ক্ষমা করো আছিয়া। আমরা অনেকেই ফেরাউন; মূসা না! আছিয়া, তুমি জান্নাতের সর্বত্র নির্বিঘ্নে বিচরণ করো
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক। |
ফেরাউনে ভরা দুনিয়ায় আছিয়ারা কোনোদিনই নিরাপত্তা পাবে না। আমাদের আছিয়া চলে যাওয়ার আগে কী অভিশাপ দিয়ে গেলো? আট বছরের মাধুরিলতা কতগুলো হায়েনার নৃশংসতা দেখে গেলো। ওপারে কত কিছু নালিশ করতে চলে গেলো! তবে আছিয়াদের নিরাপত্তায় কেউ মূসার ভূমিকা গ্রহণ করলে- খুব ভালো হতো। আছিয়ারা যাতে জন্মায়, নিরাপদে বেড়ে ওঠে এবং সুন্দর দুনিয়া পায়- তার জন্য দায়িত্ব কাদের?
আমরা আছিয়াকে সহসাই ভুলে যাবো? আছিয়ার ধর্ষণ আলোচিত কাজেই যা হোক একটা বিচার হবে এবং দ্রুতই হবে। এতেই কি দায়িত্ব শেষ? আচ্ছা, আমি বারবার আছিয়ার কথা বলছি কেন? যে পাষণ্ডরা আছিয়াকে বাঁচতে দিল না, ঘটালো নৃশংস পাশবিকতা- তারা এবং তাদের মনোভাব পোষণকারীরা কী কেবল আছিয়ার বোনের শ্বশুরবাড়িতেই বাস করে? কীভাবে আমাদের প্রত্যেকটি আছিয়া নিরাপত্তা পাবে, ফেরাউনগুলো দমন হবে এবং মূসারা দায়িত্ব নেবে- সেসবের রূপরেখা এবং নিরাপত্তার নিয়ম রেখা কোথায় রাখা?
আছিয়া মরে গিয়ে বরং বেঁচে গেছে। আছিয়া যদি সত্যি সত্যি বেঁচে যেতো তবে আমরা মরে যেতাম! দুদিনেই আছিয়ার ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংসতা ভুলে গিয়ে আছিয়াকেই দোষী করতাম। এই সমাজে, আমরা ধর্ষকের দোষ দেখি না! ধর্ষিতা কী কী কারণে ধর্ষণ হলো সেগুলো খুঁজে বের করি। ভূক্তভোগীর দিকে ইশারায় তাকাই। অথচ দায়ীকে একবারও বকা দেই না। বরং একটা সময় উল্টো ফতোয়া চালু হয়। পোশাকের দায় দেই, শরীরের ওপর দোষ চালিয়ে দেই কিংবা বয়সের দিকে দোষ চাপিয়ে দেই। অথচ ধর্ষকের বিরুদ্ধে যে জোরদার ঘৃণা চালানো উচিত, বাড়ানো উচিত শাস্তির সীমারেখা- সেটা আমরা করি না। শেষমেশ ধর্ষিতাকে পরিবারসুদ্ধ পালিয়ে বেড়াতে হয়। আছিয়া সেটা বুঝেই জীবন থেকে পালিয়ে গেছে। আমরা বোধহয় বেঁচে গেছি! তবে বোধ বেচে!
স্মরণকালের মধ্যে আছিয়াকে ধর্ষণ ঘিরে সারাদেশ বেশি উত্তাল হয়েছিল। সাধারণত সরকারের নড়েচড়ে বসার পিছনে জনতার নড়াচড়া প্রভাব রাখে। আছিয়া ছাড়াও সম্প্রতি আরও অনেকগুলো ধর্ষণের খবর কাগজে এসেছে। প্রায় প্রত্যেকটির ঘটনার আসামী গ্রেফতার হয়েছে। এতেই সমাধান? শিশু নারী ধর্ষিতা হবে এবং ধর্ষক পাকড়াও হবে- এটা মোটেও সদর্থক ন্যায়বিচার নয়। বরং ধর্ষণের মতো অপরাধে যাতে কেউ না জড়ায় তার জন্য কঠোর ও কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গ্রহণ করা খুব জরুরি।
আমরা কোন শপথে এবং কী কী ওয়াদা করে তারপর আছিয়াকে কবরে শুইয়েছি? মর্সিয়া আর ক্রন্দনেই মানুষের দায়িত্ব শেষ? দিন দুয়েক পরে ভুলে যাবো আছিয়াকে? আমরা সেটা যাবই। অতীত বলছে, এটা ঘটবেই। আবার কোনো নতুন আছিয়ার খবর শুনে আমরা সামান্য ব্যথা পাবো। দিন দুয়েকের আন্দোলন, দুই ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন এবং নিজের মা, বোন, স্ত্রী এবং কন্যার নিরাপত্তা ভেবে একটুখানি উদ্বেগ- এইতো আমাদের দায়িত্ব। আমরা এই পর্যায়েই আটকে আছি। আমরা আছিয়াকে ভুলে যেতে পারি কিন্তু তার দেওয়া অভিশাপ ততদিন তাড়িয়ে বেড়াবে যতদিন ন্যায় বিচার নিশ্চিত না হবে।
ক্ষমা করো আছিয়া। আমরা অনেকেই ফেরাউন; মূসা না! আছিয়া, তুমি জান্নাতের সর্বত্র নির্বিঘ্নে বিচরণ করো। সেখানে কোনো ধর্ষক নাই। ও আমাদের ফুল, আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করে যেও না। আমাদের পাপ বেড়েছে। সামষ্টিক শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠেছি। কত আর বাকি বিগতদের ভাগ্য বরণ করতে? আমরা আজন্মকাল প্রতিক্রিয়াশীল থেকে গেলাম অথচ প্রতিরোধ রয়ে গেলাম ব্যর্থ। অপরাধের লাগাম কি সত্যিই রুখবে না?

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন