উপদেষ্টা পরিষদ থেকে মো. নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ শুধু নতুন রাজনৈতিক বিকাশেই নয়, বরং শান্তি, স্থিতি এবং কাঙ্ক্ষিত ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও এক যুগান্তকারী ঘটনা হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট করেছেন তিনি।
শুরুতেই মুশফিকুল ফজল আনসারী তরুণ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘প্রিয় নাহিদের জন্য অনন্ত শুভেচ্ছা!
অশেষ ধন্যবাদ, ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে নিঃসংকোচে জনতার কাতারে শামিল হওয়ার হিম্মত দেখানোর জন্য। বাংলাদেশের ভাগ্যাহত মানুষের মতো আমিও আশায় বুক বাঁধি—এই দেশে বহুত্ববাদ, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে; মানুষকে ন্যায্য অধিকারের জন্য জীবন দিতে হবেনা; উসকানিমুক্ত একটি সহনশীল পরিবেশ গড়ে উঠবে, যেখানে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধার জায়গা থাকবে; বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে পড়বে; দেশের সব প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা সমুন্নত থাকবে; এবং সর্বোপরি, হঠকারী রাজনীতির বদলে সুস্থ, জনকল্যাণমূলক রাজনীতির বিকাশ ঘটবে’ বলে লিখেছেন রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সাবেক সাংবাদিক মুশফিক আরো লেখেন, ‘নতুন রাজনৈতিক শক্তির আত্মপ্রকাশ অবশ্যই স্বাগতযোগ্য, এবং তা আবর্তিত হোক জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার এবং জনআকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে। সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের জন্য তোমাদের সহপাঠীরা জীবন উৎসর্গ করেছে—গুলির মুখে পেতে দিয়েছে নিজের বুক; মায়ের আচল ছেড়ে আলিঙ্গন করেছে বুলেটের আঘাত; মায়েরাও এগিয়ে দিয়েছে তাদের নাড়ি ছেঁড়া বুকের মানিককে। তোমাদেরও বরণ করতে হয়েছে অকথ্য শারীরিক নির্যাতন।’
বিরোধীদলের ওপর বিগত শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ বছর ধরে গুম-খুন আর নির্যাতনের কথা স্মরণ করে মুশফিকুল ফজল আনসারী লেখেন, ‘ইলিয়াস আলী, সুমন, জাকির, দিনার, রাসেল, রানা, আদনান, মাহবুব, মুন্না, চঞ্চলরা চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে হাসিনার গুম রাজ্যে। লাখো তরুণের সাকিন ছিলো হাসিনার কারাগার কিংবা ধান-পাটের বিস্তীর্ণ ক্ষেত।’
জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, ‘এমন বাস্তবতায় আমাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে, তা যেন আমরা কাজে লাগাই। গণতন্ত্রে জনগণের ইচ্ছাই চূড়ান্ত। জনগণ যাকে চাইবে, তার হাতেই যাবে ক্ষমতার ভার। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি দেশি-বিদেশি শত্রুর মোকাবিলায় অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে তোলা।
নাহিদের এই ত্যাগ শুধু নতুন রাজনৈতিক বিকাশেই নয়, বরং শান্তি, স্থিতি এবং কাঙ্ক্ষিত ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও এক যুগান্তকারী ঘটনা হয়ে উঠুক—এই আমার একান্ত কামনা।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি।
মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান (মন্ত্রিপরিষদ সচিবের রুটিন দায়িত্ব) সই করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পদত্যাগপত্রে নাহিদ ইসলাম লেখেন, ‘আমার সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করুন। প্রথমেই আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পরে ছাত্র-জনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আপনার নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে আমাকে সুযোগ দানের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। গত ৮ আগস্ট শপথ নেওয়া উপদেষ্টা পরিষদে আমি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাই। নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আপনার নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেছি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমার ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত মর্মে আমি মনে করি। ফলে আমি আমার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়া সমীচীন মনে করছি।
এমতাবস্থায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি। আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে মহোদয়কে সবিনয় অনুরোধ করছি।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উপদেষ্টা পরিষদে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
আগামী শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ছাত্র-জনতার নতুন দল আসছে। নাহিদ ইসলাম নতুন দলে নেতৃত্বে থাকবেন বলে আলোচনা আছে।
নাহিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলে। তার বাড়ি ঢাকার বাড্ডা এলাকার বেরাইদ ইউনিয়নে।
জিবি নিউজ24ডেস্ক//
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন