিবেদিত হওয়া। মনে রাখতে হবে দেশ থাকলে সবাই থাকবেন। যে দেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় তার ক্ষয় নাই, পরাজয় নাই। আজ প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪’র গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারন করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ২৫ ফেব্রæয়ারী পিলখানা ট্রাজেডি থেকে শিক্ষা গ্রহন করে জাতীয় এজন্ডা নির্ধারন করা। আসুন সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ২৫ ফেব্রয়ারী পিলখানা ট্রাজেডি স্মরণে জাতীয় শোক দিবস পালন করি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন