সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা পাঠ্য বইয়ের মধ্যে সীমিত। অথচ এর বাইরে রয়েছে রূপসী বাংলার প্রকৃতির নজরকাড়া অপরূপ সৌন্দর্য্য। রয়েছে নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়-টিলা, বন-বনানী। রয়েছে বিচিত্র মানুষ এবং তাদের বিচিত্র জীবন-জীবিকা। শিক্ষা সফর নানাভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞানের জগতকে প্রসারিত এবং সমৃদ্ধ করে তোলে।পায় পূর্ণতা।পঠিত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত নানা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তবের সাথে মিলিয়ে যাচাই করতে পারে শিক্ষার্থীরা। ফলে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অর্জিত শিক্ষার সাথে বাস্তবের মেলবন্ধন রচিত হয়। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান শ্রেণিকক্ষে অর্জিত জ্ঞানের চেয়ে ফলপ্রসূ হয় অধিকতর। শিক্ষার্থীদের মাঝে যৌথভাবে কাজ করার মনোভাব সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে সহযোগিতার মনোভাব। গাঢ় হয়ে ওঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক। মানুষ ও প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে শিক্ষার্থীদের মন হয় উদার, সহানুভূতিশীল এবং স্মৃতিময় হয়ে থাকে ওই মুহূর্তগুলো। ঠিক উল্লেখিত বিষয়গুলো মাথায় রেখে প্রতিবারের ন্যায় এবছরও চমৎকার শিক্ষাসফরের আয়োজন করে পুরান ঢাকার জনপ্রিয় স্কুল "সেন্টার পয়েন্ট স্কুল"।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পুরান ঢাকার জনপ্রিয় স্কুল "সেন্টার পয়েন্ট স্কুল" বার্ষিক শিক্ষা সফর ২০২৫ এর আয়োজন করে। শ্রেণি ভিত্তিক পঠিত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত নানা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তবের সাথে মিলিয়ে যাচাই করতে পারে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঢাকা থেকে বিসিক শিল্প নগরী নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর তাঁত শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা। পাশাপাশি নরসিংদীর জেলার পাঁচদোনার চৈতাবাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ড্রিম হলিডে পার্কে দিনের বাকিটা সময় হৈ-হুল্লোড়, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, ফটোসেশন, গান , নাচ ও আবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের রাইড-এ উঠে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসফরকে আরো প্রাণবন্ত করতে পারে সেই আয়োজন করে "সেন্টার পয়েন্ট স্কুল"।
স্কুলের প্রধান উপদেষ্টা ও নবকুমার স্কুল ও ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ আবদুল হালিম, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেসমিন বানুসহ সকল শ্রেণির ছত্র-ছাত্রি ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই শিক্ষাসফরে অংশগ্রহণ করেন ।
অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান বলেন, "ছাত্রজীবন হলো মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জীবনের এই সময়ে একজন শিক্ষার্থী নিজেদের চরিত্রকে ইচ্ছেমতন গড়ে তোলার সুযোগ পায়। মানুষের জীবনের জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়া সমগ্র জীবনব্যাপী চললেও, মানুষ হিসেবে নিজের চরিত্রকে গড়ে তোলার প্রাথমিক এ শিক্ষা লাভ জীবনের এই সময়েই হয়ে থাকে। শিক্ষা জীবনের অর্থ শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চৌহদ্দির মধ্যে আবদ্ধ শিক্ষা নয়। ছাত্রজীবনের শিক্ষা হওয়া উচিত ব্যাপক ও বিস্তৃত। তবেই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সার্থক হয়ে থাকে। ছাত্রজীবনের শিক্ষার এই বহুমুখী চরিত্রের মধ্যে জীবনের প্রতিটি দিকের সঙ্গে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিচিতি হওয়া আবশ্যক। সেই প্রাথমিক জীবন দর্শন-এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর চরিত্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছাত্রজীবনে শিক্ষামূলক সফরের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।"
তিনি আরও বলেন, "একটি শিক্ষাসফর একজন শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণ্ডির বাইরের পৃথিবীর পরিচিতি এবং জ্ঞানের জগতকে প্রসারিত ঘটায়। এই পরিচিতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সাথে বিশ্বপ্রকৃতির যে সংযোগ গড়ে ওঠে তা তার চরিত্র গঠনে সহায়তা করে। তাছাড়া একজন শিক্ষার্থীর শথ, ভবিষ্যতের পেশা এবং আত্মপ্রতিভামূলক দিকনির্দেশ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও শিক্ষাসফরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষার্থী একটি যথাযথ শিক্ষাসফরে গিয়ে যা শেখে তা শিক্ষাঙ্গনের পুঁথিতে আবদ্ধ বিদ্যা তাকে শেখাতে পারে না। শিক্ষামূলক সফরে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, পরিবেশ তথা স্থানীয় মানুষের দৈনিক জীবন সম্পর্কে পরিচিতি লাভ করতে পারে। তাই শিক্ষাসফর থেকে লব্ধ উপলব্ধি একজন শিক্ষার্থীর সমগ্র জীবনে বিশেষ প্রভাব রেখে যেতে সক্ষম হয়।"
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন