যারা মিথ্যা ভরসা দেয় এবং যারা সবকিছুই অবলীলায় বিশ্বাস করে-
রাজু আহমেদ
যারা সবার সাথে তাল রেখে কথা বলে তারা ব্যক্তিত্বহীন। সুবিধার জন্য যারা দিন-রাতকে অদল বদল করে তাদের থেকে ন্যায্যতার আশা অর্থহীন। স্বার্থের জন্য যারা কথা ঘোরাতে পারে তাদের থেকে বিশ্বস্ততা আশা করা যায় না। বিশ্বাসভঙ্গ করে যারা সবার সাথে সুর মেলায় তারা সত্যের থেকে বহুদূরে অবস্থান করে। বুকের বিশ্বাসের সাথে যাদের মুখের কথার মিল নাই তারা যত নিচে নামতে পারে পানিও তত নিচে গড়ায় না! কিছু মানুষের আচরণ দেখলে, কথা শুনলে মনে হয়- মানুষ এমন দ্বিচারিতা পোষণ করে কেমনে এবং কোনখানে? মানুষকে মোকাবিলা করা কিংবা পরিস্থিতি সামলে নেওয়া নিঃসন্দেহে দক্ষতা কিন্তু বিশ্বাসের ঘোরবিরোধী অবস্থান নিয়ে পাল্টা পল্টি নেওয়া কেবল কতিপয় আশরাফুল মাখলুকাতের দ্বারাই সম্ভব!
কথায় চিড়ে না ভিজলেও মানুষ ভিজে! মিথ্যা আশ্বাসে মানুষ কী অবলীলায় গলে যায় তা যদি ল্যাবে ধারাবাহিকতায় পরীক্ষা করে দেখানো যেতো! যারা মিথ্যা ভরসা দেয় এবং যারা সবকিছুই অবলীলায় বিশ্বাস করে- সেখানে কার চেয়ে কে কত কম দায়ী? কথা দিলাম তো- প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভেসে যায় সংসার সমাজ। বাস্তবায়নের সংখ্যা গণনা করলে হতাশায় মুষড়ে পড়তে হয়। মানুষ যত মিথ্যা বলে, যত ফন্দি করে স্বার্থ হাসিল করে কিংবা যে হঠকারিতায় অন্যদের ঠকায় তা দেখে শয়তানও হাসে। শয়তান দ্বিধায় হাবুডুবু খেতে খেতে ভাবে- কে বড় শয়তান? আমি নাকি সে! আশা ভাঙতে ভাঙতে বাড়ছে দুঃখ। মানুষের থেকে উঠে যাচ্ছে বিশ্বাস।
মানুষের একজীবনে যত দুঃখ তা সে কোথা থেকে পেয়েছে? অপরিচিতজন কতটুকু দুঃখ দিতে পারে? সব দুঃখের কারণ কাছের মানুষ, আপন মানুষ। যাদের ওপর বিশ্বাস ছিল তারা যত্ন করেই আঘাত করেছে। মুখে যে কথা বলেছে মন সে কথা রাখেনি। চোখের ভাষার সাথে মুখের কথার মিল ছিল না। কোথাও লোভ ছিল। শান্তি পাওয়ার ক্ষুধা থাকলেও পরের মনকে শান্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। মানুষ কেবল নিজের পথ খুঁজেছে। একাই ভালো থাকতে চেয়েছে। তাই সে বাহারি প্রলোভন শুনিয়ে কেবল নিজের কার্যোদ্ধার করেছে। সাথে থাকা সঙ্গীরও যে ইচ্ছা-অনিচ্ছা আছে তা মূল্যায়ন হয়নি। বন্ধুত্বের বন্ধন ব্যবহার হয়েছে সুবিধা আদায়ে!
যারা বারবার বিশ্বাসে অমর্যাদা করে তাদেরকে কতবার বিশ্বাস করা যায়? যারা সমস্যায় পড়লে সাহায্য প্রার্থনা করে এবং প্রয়োজন ফুরালে পালিয়ে যায় তাদেরকে কতখানি আপন ভাবা যায়? মানুষকে আসলে এই জীবনে অনেক কিছু দেখতে হয়। শিখতে হয় এবং অভিজ্ঞতা পেতে হয় আরও। সহ্য করতে হয় বাহারি রঙ-তামাশা। এসবের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুপ থেকে মেনে নিতে হয়। কথা রাখবে না জেনেও মুখের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে কৃতজ্ঞতা দেখাতে হয়। ভালো মানুষ চেনার জন্য এক মুহূর্ত সময় লাগে। কিন্তু বর্ণচোরাদের চিনতে জীবন ফুরিয়ে যায়। তবুও মন ধরা যায় না! যে বলে এক, করে আরেক- তাদের মুখের সামনে যে মুখোশ থাকে তা ভেদ করে আসল মানুষের দেখা পাওয়া হয় না।
মানুষ দুঃখ-সুখের যোগফল। আমায় আমার ভালো রাখতে সেক্রিফাইজ যেমন লাগবে তেমনি কোথাও কোথাও লাগবে দৃঢ়চেতা থাকার অভিপ্রায়। কেউ ঠকাতে আসলে তাকে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল রপ্ত করতে হবে। নয়তো জীবনযুদ্ধ কঠিনতম হবে। জীবন সংগ্রামে পরাজিত প্রাণ হলে কেউ মূল্যায়ন করবে না। কাজেই হাল ছেড়ো না বন্ধু। আর মানুষকে গ্রহণ করো বিশ্বস্ততার পরশ পাথরে পরখ করে। জীবনে কম মানুষ থাকলেও ভালো মানুষ থাকুক। ভালো মানুষ পেতে হলে সবার আগে নিজেকেই ভালো হিসেবে গড়তে হবে। পাত্র ভালো হলে তেল/পানি ভালো থাকতে বাধ্য। তবে সবসময় পাত্রের পবিত্রতার দোহাই নয়। মাঝে মাঝে তেলের বিশুদ্ধতাও মেপে নিতে হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন