ভিন্নমত সহাবস্থান: সংঘাত নয়, সংলাপ

gbn

উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্ব নাই অথচ স্বার্থ কিংবা সম্পদকে কেন্দ্র করে যত নগ্ন লড়াই

রাজু আহমেদ।|

মতের মিল না হলে মানুষ কতোটা আগ্রাসী হতে পারে তা বহুবছর ধরে অবলোকন করছি। দু'পক্ষের কোন পক্ষ সঠিক সেটা পরিমাপের গ্রহণযোগ্য কোন মানদন্ড না থাকা সত্ত্বেও পরস্পর পরস্পরকে নগ্নভাবে আক্রমন করছে। কে সঠিক তা নির্ধারিত হয়নি তবুও কেবল নিজের বিশ্বাসকে পুঁজি করে অন্যদেরকে বাতিল করে দেওয়ার রেওয়াজ এই সমাজে প্রবলভাবে আছে। কেবল বিশ্বাসের মিল না থাকার কারনে একদল আরেকদলকে খুন করছে, জখম করছে। অথচ দু'পক্ষই দাবি করছে তারা কল্যাণকামী। উভয়ের গন্তব্য কেন্দ্রমুখী করে পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে এমন আগ্রাসী প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে যাতে উলুখাগড়ার প্রাণ যায় অবস্থা।  অথচ নিজেরা নিজেদের সহযাত্রী হলে দর্শকরা নিরাপদ থাকতো।  

 

উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্ব নাই অথচ স্বার্থ কিংবা সম্পদকে কেন্দ্র করে যত নগ্ন লড়াই। দ্বন্দ্ব কেবল মত ও মতবাদের। সামান্য সামান্য বিষয় নিয়ে এমন সীমালঙ্ঘনের লড়াই যাতে উভয়ের ধ্বংসের দামামা বেজে ওঠে। কথায় কথায় হাতাহাতি, মারামারি কিংবা রক্তারক্তি চলতেই থাকে। মায়ের কোল খালি হয়, স্ত্রী বিধবা হয় এবং সন্তান এতিম হয়। লাভবান যে কারা হয় তা আজও খুঁজে পাইনি কিংবা বুঝতে পারিনি। মানুষ খুব অল্পতে এমন অসহিষ্ণুতার শিক্ষা কোথা থেকে পেলো তা কে জানে! কথার জবাব যে প্রজন্ম হাত দিয়ে দিতে চায় বা যায় তাদের দিকে তাকিয়ে আশাবাদী হওয়ার খুব বেশি রসদ নাই। যুক্তি-তর্কের ধার না ধরে যার ডাইরেক্ট অ্যাকশনে বিশ্বাসী, তাদের সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্মানজনক। 

 

কেবল আমিই সঠিক- এ বোধ ও বিশ্বাস গোষ্ঠীগুলোকে বর্বর করে দিচ্ছে। আমাকে সত্য ও ন্যায়ের মানদন্ড বিবেচনা করে অন্যান্যদের বাতিল করে দেওয়ার যে সংস্কৃতি তা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে জাতিকে খুব ভোগাচ্ছে। উদারতা এবং মাহাত্ম্যপূর্ণতায় জাতি হিসেবে আমাদের যতদূর যাওয়ার কথা ছিল তার ধারেকাছেও আমরা যেতে পারিনি। হা-ডু-ডুর বৈশিষ্ট্য আমাদের রক্তে ও রন্ধ্রে রয়ে গেছে। সামান্য সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে এমন বিশাল বিশাল হাঙ্গামা শুরু হয় যা অকল্পনীয়। আবার সেই আদিম যুগের মত পেশীশক্তির প্রাধান্য শুরু হয়েছে। কলমের শক্তিতে লেপেছে কালিমা! প্রতিপক্ষকে আক্রমন, যখম করেই গোষ্ঠীগুলি জয়লাভ করতে চায়। আলোচনার ধার ধরে না, সংযম কিংবা সংযত হয় না। চারদিকে প্রবল বিশৃঙ্খল অবস্থা। 

 

প্রত্যেক মানুষের আলাদা আলাদা বিশ্বাস, মতবাদ থাকবে। গণতন্ত্রে মতের ভিন্নতাতেই সৌন্দর্য। কারো মত অপছন্দ হতে পারে, প্রবলভাবে বিরোধিতাও করা লাগতে পারে কিন্তু সেটাকে জোরজবরদস্তি করে দমিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। অমিলের প্রতি আরও শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। যা কিছু বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক তা দিয়ে নিজের বিশ্বাসের সঠিকতা যাচাই করা সহজ হয়। অথচ কথার জবাবে এখন শারীরিক আক্রমণ, পাল্টা আক্রমন চলে। দেখে নেওয়ার হুমকি প্রকাশ্যে বলে। রক্ত দেখতে মানুষ উম্মাদের মত আচরণ করে। বিপক্ষ দলের প্রতি, মতের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা-ভালোবাসাটুকুও অবশিষ্ট নাই। যেন জনমের শত্রু- কথা ও আচরণে তাই প্রমাণিত হচ্ছে। কোন পরিণতিতে পৌঁছাবে আমাদের ভবিষ্যত? 

 

পারস্পরিক এমন শত্রুতার পরিণতি কী? যারা দু'পক্ষের শত্রু তাদের পূনর্বাসনের পথ পরিস্কার হওয়া। ভাইয়ে ভাইয়ের লড়াইয়ে তৃতীয়পক্ষ চালকের আসনে বসার সুযোগ পায়। নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য থাকবে। মতানৈক্যসহ ঐক্যের বিকল্প নাই যদি মুক্তি আশা করি। যে-কোনো সমস্যাকে ঘিরে আলোচনা হবে। যুক্তি-তর্কে সমাধান বের হয়ে আসবে। আক্রমন, প্রতিআক্রমণের দ্বারা লাশের সংখ্যা ছাড়া এই জাতি আর কিছুই উপহার পায়নি। পঙ্গুত্ব বেড়েছে, লোকে লোকে আলোবর্ষের দূরত্ব হয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গুত্ববরণের পথে প্রজন্ম যাতে আর না হাঁটে। কেবল আমিই ঠিক এবং বাকিরা ভুল- এমন বদ্ধমূল বিশ্বাসের ফলে অতীতে অনেক সম্ভাবনময়ের ধ্বংস অনিবার্য হয়েছে। রক্তারক্তি কোন ফ্যাসাদের সমাধান আনেনি বরং সমস্যা জিইয়ে রেখেছে। পায়ের গোড়ালি থেকে শুদ্ধতা শুরু হওয়ার জন্য মস্তিষ্কের অগ্রভাগ থেকে শুদ্ধাচার চর্চা আরম্ভ হওয়া জরুরি।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন