সাধারণ মানুষ, তরুণেরা পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে ইসলামের সৌন্দর্যের দিকে বেশি
রাজু আহমেদ ||
দেশের কত শতাংশ মানুষ হোটেল রেস্টুরেন্টে খায়? রমজানে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখলেই সম্যক সমস্যার সমাধান হবে? রোজায় যারা ঘরে বসে দিবালোকে খাবে তাদের চিকিৎসা কীসে? রমজানে ঢালাওভাবে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে বলা বে-রোজদারের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নয়। বরং জোরদার করে বলুন, সামর্থ্যবান ভাইয়েরা, শারীরিকভাবে সুস্থ মুসলিমগণ, রোজা রাখুন। রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করুণ।
যে স্বরে রোজার মাসে হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে বলেন সেই একই স্বর-সুরে কেন বলেন না, ব্যবসায়ী ভাইয়েরা, আল্লাহর ওয়াস্তে রমজান উপলক্ষ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করবেন না বরং যতটা সম্ভব অল্প মুনফা করে কমিয়ে দিন। দোহাই আপনাদের, দাম না কমালেও অন্তত যা আছে তাই জারি রাখুন। জোর করে হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখা যাবে কিন্তু যে গোপনে রোজা ভাঙবে তাকে কী করে ফেরাবেন? ইমানি জজবা তাজা করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।মসজিদ-মাহফিলে প্রচারণা বৃদ্ধি করুন। জনতাকে সচেতন করে জনসংযোগের আয়োজন হতে পারে উত্তম সলিউশন। হোটেল রেস্টুরেন্টে বন্ধ করে রাখালে রোজা ভাঙার জেদ আরো বাড়বে- আশঙ্কা হয়। আইন বা বলপ্রয়োগের চেয়ে সামাজিক ও নৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করাই দীর্ঘমেয়াদে বেশি কার্যকর হতে পারে। হোটেল বন্ধ রাখার পরিবর্তে জনমত গঠনের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
কেবল ভাসমান মানুষের জন্যই হোটেল রেস্তোরাঁ! সিংহভাগ মানুষ তো ঘরেই খায়! দেশের কত শতাংশ মানুষ রোজা রাখে? অনেকেই এদিক-সেদিক করে! ঘরের ইমান ঠিক হয়ে গেলে বাইরের ইমান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক হয়ে যেতে বাধ্য। হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখার জন্য আহ্বান জানান কিন্তু জোর করতে যাবেন না! একই সাথে ব্যবসায়ীদের সাথে বসুন, আলাপ করুন। রোজাদারদের যাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে না হয় সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুণ। রোজার পবিত্রতা রক্ষায় যা যা করা দরকার তা করা উচিত। কিন্তু তাতে যাতে কোনোকিছুই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না পৌঁছে।
সাধারণ মানুষ, তরুণেরা পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে ইসলামের সৌন্দর্যের দিকে বেশি করে আকৃষ্ট হতে শুরু করেছে। এমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবেন না যাতে বিরক্তিবোধের সৃষ্টি হয়। এমনভাবে ইসলামের কথা প্রচার করুন যাতে হাটবাজারের হোটেল-রেস্টুরেন্ট তো বন্ধ হবেই এমনকি মা-বোনেরা দিনের খাবার তৈরির বিরুদ্ধে ঘরের চুলাও বন্ধ রাখতেন। মাহে রমজানের পবিত্রতা জানান দেন। হোটেল-মোটেল মালিকপক্ষকে আহ্বান জানান। রমজানে এখনই জোর করে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার সময় আসেনি।
প্রত্যেকটি অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদ এবং বিরুদ্ধে আগে মৌখিকভাবে অবস্থান ঘোষণা করতে হবে। এর উপকারিতা এবং অপকারিতা বর্ণনা করে ব্যক্তিকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেন্দ্রে আনতে হবে। যারা রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে তাদেরকে মৌখিক আহ্বান জানিয়ে ক্ষান্ত হওয়া যাবে না। তারা যদি সীমালঙ্ঘন করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে সেসব ব্যবসায়ীকে এবং উচ্চমূল্যের পণ্য বয়কট করতে হবে। রমজানের মত ফজিলতপূর্ণ মাস বর্ষপঞ্জিতে দ্বিতীয়টি নাই। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য শুধু বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া যথেষ্ট নয়, বরং সামগ্রিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সহনশীল রাখা জরুরি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিই হতে পারে কার্যকর পথ। আমরা যেন রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মওকা থেকে নিজেদেরকে মাহরুম না করি, মাহরুম না হই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন