মুমিন হওয়ার সঠিক পথ: জীবনকে পরিপূর্ণ করার উপায়!

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।


ইসলামে একজন মুমিনের চরিত্র এবং আধ্যাত্মিক জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন খাটি মুমিন সেই ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর প্রতি অটুট বিশ্বাস রেখে তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করেন এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করেন। একজন খাটি মুমিন হওয়ার জন্য কিছু বিশেষ বিষয় রয়েছে, যেগুলোর উপর আমল করলে আল্লাহর কাছে আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় হতে পারে এবং আমাদের জীবন পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আজ আমি হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী এই বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা তুলে ধরবো, কোন কোন বিষয়গুলোতে আমল করলে একজন ব্যক্তি খাটি মুমিন হতে পারে।

প্রথমত, একজন খাটি মুমিনের প্রধান গুণ হলো আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস এবং তাকওয়া। অর্থাৎ, আল্লাহর উপস্থিতি ও শক্তির প্রতি বিশ্বাস রেখে জীবনে সব কিছু করতে হবে। তাকওয়া, যা আল্লাহকে ভয় করা এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করা, একজন মুমিনের জন্য অপরিহার্য। একজন খাটি মুমিন প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে এবং কখনো আল্লাহর আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করার চেষ্টা করে না। এটি জীবনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং মুমিনকে আধ্যাত্মিক শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

দ্বিতীয়ত, কোরআন এবং হাদিস একজন মুমিনের পথপ্রদর্শক। একজন খাটি মুমিন কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুসরণ করে নিজের জীবন পরিচালনা করে। কোরআন তিলাওয়াত, তার অর্থ বুঝে জীবনযাপন এবং হাদিস অনুযায়ী প্রতিটি কাজ করা একজন মুমিনের মৌলিক কর্তব্য। এক্ষেত্রে কোরআন ও হাদিসের প্রেক্ষিতে সুন্নাহ অনুসরণ করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা গুরুত্বপূর্ণ।

তৃতীয়ত, একটি খাটি মুমিন কখনও আল্লাহর ইবাদত থেকে বিরত থাকে না। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তাসবিহ, দোয়া, যিকির তিলাওয়াত, দুরুদ শরীফে, তাওবা ইস্তেখফার—এইসব একটি খাটি মুমিনের জীবনের অঙ্গ। তার অন্তরে আল্লাহর প্রতি অবিচল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকে এবং আল্লাহর কাছে সাধ্যমতো দোয়া ও প্রার্থনা করে। দোয়া হলো মুমিনের অস্ত্র, যা তাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাহায্য করে। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন, ভুল, অনুতপ্ত মন এবং সহায়তা চাওয়া হয়।

চতুর্থত, একটি খাটি মুমিনের জীবন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হতে হয়। প্রতিটি কাজ সততা এবং ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লোক সেই, যে বেশি সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ।" একজন খাটি মুমিন কোনো প্রকার অন্যায় বা অসত্য কাজে অংশ নেয় না। তার প্রতিটি আচরণ এবং কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা বা অন্যের অধিকার নষ্ট করা তার জীবনে কখনও স্থান পায় না।

পঞ্চমত, আল্লাহ মুমিনদের জন্য জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে পরীক্ষা দেন। এক্ষেত্রে, একজন খাটি মুমিন কঠিন সময়ে ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখে। বিপদ এবং দুঃখ-কষ্টের সময় তিনি আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন এবং পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ইসলাম শেখায়, ধৈর্য এবং প্রার্থনা করা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। বস্তুত, প্রতিটি চ্যালেঞ্জ, বিপদ বা সমস্যা আল্লাহর কাছ থেকে আসা একটি পরীক্ষা, যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ও সমাধান।

ষষ্ঠত, একজন খাটি মুমিন মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলী যেমন, দয়া, সহানুভূতি, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা এবং দানশীলতা থাকতে হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, "সর্বশ্রেষ্ঠ মুমিন সে, যে নিজের ভাইয়ের জন্য যা ভালোবাসে, অন্যের জন্যও তা ভালোবাসে।" একজন খাটি মুমিন নিজের স্বার্থকে পিছনে রেখে, অসহায়দের সাহায্য করে, দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ায় এবং সমাজে শান্তি বজায় রাখে। তার দান, পরোপকারিতা ও সহানুভূতি সমাজে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে।

সপ্তমত, একজন খাটি মুমিন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে এবং তাঁর অসীম দয়া ও মেহেরবানির জন্য আল্লাহর কাছে ধন্যবাদ জানায়। যখন কেউ অন্যায়ের মাধ্যমে তাকে আঘাত করে, তখন সে ক্ষমাশীল হয় এবং প্রতিশোধ গ্রহণে উৎসাহী হয় না। ইসলাম ক্ষমা করার শিক্ষা দেয়, এবং একজন খাটি মুমিন জীবনে ক্ষমা ও মাফ করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। এটি তার মনকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

অষ্টমত, একজন খাটি মুমিন শৃঙ্খলা ও সতর্কতার সঙ্গে জীবনযাপন করেন। তিনি তাঁর রুচি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ভাষা, এবং আচার-আচরণে ইসলামিক শিষ্টাচার অনুসরণ করেন। মুমিন মনের পরিস্কারতা, আত্মবিশ্বাস, এবং পরিশুদ্ধতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকে। তার জীবনযাত্রা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের বিধান অনুসারে গঠিত হয়।

উপসংহারে, একটি খাটি মুমিন হওয়া সহজ নয়, কিন্তু আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করলে আমরা নিজের ঈমানকে শক্তিশালী করতে পারি। যে বিষয়গুলোতে আমল করলে একজন ব্যক্তি তার জীবনে সত্যিকার মুমিন হয়ে উঠতে পারে, তা হলো: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, কোরআন ও হাদিসের অনুসরণ, সৎ জীবনযাপন, ধৈর্য ধারণ, দানশীলতা, এবং মানবিক গুণাবলী ধারণ করা। আমাদের উচিত প্রতিদিন এই বিষয়গুলো অনুশীলন করে আমাদের চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করা, যাতে আমরা একজন খাটি মুমিন হতে পারি এবং আল্লাহর কাছ থেকে পরিপূর্ণ প্রশান্তি অর্জন করতে পারি। আল্লাহ পাক যেন উপরোক্ত আলোচনা গুলোর প্রতি গুরুত্ব সহকারে আমল করার তাওফিক দান করেন, আমীন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন