বই পড়া: শুধু জানা নয়, জাগরণও

gbn

বইয়ের আলো মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করলে সে ব্যক্তি আলোকিত হতে বাধ্য

রাজু আহমেদ। 

পাঠের উদ্দেশ্য কী? অনেক কিছু জানা? সেটা সংকীর্ণ অর্থে। বিস্তৃত অর্থে পাঠের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবর্তন। পাঠকের মনোজগতের পরিবর্তন ও আলোড়ন সৃষ্টি।  পাঠক যেভাবে ভাবে, যা নিয়ে চিন্তা করে এবং যত গভীরে চিন্তা করে সেটা যাতে পরিবর্তিত হয়ে আরও উন্নত ও সম্মৃদ্ধ হয়- সেটাই বই পড়ার প্রধান লক্ষ্য। অনেককিছু জেনেও কোনো লাভ নাই যদি ব্যক্তিত্বের  পরিবর্তন, আচরণের পরিবর্তন এবং চরিত্রের বৈপ্লবিক পরিবর্তন না ঘটে। ভালো বই মানুষকে ইতিবাচক চিন্তা করতে শেখায়। 

 

কেউ যদি বই পড়ার পরেও তার পুরাতন অভ্যাস আঁকড়ে রাখে, অযৌক্তিক ধ্যান-ধারণা পোষণ করে কিংবা সততার পথে না হাটে তবে সে ব্যর্থ পাঠক। বইয়ের আলো মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করলে সে ব্যক্তি আলোকিত হতে বাধ্য। একজন অনেক বই পড়েছে কিন্তু নিজেকে বদলাতে পারেনি, সমাজের কোন উপকারে আসেনি কিংবা দেশপ্রেম জাগেনি- বইয়ের সাথের সংযুক্তি তার সময় নষ্ট করেছে! যতখানি পচা মস্তিষ্ক নিয়ে সে ছিল সেই তেমনটি আছে। বইয়ের পৃষ্টা উল্টানো-পাল্টানোতে তার মস্তিষ্কের পরিবর্তন ঘটেনি। 

 

কেউ মাত্র একখানা বই পড়েছে। বইয়ের শিক্ষা যাপিত জীবনে কাজে লাগিয়েছে। পূর্বে যে অবস্থানে ছিল সেখান থেকে সম্মৃদ্ধির পথে হেঁটেছে, মানবহিতৈষী চিন্তা করেছে এবং জাতির কল্যাণে কাজে এসেছে- এটাকে নির্দ্বিধায় পাঠের সফলতা বলতে পারি। বই যদি জীবন না বদলায়, চিন্তাকে সংস্কার না করে তবে যেকোনো দুইটি ঘাটতি থাকতে পারে। প্রথমতঃ বই নির্বাচনে ভুল হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ পাঠক শুধু পড়ার জন্যই পড়েছে; শেখা বা অনুধাবনের জন্য পড়েনি- ধরে নিতে হবে।

 

আলোকের সান্নিধ্যে এসে কেউ যদি আলোকচ্ছটায় জীবনকে রাঙিয়ে বৈচিত্র্যময় করতে না পারে, চিন্তার সুগন্ধি ছড়াতে না পারে কিংবা ব্যক্তিত্ব দ্বারা মানুষকে আকৃষ্ট করতে না পারে- তবে সেটা সীমাহীন ব্যর্থতাই বটে। পাঠাভ্যাস জীবন বদলাতে পজিটিভ এবং আউট অব দি বক্স ভাবনার সূচনা করবে। কিন্তু কোন পাঠক যদি বই পড়ার অভ্যাসের সাথে সাথে অন্যায়-অবৈধতার সাথেও সন্ধি করে চলে তবে কোথাও না কোথাও পাঠের গলদ রয়ে গেছে। পাঠের আগে আর পাঠের পরে চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে যদি দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষণীয় না হয় তবে বইয়ের সাথে কাটানো সময় অপচয়ে গেছে!  

বই পড়া মানে পরিবর্তন হওয়া। একসময় ভাবতাম বই কেনার অভ্যাস ভালো অভ্যাস।  সে ধারণা এখনো পুষি তবে বই কিনে পাঠবিহীন ফেলে রাখলে বইয়ের ক্রেতার তেমন কোন উপকার হয় না। যে ঘরে বই আছে অথচ কেউ পড়ে না সে ঘরের বই লাইব্রেরিতে থাকা অব্যবহৃত বইয়ের মতোই অলঙ্কার। পবিত্র পবিত্র একটা ভাব আছে কিন্তু কারো উপকারে আসছে না। নাগালে বই কম থাকুক তবু যা আছে তা নিয়মিত পড়া হোক। দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য দু একটি ভালো বই যথেষ্ট। বই পড়া এবং বার্তাগুলো জীবনে প্রয়োগ করা- উভয়ের মিলনে নিজস্ব মতবাদ গঠিত হয়। কেবল পড়ে গেলে এবং শিক্ষা ভুলে গেলে সেটা পণ্ডশ্রম হবে। বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় অগণনীয় আলোর বিচ্ছুরণ। কালো অক্ষরগুলোকে শিক্ষা জীবনে সোনার মোড়কে জড়িয়ে সাফল্যের অঙ্কে বাস্তবায়িত করতে হবে। 

শিক্ষা হচ্ছে আচরণের অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তন। বই মানুষকে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে নির্দেশ করে। সরল পথের ঠিকানা দেখায়। সুখের সন্ধান বইয়ের মধ্যে আছে। চট করে মন ভালো হয়ে যাওয়ার সব আয়োজন কালো অক্ষরের গাঁথুনিতে বেশ পোক্তভাবেই আছে। যারা বই পড়েছে তাদের জীবন বদলেছে। এমনকি যে জাতি যত পড়ুয়া সে জাতি তত উন্নত- দৃষ্টান্ত পশ্চিমা বিশ্বে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মত নিত্যসঙ্গী হিসেবে বই থাকা উচিত। সংসারের ব্যয়ের খাতসমূহের মধ্যে বই কেনার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।  একটি জাতিকে সমন্বিতভাবে জাগ্রত করা এবং ঐক্যবদ্ধ করার জন্য পড়ুয়া প্রজন্ম গঠনের বিকল্প নাই। ভালো এবং মন্দের তফাৎ নির্ধারণে পাঠাভ্যাস হতে পারে গন্তব্যে পৌঁছানোর বাটখারা। 

ব্যস্ততম জীবনযাপনে পাঠের অবসর সামান্যই। যতটুকু আছে সেটাও দখলে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পৃক্ততা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদেরকে সামাজিক জী বানাচ্ছে নাকি অসামাজিক পশুত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে- সে আরেক বিতর্কের বিষয়। অল্প অবসর যাতে ফলপ্রসূ করা যায় এজন্য ভালো ভালো বই পড়া দরকার। ভালো লেখক এবং ভালো বই- দুয়ের মধ্যে বিস্তর তফাত আছে। 

একেকজনের পছন্দ রুচি ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণে একজনের পাঠ্যতালিকা আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না; ঠিক নয়। তবে পাঠাভ্যাস চাপিয়ে দেওয়া যায় এবং দেওয়া উচিত। বইয়ের জগতের সাথে যাদের যোগাযোগ আছে কিংবা রিভিউ দেখে উপযুক্ত পাঠ্য তালিকা প্রস্তুত করা দরকার। পড়ার বিকল্প আসলে পড়াতেই। বদলাতে হলে পড়তেই হবে।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন