ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্যা ইউকের সেমিনার অনুষ্ঠিত

gbn

গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রোববার বিকেলে, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্যা ইউকে পূর্ব লন্ডনের (E1 5HU) ব্রেইডি সেন্টারে শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্থ, বিইএম।
সেমিনারটির আলোচ্য বিষয়টি ছিলো - “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রী ইউকের স্নাতক ডিগ্রীর সমতুল্য হওয়া উচিত এবং এক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও সম্ভাব্য সমাধানের পন্থা ও প্রস্তাবনা”।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্যা ইউকের শিক্ষা ও গবেক্ষণা সম্পাদক এবং সেমিনারের সঞ্চালক এরিনা সিদ্দিকী এ সেমিনার অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। শুরুতে তিনি প্রচণ্ড ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে এতে যোগ দেওয়ার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আর মূল বক্তা ও দুই আলোচককে মঞ্চে আসন গ্রহনের জন্যে অনুরোধ জানান এবং প্রতিপাদ্য বিষয়টি সবার উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করেন। সেই সঙ্গে অতিথি প্রধান বক্তা ও দু’জন আলোচককে পরিচয় করিয়ে দেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ্ উদ্দিন ইকো শুরুতে উপস্থিত সকল সদস্য ও অন্যান্য অতিথিকে স্বাগত জানান।

এতে আলোচনায় মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত এসেক্স বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক প্রফেসর রাশেদুর চৌধুরী এবং আলোচনায়  অংশ নেন সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর শোয়াইব আহমেদ ও গ্রীনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীনিচ বিজনেস স্কুলের উর্ধ্বতন প্রভাষক ডক্টর বি এম রাজ্জাক।

রাশেদুর চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে জ্ঞান-বুদ্ধির বিকাশে যথার্থ অগ্রগতির অভাবের বিদ্যমানতা এবং প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মানব তথা বুদ্ধিজীবী তৈরীর জন্য যে পরিমান পড়াশুনা বা জানা ও শেখার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা যথেষ্ট কি না তা নিয়ে তাঁর সংশয়ের কথা বলেছেন। এর জন্যে শিক্ষাক্রম ও এর কাঠামোগত ঘাটতি বা অপ্রতুলতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। তাঁর মতে পাঠ্যক্রম তৈরীতে একটা স্নাতকের সনদের গ্রহনযোগ্যতাকে নিশ্চিতের লক্ষ্যে কতটুকু জ্ঞান অর্জন প্রয়োজন সেটাকে পর্যাপ্ত বা যথা পরিমান, মানসম্মত, বাস্তবসম্মত ও আকর্ষণীয় করাটা অত্যাবশ্যক। এমনটি নিরূপণে, পাঠ্যক্রম (কারিক্কুলাম) বা পাঠ্যসূচী (সিলেবাস) প্রণয়ন ও পাঠ নির্দিষ্টকরণ (স্পেসিফিকেশন) এবং বাস্তবায়নে একটি দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে উত্তরণ, উন্নতি ও প্রগতিতে আশা-আকাঙ্খা, প্রয়োজনীয়তা, বিদ্যমান সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কাঠামোগত সুযোগসুবিধা, নানামুখী শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকতা, ব্যপস্থাপনা, আন্তরিকতা ও ঐকান্তিকতার প্রকৃত ও যুগোপযোগী টেকসই সন্নিবেশ ঘটানো অপরিহার্য। পাঠ্যক্রমের প্রয়োজনীতা নির্ণয়ে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেবা গ্রহন বা প্রদানের লক্ষ্যে শেখার মানদন্ড নির্ধারণ ও এর বাস্তবায়নে সঠিক পন্থা ও নির্দেশনা স্থির করেই তবে কাঙ্খিত ও প্রত্যাশিত লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব।

ডক্টর শোয়াইব আহমেদ তাঁর আলোচনায় পড়াশুনার ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলা বা যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়া কিংবা খামখেয়ালীপনার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এর মধ্যে প্রধানতঃ তুলনামূলক ভাল শিক্ষক নিয়োগ, যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীর শেখার পরিমাণ, কতটুকু শেখা হলো তা মূল্যায়নের পদ্ধতি ও মানে ঘাটতি ইত্যাদির প্রতি জোর দিয়েছেন। তিনি কাঠামোগত ও মানের গ্রহনযোগ্যতার বিচারে যুগোপযোগী ও মানসম্মত অথচ যুতসই পাঠ্যক্রমের মানচিত্র বা কাঠামো সুচারুরূপে প্রণয়নের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন, যার মধ্যে বিশ্বায়ন বা আন্তর্জাতিকতাকে যাতে ধর্তব্যের মধ্যে গন্য করা হয়। বিদ্যার্থীদের জ্ঞানার্জন সম্প্রসারণে পাঠ্যক্রম বিষয়ক সিদ্ধান্ত সর্বত্র জ্ঞানভিত্তিক ও ডেইটা চালিত বা সমর্থিত হওয়া উচিত আর শিক্ষকদের কর্তাব্যক্তি না ভেবে নেতার মত আচরণ করতে হবে বলে তিনি মনে করছেন।

ডক্টর বি এম রাজ্জাক স্নাতকের পুরো অধ্যয়নকালে বিশেষ করে বাংলাদেশে ও একই সঙ্গে দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সপ্তায় গড়ে কত ঘণ্টা ও কি পরিমান পডাশুনা হয়ে থাকে তা নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা করেন এবং বড় পর্দায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে ইউকের স্নাতকের সঙ্গে এর তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে বিস্তর ফারাক প্রতীয়মান। যা দিয়ে সাধারণতঃ বিলেতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পৃথক পৃথকভাবে বা মান নির্ণয়কারী সংস্থাগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের স্নাতকের মানকে তাদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না সেটা বিবেচনা করে থাকে। যদিও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায় তা ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। তুলনামূলক চিত্র হিসেবে বৃটেনের হিসেব অনুযায়ী এখানে তিন বছরে পড়াশুনার ক্রেডিটের সংখ্যা বা পরিমাপের সাথে মিলিয়ে দেখলে তা বাংলাদেশের প্রায় দ্বিগুণ। যথাসম্মত মান বা ক্রেডিটের ক্ষেত্রে বৃটেনের তুলনায় দক্ষিন এশীয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে আর শ্রীলংকার সবার উপরে। বাংলাদেশে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের পাঠদান বিদ্যার্থীদের স্বীয় উদ্যোগে পঠনের তুলনায় সময় অনেক বেশী হয়ে থাকে যা বৃটেনের সঙ্গে তুলনা করলে একেবারে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যা কিনা আধুনিক বিশ্বের চাহিদানুযায়ী নিক্তির মাধ্যমে বিচার করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে শ্রীলংকা বেশ এগিয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ডক্টর রাজ্জাকের উপস্থাপনায় বৃটেনে অবাধ স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, সমাধানের সম্ভাব্য উপায় ও এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশে স্নাতকরা কিভাবে সময় ও আর্থিকসহ আরও অনেক দিক থেকে যে লাভবান হতে পারে সেগুলোও সুনির্দিষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। এতদসত্ত্বেও ভিন্নতাভেদে এ দেশের প্রায় চল্লিশ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়কে স্বীকৃতিদানে বাঁধ সাধে না। প্রশ্নোত্তর পর্বে অনেকের তরফে এমনটির সত্যতা প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদকদের একজন ডক্টর মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায়। তাঁর মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে পাঠদান ও শিখনে গুনগত মান নিয়ে হয়তো তারতম্য বা স্খলন হয়ে থাকতে পারে। রাষ্ট্রীয় বা আনুষ্ঠানিকভাবে দু দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে তদবির বা দেনদরবার অথবা পরস্পরকে রাজী করানোর সমূহ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি কারো কারো মন্তব্য বা সুপারিশে উঠে এসেছে।

এ পর্বে ঢাকা ইউভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্যা ইউকের বেশ ক’জন সদস্য ও অতিথিদের অনেকেই মুখ্য বক্তার বক্তৃতা ও আলোচকদ্বয়ের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্য ও প্রশ্ন করেছেন এবং তাঁরা এ মন্তব্যকে আমলে নেওয়াসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ সময় নানা ধরনের প্রস্তাবনার উল্লেখ করা হয়।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্যা ইউকের সভাপতি প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্থ তাঁর সমাপনী বক্তৃতায়   সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয় ও আলোচকদের আলোচনার উপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেন এবং সেমিনার থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনাকে সন্নিবেশিত করে তা সুপারিশ আকারে যথাযথভাবে যথাস্থানে পৌঁছে দেবার গুরুত্ব ও আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি কষ্ট করে এসে সেমিনারে বিশেষ অবদান রাখায় অতিথি বক্তা ও আলোচকদ্বয়সহ প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে সেমিনারে উপস্থিত হওয়া, অত্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে পুরো সময়টি ধরে সেমিনারের কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখা এবং মন্তব্য ও প্রশ্নের মাধ্যমে শেষ পর্বটিকে প্রাণবন্ত করার মাধ্যমে অবদান রাখার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া সেমিনারটির পরিকল্পনা, আয়োজন ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক এরিনা সিদ্দিকী এবং গবেষণা টিমের সব সদস্যকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি টানেন। এ টিমে যারা রয়েছেন, তারা হচ্ছেনঃ মেজবাহ উদ্দিন ইকো, সৈয়দ জাফর, সৈয়দ ইকবাল, এম কিউ হাসান, ডক্টর মোহাম্মদ কামরুল হাসান, মাহফুজা রহমান, ফকরুদ্দিন আহমেদ, শারমিন চৌধুরী ও খালেদ ইয়াহিয়া।

এখানে উল্লেখ্য যে দীর্ঘদিনের বাসনাপ্রসূত প্রতিপাদ্য এ বিষয়ে ভীষণ আগ্রহকে সেমিনার টিমের অনুমোদন সাপেক্ষে ও টিমের ঐকান্তিক সহযোগিতায় এরিনা সিদ্দিকী নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের গোড়াপত্তন করেন যেটির এ পর্যায়ের আশানুরূপ সমাপ্তি ঘটে ২৩শে ফেব্রুয়ারীতে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত করার মাধ্যমে।

অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে রাতের খাবারের মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন