টিউলিপের বিরুদ্ধে জাল সই ব্যবহার করে বোনের নামে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের অভিযোগ

gbn

শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক তার বোনের নামে ঢাকার গুলশানে একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তরের জন্য জাল সই ব্যবহার করেছিলেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্তকারীরা বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক অবৈধভাবে ওই ফ্ল্যাটটি অধিগ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সন্তান এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের জন্য রাষ্ট্রীয় জমি বরাদ্দের বিষয়ে চলমান তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

 

তদন্ত অনুযায়ী, টিউলিপ তার বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর কাছে ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর করেন, যাতে তিনি পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের আওতায় ১০ কাঠা (৭,২৬০ বর্গফুট) জমি পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারের জমি বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী, এই প্রকল্পে আবেদনকারীর ঢাকায় কোনো জমি বা বাড়ি থাকা চলবে না।

আরও পড়ুন>>

 

দুদক আরও দাবি করেছে, ২০১৫ সাল থেকে টিউলিপ সিদ্দিক তার আয়কর নথিতে এই সম্পত্তির তথ্য গোপন রেখেছিলেন।

জাল নোটারি স্বাক্ষরের অভিযোগ

এই সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য ইসলামী আইনের অধীনে ‘হেবা’ দলিল ব্যবহার করা হয়, যেখানে টিউলিপ সিদ্দিককে দাতা এবং তার বোন রূপন্তীকে গ্রহীতা হিসেবে দেখানো হয়। দলিলে বলা হয়, ২০১৫ সালের জুন মাসে গুলশান মডেল টাউনের দ্বিতীয় তলার ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা ও পার্কিং স্পেস তিনি স্বেচ্ছায় তার বোনকে দিচ্ছেন।

ওই দলিলে নোটারি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। গাজী সিরাজুল ইসলাম স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমি এই দলিল কখনো নোটারি করিনি। এতে থাকা সই আমার সইয়ের সঙ্গে মেলে না। আমি টিউলিপ কিংবা তার বোনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিও না।

 

দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানান, গুলশানের ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা থাকার কারণে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীও পূর্বাচলের প্লটের জন্য যোগ্য ছিলেন না।

‘নিয়ম এড়াতে রূপন্তী আনুষ্ঠানিকভাবে মালিকানা গ্রহণ না করেই ফ্ল্যাটের দখল নেন, যাতে তার প্লট বরাদ্দ প্রশ্নবিদ্ধ না হয়,’ বলেন দুদক চেয়ারম্যান।

দুদক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতে এই অভিযোগ উত্থাপন করবে, যা বিচারিক অনুমোদনের পর মামলায় রূপ নেবে।

 

শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত

দুদক দাবি করেছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে ৬০ কাঠা (৪৩,৫৬০ বর্গফুট) জমি অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একাধিক তদন্ত চলছে, যার মধ্যে বেশ কিছু মামলায় টিউলিপ সিদ্দিকের নামও রয়েছে।

সবচেয়ে গুরুতর মামলাগুলোর একটি হলো রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তি থেকে প্রায় ৪০০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ। এতে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান ড. মোমেন বলেন, এটি বড় দুর্নীতির একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। চলমান তদন্তে শেখ হাসিনা ও তার আত্মীয়দের আর্থিক অনিয়মের প্রকৃত মাত্রা উন্মোচিত হবে।

 

গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন বলে জানা যায়।

টিউলিপ সিদ্দিকের বক্তব্য

টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। তিনি দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’–এর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর, বিশেষ করে লন্ডনে তার মালিকানাধীন কিছু সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন টিউলিপ। সম্পত্তিগুলো শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল।

টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এসব অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। তার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগও করা হয়নি এবং তিনি সম্পূর্ণভাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

 

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন