জীবন, মৃত্যু এবং অবশিষ্ট কীর্তি

gbn

একজীবনে মানুষ অসংখ্যবার সুযোগ পায় অথচ শোধরায় খুব অল্পই। 

রাজু আহমেদ  ||

আমার যে বন্ধু, আমাদের যে পরিচিত জুনিয়র কিংবা সমবয়সি এবং আমাদের যে সহকর্মী মৃত্যুবরণ করেছে, আমরা যেন তার/তাদের মৃত্যু থেকে শিখি। গড় আয়ু ৭২.৩ বছর মানে আমি অন্তত ৭২.৩ বছর বাঁচবো- এমন আশা যাতে ভুলেও না করি। আজই পরপারে চলে যেতে পারি, কাউকে বলেও যেতে পারবো না হয়ত- এই বিশ্বাস নিয়ে যাতে হাঁটি, কথা বলি এবং কাজ করি। মরে যাওয়ার পরেও আমার রেখে যাওয়া কিছু ভালো কাজ যাতে থাকে। আমি যে নাই- এই কথা স্মরণ করে যাতে মানুষ ক্ষণিকের জন্য থামে, আমাকে নিয়ে একটুখানি ভাবে। কেউ যদি আমার জন্য গোপনে দোয়া করে, প্রকাশ্যে প্রশংসা করে- তবে জীবদ্দশাকে সার্থক ও সফল বলা চলে।

ন্যায়ের সাথে থাকা, নীতিতে অবিচল বাঁচা এবং সত্য কথা বলা- জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার হোক। এটুকু নিশ্চিত- আজ অথবা কাল প্রত্যেককেই গন্তব্যে ফিরে যেতে হবে। দুনিয়া মানুষের আসল ঠিকানা। মরণ একদিন মুছে দেবে সকল রঙিন পরিচয়। যে শিশু এখনো জন্মগ্রহণ করেনি তারও আগমন ঘটবে এবং বিদায় নেবে। মানুষ চিরস্থায়ী না হলেও তার কাজ চিরস্থায়ী। ক্ষমতা, সম্পদ চিরস্থায়ী না হলেও আমলের উপকার চিরস্থায়ী। মানুষ জানার পরেও ভুল করে, সম্পদ এবং ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়- একদিন অনুশোচনা জাগবে। যেদিন মনে হবে কাজটি না করলেও পারতাম,  কথাটি না বললেও হতো কিংবা সে পথে না হাঁটলেই ভালো হতো- সেদিন আর প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ থাকবে না। একজীবনে মানুষ অসংখ্যবার সুযোগ পায় অথচ শোধরায় খুব অল্পই। 

 

তওবার সুযোগও অনুরূপ। যখন আর শুধরে যাওয়ার সুযোগ ও সময় থাকে না বরং মৃত্যু মুখোমুখি হয় তখন তওবা নিরর্থক। কথা দিয়ে কথা না রাখা, আমানতের খেয়ানত করা এবং অন্যের ওপর জুলুম চাপিয়ে দেওয়া- একদিন ভয়ংকর আফসোসে পরিণত হবে। আয়ুর ঠিকঠিকানা নাই। প্রত্যেকটি কথা, প্রতিটি কাজ ও সকল পদক্ষেপের হিসাব থাকা উচিত। জীবনে ঠকেছি- এট সৌভাগ্যের বিষয়। ঠকা মানেই সেটার বিনিময় ভিন্নভাবে আসবে। কিন্তু কাউকে ঠকিয়েছি?- নিজের কপালে নিজেই কুঠারাঘাত করেছি। কাউকে ঠকানো, কষ্ট দেওয়া মানে নিজের আমলনামা থেকে ভালো আমল তাদের আমলনামায় যুক্ত করে দেওয়া। কারো অধিকার হরণ করা, কাউকে বঞ্চিত করা কিংবা কারো ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করা মানে- অজান্তেই আজীবন তাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাওয়া। সম্পদ কমে গেলে দুঃখ করা উচিত নয় কিন্তু আমলের উপকার কাটা যাওয়া মানে পরকালে নিঃস্ব হওয়া।

 

কত সুন্দর একটা জীবনচিত্র দুনিয়ার সামনে উপস্থাপন করে যাওয়া সম্ভব- সেটা কখনো কি ভেবেছি? কেবল কারো ক্ষতির কারণ না হওয়া মানুষ বোঁটায় সদ্য ফোঁটা ফুলে মতন। সেই মানুষটি কৃতজ্ঞ ও বিনত থাকবে- এটা ফুলের সুগন্ধি। মানুষটি সত্য কথা বলবে, সহজ-সরল জীবন যাপন করবে এবং ন্যায়ের পথে চলবে- এটা ফুলের সৌন্দর্য। সেই মানুষ ধর্ম-কর্ম করবে- এটা ফুলের স্থায়িত্ব। মানুষ এমন হলে সেই মানুষ নামক ফুলটির সুবাস ও সৌন্দর্য পৃথিবীর দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে। ফেরেশতাগণ সে ফুলের জন্য দোয়া করবে। স্বয়ং প্রভু সেই ফুলকে বরণ করতে ব্যাকুল হবে। যারা সামনে নিশ্চিত মৃত্যু দেখেও ভুল পথে চলে, শয়তানের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের আত্মোপলব্ধি হওয়া উচিত। না সম্পদ, না ক্ষমতা- কিছুই উপকারে আসবে না যদি কর্ম ভালো না হয়। মানুষ পাছে যা রেখে যাবে, যেভাবে রেখে যাবে- নিঃসন্দেহে সেসবের কর্মফল ভোগ করতে হবে। 

 

যারা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল, যারা বলেছিলেন আমারে চিনোস, আমি কেডা?- তাদের একজনেরও আজ অস্তিত্ব নাই। মাটিও তাদের মাংস-হাড়ের স্বাদ ভুলে গেছে। যারা মৃত্যুর দিকে অগ্রগামী হয়েছে, যারা চলে গেছে চিরদিনের জন্য- তাদের কীর্তি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। কেউ বাঁচতে পারবে না, কেউ না- কেন অহংকার জন্মায়? কেন অহেতুক গর্ব করি? বিদ্যা-বুদ্ধি ক্ষতির কারণ হবে যদি তা ভালো কাজে ব্যবহার না করি। আমির এবং ফকির, দাস এবং প্রভু- মৃত্যু কাউকে দু-দণ্ড বেশি সুযোগ দেয়নি। শৈশবের খেলার সাথি, তারুণ্যের সহপাঠী কিংবা যৌবনের সহকর্মী- অনেকেই আমাদের মাঝে নাই। হারিয়ে গেছে মৃত্যু নামক মহাসত্যের অতল গহ্বরে। তুমি, আমি এবং আমরাও যাবো। প্রস্তুতি না নিলেও সফর শুরু করতে হবে। ইচ্ছা না থাকলেও বসে থাকা যাবে না। কারো রেহাই নাই, কারোরই মুক্তি নাই। যেন স্মরণ রাখি রবের সামনে দাঁড়ানোর দিবসকে। যে ভয় করি জাহান্নামকে। কর্মই মানুষের পরিণামের ফয়সালা করবে।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন