সুনামগঞ্জে জলমহাল থেকে কয়েক কোটি টাকার মাছ লুট

gbn

দিরাই প্রতিনিধি //

সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় ছয়দিনে ৯টি  জলমহালে মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে। এতে মাছ শিকার করতে  আসা হাজার হাজার জনতাকে উল্লাস করতে দেখা গেছে। জলমহাল থেকে  মাছ লুটের ঘটনায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা জলমহাল ইজারাদারদের। এমন ঘটনায় আতঙ্কে আছেন হাওর অঞ্চলের জলমহাল ইজারাদার ও সংশ্লিষ্টরা।
 

বুধবার  ৫ মার্চ সকালে দিরাই উপজেলার কেজাউরা ও কাতইর জলমহালে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার মানুষ মাছ ধরার পলো, জালসহ নানা উপকরণ নিয়ে নেমে পড়েন। পুলিশ প্রশাসনের লোকজন তাঁদের বাধা ও অনুরোধ করলেও তাতে কোন লাভ হয়নি।
 

 

 

এরআগে মঙ্গলবার ৪ মার্চ শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের কাছের কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির সত্তুয়া নদীর মাছ লুট করে দিরাই ও শাল্লার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। একইদিনে উপজেলার কাশীপুর গ্রামের কাছের বাইল্লা বিল ও ইয়ারাবাদ গ্রামের কাছের বড়গাঁও-ইয়ারাবাদ গ্রুপ জলমহালের ভাটিগাং বিল লুটপাট হয়।
 

রবিবার ২ মার্চ সকালে দিরাই উপজেলার মেঘনা জলমহালের একটি বিল ও একই উপজেলার আতনি বিলের (শাল্লা উপজেলার জয়পুর গ্রামের সামনে) মাছ ধরে নেয় হাজারো মানুষ। এরপর সোমবার দিরাই উপজেলার কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির এলংজুরি ও আলীপুর গ্রামের পেছনের লাইরা-দীঘা ও চনপইট্টা বিলের পাইলের (অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে মাছ বড় করা) প্রায় কোটি টাকার মাছ লুটে নেয় বিল এলাকার  হাজার হাজার মানুষ। অন্যদিকে শনি ও রবিবার  ১ ও ২ মার্চ সকালে শাল্লার যাত্রাপুর গ্রামের পাশের জোয়ারিয়া বিলের মাছ ধরে নেয় ছব্বিশা, দামপুর, কান্দিগাঁও, ইয়ারাবাদ, কান্দকলা, রঘুনাথপুর, যাত্রাপুর গ্রামের কয়েকশ মানুষ। বিলের পাহারাদাররা জলমহালে থাকলেও প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
 

জোয়ারিয়া বিলের ইজারাদার যাত্রাপুর হিলিপ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হিমাদ্রী সরকার বলেন, বিলে বাঁশ-কাঠা দেওয়া, পাহারাদার রাখাসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আগামী বছর মাছ ধরার কথা ছিল কিন্তু জোর করে দুই দিন মাছ ধরে অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে।’ এরআগে সর্ব প্রথম শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে দিরাই উপজেলার চরনাচর গ্রামের পাশের কামান বিলের মাছ জোর করে ধরে নেয় বিভিন্ন গ্রামের ১০/১৫ হাজার মানুষ।
 

 

কামান বিলের ইজারাদার চরনারচর বিএম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক সুধীর বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা সরকারকে প্রতিবছর ৫০ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব দেই। দুই দিনে আমাদের বিলের প্রায় দেড় কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে। বিলটি ১৯৭ একর জায়গা জুরে। বিলের মাছ ধরতে ৫ মাস সময় লাগে।৪০ জন জেলে দীর্ঘদিন ধরে পিছন দিক থেকে জাল দিয়ে বারি দিয়ে দিয়ে ১ বিঘা জায়গার মধ্যে সমস্ত মাছ আটক করে নিয়ে এসেছে। এটাকে বলা হয় যমুনা। এটা হচ্ছে কামান বিলের মূল অংশ। স্রোতের বিপরীতে এখানে এসে সমস্ত মাছ জমা হয়। তিন বছর ফাইল করে যে সমস্ত মাছ গুলো ধরা হয় এখানে এই বড় মাছ গুলো ছিল। নির্দিষ্ট সময়  ও পরিকল্পনা নিয়ে  মাছ ধরতে হয়। আমরা এর আগে গত বুধবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শুক্রবারে যমুনার মাছ গুলো ধরব। কিন্তু এলাকার ধর্মীয় অনুষ্ঠান কীর্তন থাকায় আমরা তারিখটা পিছিয়ে শুক্রবারে নেই। কিন্তু এর আগেই আমরা শুনতে পাই শ্যামারচর বাজারে নাকি কথা রটেছে আগামীকাল কামনা বিলে পলো বাইচ। আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্ঠা করি। আমরা বলি আমাদের একটা সপ্তাহ সময় দিন আজকে শুক্রবার আগামী শুক্রবারে আপনারা পলো বাইচ দিয়েন কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনেনি।
 

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মেঘনা ও কামান বিলের মাছ ধরা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। এলাকার লোকজন কিছু বিলের মাছ ধরেছে। লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির পাইলের অংশে জোর করে মাছ ধরার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
 

জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বললেন, ‘একটি জলমহাল থেকে জোর করে মাছ ধরে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। এ ছাড়াও আর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলব।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন