সাফল্য মানে প্রত্যেক পদে পদে সামনে এগিয়ে চলা
রাজু আহমেদ ||
রিজিকের বন্দোবস্ত হলে সেটাকে সফলতা বলছেন? সংকীর্ণ অর্থে বলতে পারেন। তবে সাফল্য মানে হালাল রিজিক, বৈধ ক্ষমতা এবং মানসিক প্রশান্তির উৎসসমূহ। মনের মত জীবনসঙ্গী পেলে সেটাকে একবাক্যে সাফল্য বলতে পারেন। কেননা বড় চাকুরি আছে, মোটা অঙ্কের মাইনেও আছে কিংবা স্যালুট-সম্মান, সম্পদও আছে অথচ ঘরে শান্তি নাই। সব মিছে। বাইরের ভোগ আছে? তবে তা রোগ বাড়াচ্ছে। এটা যে জীবন নয়। ঘরের গল্প যদি কানের তৃপ্তি তৈরি না করে, সাক্ষাৎ যদি সময়কে উপভোগ্য না করে কিংবা অপেক্ষা যদি মিলনকে মধুর না করে তবে সব বৃথা, সবকিছু মরীচিকা। সাফল্য বলতে কেবল বেকারত্ব থেকে মুক্তি কিংবা সম্পদ সঞ্চয়ের পরিধি বাড়ানো নয় বরং সাফল্য সঙ্গীর সান্নিধ্যের মাঝে লুকায়িত থাকে।
চাকুরি মানে চাকর- কথা শুনতে হয়। ব্যবসা মানে সময় ও পুঁজি খাটাতে হয়- স্বাধীনতা কোথায়? সবকিছু ভালোভাবে সামলিয়ে যদি ঘরে ফেরার প্রতীক্ষা উপভোগ্য হয় তবে জীবনকে সফল বলা চলে। যেখানে স্বামী/স্ত্রী পরস্পরের অপেক্ষায় থাকে, সন্তানের আব্দার বাবা-মা রাখে সেখানে সুখ থাকে। মনের মধ্যে প্রশান্তির বৃষ্টি না নামলে আত্মিক সুখের সৃষ্টি হয় না। মানুষ যদি মনকে বিষিয়ে রাখে তবে ভালো চাকুরির পরিবেশ ও চাকুরি- জেল-সাজা! তখন মানুষ হতাশায় ডোবে, জীবনকে ব্যর্থ মনে হয়। একবার যদি কারো মনে ব্যর্থতার গল্প উঁকি দেয় তবে তার জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন। হতাশা কাটানোর ওষুধ ঘরে থাকে, থাকে প্রিয়জনের যত্নে। ভরসা করার মূল মনে জড়িয়ে রাখে। এখানে-ওখানে ছিন্নবিচ্ছিন্ন জীবনের মাঝে ব্যর্থতার বলিরেখা।
সাফল্য মানে প্রত্যেক পদে পদে সামনে এগিয়ে চলা। সম্মান অর্জন করা, সুবিচার নিশ্চিত করা কিংবা সততায় টিকে থাকা মানেই সফলতা। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ন্যায়ের পক্ষে দুটো কথা বলতে পারাও সফলতা। জীবনের ক্যানভাসে লাল-নীল কত বাতির মিছিল যাবে। উত্থান-পতনের গল্প রচিত হবে। সবাইকে বুক পেতে আগলে রাখা, প্রিয়জনের বিশ্বাস অটুট রাখা এবং ভালোবেসে পাশে থাকা- একজীবনে এরচেয়ে বেশি আর কিছুই চাওয়ার থাকে না। যেখানে যতটুকু দায়িত্ব, যার যেখানে হক/দাবি তা যথাযথ পালন করার মাঝেই চূড়ান্ত সফলতা। দুদিনের জীবনে তিনদিন দুর্নাম বহন করতে না হয়- কর্মে মানুষ হয়ে উঠুক মহিমাময়।
জীবন সুন্দর হবে নাকি অসুন্দর- তার অনেকখানি নিজের ওপর নির্ভর করে। যার যতটুকু পাওনা ততটুকু পূরণ করতে হবে। তবে ঘরের প্রায়োরিটি সবার আগে, সব থেকে আগে বুঝিয়ে দিকে হবে। ঘর বঞ্চিত করে অপরকে দরদ দেখালে ভোগান্তি বাড়বে। জীবনের রং-রসে কারো অধিকার বঞ্চিত করার দায় না থাকুক। সফলতা মানে নিশ্চিতে ঘুমাতে পারার নিশ্চয়তা। আপন মানুষের কাছে ঋণ থাকলে তা আদায় করতে হবে। কৃতজ্ঞ থাকা, বিনীত হওয়া- এসব জীবনের সাথে বাধ্যতামূলক পালক হিসেবে রাখতে হবে। ভুলগুলো যদি ফুলের কলিতে বদল করা না যায় তবে ব্যর্থতার সিঁড়ি আরও দীর্ঘায়িত হবে।
জীবনের সাফল্য মানে অগ্রাধিকার ঠিক করা। ফয়সালার দিনে খোদার সাথে মিলিত হওয়া এবং মুক্তি পাওয়া- সফলতার চূড়ান্ত ধাপ। তবে সে পর্যন্ত পৌঁছাতে লোভ সংবরণ করতে হবে, মোহ থেকে মুক্ত থাকতে হবে, ন্যায়ের সঙ্গ দিতে হবে এবং সকল বদকে শরীর ও মনের সর্বশক্তি দিয়ে ঘৃণা করতে হবে। দাসত্ব মানে যদি সফলতা হয় তবে সে সংজ্ঞার নির্ধারকের মস্তিষ্ক পচে গেছে। বেলা থাকতে ঘরে ফিরুন। গল্প শুনুন এবং অভিমানের পর্দা উন্মোচন করে হাসি-আনন্দে জীবনকে জড়িয়ে দিন। জ্যোছনা রাতে হাঁটতে হাঁটতে সুখের সিঁড়ি রচনা করুন- এইতো সাফল্য, মানবজীবনের কাঙ্ক্ষিত সফলতা।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন