আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সিলেটে ‘আশার আলোর’ কর্মসূচি

gbn

জিবি নিউজ প্রতিনিধি//

“আমাকে ছাড়া আমার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়।”এই প্রতিপাদ্যে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে নারী দিবস কমিটি।
 

শনিবার (৮ মার্চ) সংগঠনটির অর্থায়নে দিবসটিতে সিলেটে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচী পালন করবে আশার আলো যুব কল্যাণ সংঘ। বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি’র আয়োজনে বিগত ৩৪ বছর ধরে একেকটি সুনির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে তারা দিবসটি পালন করে আসছে।

 

 

এবারো আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির সহযোগীতায় শুক্রবার (০৭ মার্চ) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আশার আলো। রাজধানী ঢাকার বাইরেও ১৮টি জেলায় ‘দুর্বার’ নেটওয়ার্ক ও সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে একই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
 

আশার আলো যুব কল্যাণ সংঘ সিলেটের সভাপতি মাহফুজ আলম লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এতে বলা হয়- নারীর জীবনে প্রায় সব সিদ্ধান্তই নেয় তার অভিভাবক (পুরুষ), পারিবার কিংবা সমাজ। জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর নিজের কার্যকর অংশগ্রহণ, মতামত প্রদান বা ভূমিকা রাখার তেমন কোন সুযোগই থাকে না। নারীর জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে অন্য কেউ। বলা যায়, তার উপরে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়। ছলে-বলে-কৌশলে তা তাকে মানতে বাধ্য করা হয়। ধরেই নেয়া হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানবুদ্ধি নারীর নেই। নারী সর্বদা, সর্বত্র পুরুষের অধস্তন, অধীনস্ত। সে নিজে বা একা কোনোভাবেই একজন পরিপূর্ণ মানুষ নয়। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি তার জীবনের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে পুরুষ।

এই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারা ও চর্চাপ্রসূত সিদ্ধান্ত, প্রথা, নিয়ম, আইন, বিধি-বিধান নারীর অগ্রগতি, এমনকি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেও ব্যাহত করে। তা কেবল নারীর নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই নারীর মুক্তি, ক্ষমতায়ন ও অধিকার কেবল কাগজে, শ্লোগানে বা বক্তৃতায় থাকলে হবে না, এর প্রকৃত বাস্তবায়ন ঘটাতে ১১ দফা দাবি জানান তারা।
 

 

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-নারীর উপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাপ্তরিক বা অধিকার ভিত্তিক কমিটি, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীর সমান উপস্থিতি নিশ্চিত করা। জুলাই অভ্যুত্থানের নারী সহযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া। নারী, কন্যাশিশু, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক ও গণসহিংসতা বন্ধ এবং মৌলবাদী ও উগ্রবাদী সংস্কৃতির বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নেওয়া। ধর্ষণ, যৌতুক, যৌননিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতাবিরোধী প্রচলিত আইনসমূহ নারীর বৈচিত্র্যময় জীবন ও বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ স্বার্থ ও সম-অধিকার বিবেচনায় সংশোধন ও পরিমার্জন করা। আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী, গৃহকর্মী, গার্মেন্টস কর্মী এবং অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারী ও প্রবাসী নারীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী নারীর জন্য গণপরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রবেশগম্য করতে হবে এবং বিশেষ সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারীসহায়তা ও তদন্ত বিভাগ, কাউন্সেলিং, সাইবার সাপোর্ট ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা চালু করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীবিদ্বেষী কার্যক্রম ও প্রচার নিষিদ্ধ করণে আইনের প্রণয়ন। নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী আইন, অধিকার ও সহায়তা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে বয়সভিত্তিক জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও ইতিবাচক যৌনশিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।
 

সংবাদ সম্মেলনে নারী দিবস অর্জনের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হয় বলা হয়- দিবসকে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করে এবং দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানায়। এরপর থেকে সারা বিশ্বজুড়েই নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার জন্য দিবসটি পালিত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- আশার আলো যুব কল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পািদক সাদেক আহমদ, জাতীয় যুব পদকপ্রাপ্ত সামাজিক সংগঠন ইনসাফ’র সভাপতি মো. নজরুল ইসলা, আলোকবর্তিকার সাধারণ সম্পাদক রোজিনা ইসলাম, স্বন্ধি নারী সংঘের প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ আল সাইফ, আলোরধারা পাটশালা সিলেটের ইউথ এডভোকেট জয়শ্রী রান মোহন্ত, আলোরধারার সদস্য রিয়া চন্দ্র, স্কাউট সদস্য রেদওয়ান আহমদ প্রমুখ।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন