কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

আজ শুক্রবার, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ৭৩ বছর আগে এই দিনে বাংলা ভাষার জন্য নিজেদের তাজা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। সেই থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার মুক্তি ও বাংলার গৌরবের দিন। আজ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করতে গিয়ে আত্মদানের গৌরবময় এই দিনটিকে আজ স্মরণ করবে বাঙালি জাতিসহ সারা বিশ্ব।

 

এদিকে ইউএনবি জানায়, দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক  ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাণীতে ড. ইউনূস বলেছেন, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আমি বাংলাসহ বিশ্বের সব ভাষাভাষীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ইউনেসকো যৌথভাবে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।

টেকসই উন্নয়নের জন্য ভাষাকে গুরুত্ব দিন, কারণ এ বছরের ইউনেসকোর বিষয়বস্তু যৌক্তিক।’

 

তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও এর ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে, যা প্রবৃদ্ধি সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতেও কাজ করা হচ্ছে। ব্রেইল বইসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

 

সব পথ আজ মিলে যাবে ভাষাশহীদদের স্মৃতিস্মারক শহীদ মিনারে। সবার হাতে থাকবে শ্রদ্ধার অর্ঘ্য। কণ্ঠে বাজবে অমর সেই গান—‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি...।’ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানাবে রক্তঋণে বাঁধা জাতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল অনুষ্ঠানের সঙ্গে সারা দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হবে।

 

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে হয় দেশ ভাগ। জন্ম হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের। জন্মের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার এই আগ্রাসী তৎপরতা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় বাংলার মানুষ।

শুরু হয় প্রতিবাদ-আন্দোলন। এর চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বাংলাকে এ দেশের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। সেই মিছিলে নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিকসহ নাম না জানা অনেকের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। তাঁদের রক্তের পথ বেয়েই বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়।

বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিনটির স্বীকৃতি এখন বিশ্বজুড়ে। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেওয়ার পর ইউনেসকো বাংলাদেশের সঙ্গে ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করে আসছে। এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ২৫ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্যারিসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজত জয়ন্তীর বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে থাকছে বাংলাদেশের শিল্পীদের পরিবেশনা। এই অনুষ্ঠানে ইসলাম উদ্দিন পালাকার, ‘কথা ক’খ্যাত র‌্যাপার সেজান, শূন্য ব্যান্ডের এমিল, নারী ব্যান্ড দল এফ মাইনর, পারশা মাহজাবীন, টুনটুন বাউল, জালাল, মিথুন চক্র, জাহিদ নীরব প্রমুখের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নিজ নিজ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দল-মত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। এরই মধ্যে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে চালু করা এবারের একুশে পদক তুলে দেওয়া হয়েছে দেশের ১৮ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দলকে। গতকাল পদকপ্রাপ্তদের হাতে এ পদক তুলে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ভাষাশহীদ দিবসে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের রয়েছে বিশেষ আয়োজন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে স্মৃতিকথা, একক ও সম্মেলক গান এবং দলীয় আবৃত্তি। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে রয়েছে অমর একুশে নাট্যোৎসব। শিল্পকলা একাডেমি ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যৌথ আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ১০ দিনের ‘অমর একুশে নাট্যোৎসব’। উৎসব চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে নাটকের প্রদর্শনী।

ভাষাশহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা বীরদের প্রতি জাতির পক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁরা।

গত রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাত ১২টা ১০ মিনিটে শহীদ মিনারে এসে পৌঁছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর দুই মিনিট পর শহীদ মিনারের বেদিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর কিছু সময় তিনি নীরবে দাঁড়িয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন