অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অভিবাসনকে কাজে লাগানোর এক চমৎকার উদাহরণ হয়ে উঠেছে স্পেন। দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৮ দশমিক ১ শতাংশেরই জন্ম হয়েছিল অন্য কোনো দেশে।
২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার পর বেশ কয়েক বছর হতাশায় নিমজ্জিত ছিল স্পেনের অর্থনীতি। কিন্তু বর্তমানে দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় সামনের সারিতে রয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্পেনের এই উন্নতির পেছনে রয়েছে দেশটির উদার অভিবাসন নীতি।
ব্রিটেনের সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য ইকোনোমিস্ট লিখেছে, স্পেনের বাৎসরিক জিডিপি বৃদ্ধির পেছনে দেশটির শক্তিশালী শ্রমবাজার এবং উচ্চমানের অভিবাসন ভূমিকা রাখছে। এর ফলে অর্থনৈতিক উৎপাদন বেড়েছে।
গত অক্টোবরে পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। তিনি বলেন, অভিবাসন শুধু মানবতাবাদের প্রশ্ন নয়… এটি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের জন্যও দরকারি। এর ভালো ব্যবস্থাপনাই প্রধান ব্যাপার।
অভিবাসন এবং অভিবাসীদের সমাজের মূলস্রোতে একীভূত হতে উৎসাহিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে স্পেন। নিয়মিত কর প্রদান করা অভিবাসী কর্মী বাড়াতে এবং বুড়িয়ে যাওয়া জনশক্তির নেতিবাচক প্রভাব কমাতে অনেক অনিবন্ধিত অভিবাসীকে বৈধ করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। ২০২৭ সাল নাগাদ তিন লাখের মতো অনিয়মিত অভিবাসীকে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দিতে চায় স্পেন। দেশটিতে বর্তমানে অনিবন্ধিত অভিবাসীর সংখ্যা ছয় লাখের মতো।
১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল অবধি সময়েও ১২ লাখের মতো অনিয়মিত অভিবাসীকে বৈধ করে নিয়েছিল স্পেন। দেশটির বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনিয়মিত অভিবাসীরা অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কাজ করে অর্থ উপার্জন করলেও সরকারের বিশেষ লাভ হয় না। কারণ তখন তারা আয়কর দেন না বা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অবদান রাখেন না। ফলে তাদের বৈধ করে নেওয়াই সুবিধাজনক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
গত বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, স্পেনের মোট জনসংখ্যার ১৮ দশমিক ১ শতাংশের জন্ম স্পেনের বাইরে হয়েছিল। আর তাদের মধ্যে ৪২ শতাংশের বয়স ২৫ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে।
অভিবাসীদের নিয়ে স্পেনের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণাই বেশি। স্ট্যাটিসটিকার সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, দেশটির ৭৫ শতাংশ তরুণ মনে করেন, অভিবাসীদের বিভিন্ন প্রথার প্রতি সম্মান জানানো উচিত, যতক্ষণ না তা দেশটির সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হচ্ছে। অবশ্য কিছু মানুষ ভাবেন, অভিবাসীদের কারণে অপরাধও বাড়ছে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন