মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ইউরোপীয় দেশ ও কানাডার ডিজিটাল পরিষেবা কর আরোপের প্রতিক্রিয়ায় এসব দেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্লেষকদের মতে, যদি ট্রাম্প প্রশাসন এই শুল্ক আরোপ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে নতুন বাণিজ্য দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে।
জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তারা ট্রেড অ্যাক্ট ১৯৭৪-এর সেকশন ৩০১-এর অধীনে তদন্ত চালিয়ে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের ব্যবস্থা নেয়। আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে এই তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্প তার ঘোষিত ‘পাল্টা শুল্ক নীতির’ প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। তিনি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেসব দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক বা বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা আরোপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিজিটাল পরিষেবা কর কী?
ডিজিটাল পরিষেবা কর হলো মুনাফার পরিবর্তে রাজস্বের ওপর আরোপিত একটি কর, যা অনলাইন বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য ডিজিটাল পরিষেবা থেকে অর্জিত আয়ে প্রযোজ্য। এটি সাধারণ কর্পোরেট করের চেয়ে ভিন্ন।
কানাডা ২০২৩ সালে ৩ শতাংশ ডিজিটাল পরিষেবা কর চালু করে, যা এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আরোপিত হয় যাদের বার্ষিক বৈশ্বিক রাজস্ব ৭৫০ মিলিয়ন ইউরোর (৭৮৫ মিলিয়ন ডলার) বেশি। মূলত, গুগল, মেটার মতো বড় মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এই করের আওতায় পড়ে।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশও ডিজিটাল পরিষেবা কর চালু করেছে। এছাড়া, ভারতের মতো গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোও এই কর বাস্তবায়ন করেছে।
ডিজিটাল পরিষেবা কর প্রথম চালু হয় ২০১৯ সালে, যা একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। তখন ধারণা করা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি ডিজিটাল কর চুক্তির মাধ্যমে বাজারভিত্তিক দেশগুলোর জন্য কর সংরক্ষণের ব্যবস্থা হবে।
তবে মার্কিন বিরোধিতার কারণে এই চুক্তি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ডিজিটাল পরিষেবা কর এখন স্থায়ী হয়ে উঠছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প তার প্রথম দফা প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এই করের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন ও ২০১৯ সালে সেকশন ৩০১-এর আওতায় তদন্তের নির্দেশ দেন। তবে তখন ফ্রান্স তাদের কর স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেনি।
ট্রাম্পের পরবর্তী বাইডেন প্রশাসনও কানাডার ডিজিটাল পরিষেবা করের বিরোধিতা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল, এই কর যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা বাণিজ্য চুক্তির লঙ্ঘন।
জিবি নিউজ প্রতিনিধি//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন