চাকুরি: স্বনির্ভরতার মোহ, স্বাধীনতার বিলয়!

gbn

সম্মান ও ক্ষমতা?- চাকরগণ তাদের বুদ্ধি, শক্তি ও শিক্ষা অনুযায়ী নির্ধারণ করে নিয়েছে

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।  

চাকুরি মানে চাকর-ই। সহজ ভাষায়, সাধ্য বিক্রি সাধ পূরণ করা। কেউ-ই শখে চাকুরি করে না! বাধ্য হয়। বাঁচার তাগিদে নিজেকেই বেচে দেয়। যেহেতু গোলামি সেহেতু গোলামদেরও স্তরভেদ আছে। বড় গোলাম, মাঝারি গোলাম এবং ছোট গোলাম। আয়েরও পার্থক্য আছে, কাজের ভিন্নতাও আছে। তবে গৌরবে ছোট চাকর, বড় চাকর বলে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া আর বেশি তফাত নাই। 

 

সম্মান ও ক্ষমতা?- চাকরগণ তাদের বুদ্ধি, শক্তি ও শিক্ষা অনুযায়ী নির্ধারণ করে নিয়েছে। তবে কেউ-ই ভাগ্যকে অতিক্রম করতে পারেনি। স্বাধীনতা বিক্রি করলে তবেই একজন পাক্কা চাকুরিজীবী হওয়া যায়। বাংলাদেশের কোনো চাকুরের চাকুরি কৈফিয়তের ঊর্ধ্বে নয়। ছোট মাথাগুলো বড় মাথার কাছে চিরকাল ঠেকা থাকে। এভাবেই চলতে থাকে। 

 

'তোমার চেয়ে আমি বড় চাকর'- এই কথা বলার মধ্যে খুব বেশি গর্ব নাই। বড়লোক আর ভালো লোকের মাঝে বিস্তর পার্থক্য আছে। চাকুরি স্বনির্ভরতা দিলেও স্বাধীনতা দেয় না। সবার আয়ের উৎস কেবল বেতন নয়! বেতনে চললে অনেকের বাড়ি-গাড়ি হওয়ার কথা নয়। শান-শওকতে থাকারও কথা নয়। এসব প্রশ্ন জনসম্মুখে করা যায় না। কোন পদের কত বেতন তা সবার সামনে দিনের আলোর মত স্পষ্ট! কিন্তু সেই বেতনে চাকুরি করে কার কত টাকা আয়, কত সঞ্চয়- তা কোনোদিন জানা যায় না। শয়তানি ধরা পড়লে কতিপয় শয়তানের কারসাজি বোঝা যায়! 

 

তুমি ছোট চাকুরি করো- এমন খোঁটা কেবল স্বভাবের ছোটলোক দিতে পারে। একজীবনের একসময়ে একাধিক চাকুরি করার বৈধ সুযোগ কারো নাই। স্বাধীনতা বিক্রির মানে দায়িত্ব পালন, নৈতিকতা পোষণ এবং সততাকে ধারণ। কয়জনে এসব কথা মানে? ক'জনই বা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে? বৈধ বেতনে তো ভালোভাবে মাস ফুরানোর কথা নয়! অথচ দেশে তাদেরও সম্পদের পাহাড় আছে, বিদেশেও বাড়ি-ঘর ওঠে! 

 

বৈধ পন্থায় জীবন যাপন করলে পেনশনে যাওয়ার পূর্বে অনেকেরই কিছুই হওয়ার কথা নয়। অথচ কত নবিশের কতকিছু আছে! কত খবিশের সম্পদের গোপন পাহাড়-পর্বত জমেছে। ঘর আছে, পর আছে এবং গোপনেও আছে! চারপাশে দেখা তো! কিছু জিজ্ঞেস করলে, বলতে গেলে আর খাতির থাকে না। এই জীবনে মানুষের সাথে খাতির না থাকলে চলা দায়! 

 

কারো লাভ-লোভের অসুস্থতা দেখলে সম্পদের প্রতি লোভ যে হয় না- তা তো নয়! সামলাতে অনেকেরই কষ্ট হয়। মনের বিরুদ্ধে জিহাদ মোটেও সামান্য নয়।  নিজেকে বিক্রি করেছি মানে বিবেক বিক্রি করা যাবে না। লোকে সামনে কিছু না বলুক- আড়ালে তো অনেক কথাই বলে। যখন কারো সম্পর্কে ভালো কিছু বলে সেটা দোয়া। যখন খারাপ কিছু বলে সেটা অভিযোগ-অভিশাপ। 

 

দোয়া এবং বদদোয়া- কোনোটাই ইচ্ছা করে করা লাগে না। মনের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি থেকে আপনা-আপনি আসে। আসল কথা তো বলাই হলো না। যারা ভাবে, আড়ালে কথা বললে কিছু যায়-আসে না—তারা বোঝে না, অনেক কিছুই যায়! সবচেয়ে বেশি অসম্মান। যা দ্রুত ছড়ায়।  

 

মানুষ যা আয় করে সেখান থেকে কতটুকু খেতে পারে? একজীবনে ভোগ করতে পারে কতখানি? যে প্রকৃতার্থে বড়, সে কখনোই ছোটদের ছোট বলে না! যে প্রকৃতার্থে মানুষ সে কখনোই বড়কে সম্মান-শ্রদ্ধা করতে ভুলে না। যে জীবন দুনিয়ায় অন্যের, ওপারে মালিকের- সে জীবনকে ঠিকঠাকভাবে দেখে রাখাই তো মানুষের দায়িত্ব। 

 

ভালো চাকুরি কিংবা খারাপ চাকুরি- মানুষ কখনোই ভাগ্যকে অতিক্রম করতে পারে না। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কত লোক বেকারত্বে ভুগছে। যেখানেই থাকা হোক, যেভাবেই ভাবা হোক- দায়িত্ব এড়িয়ে না গেলেই হলো। কাউকে না ঠকালে, অন্যায়ভাবে কাউকে ব্যথা না দিলে কিংবা কাউকে বাজে কথা না শোনালে- নিজেকে নিয়ে আত্মতৃপ্ত থাকা যায়। মানুষ হওয়ার চেষ্টা আমরা যাতে গুটি গুটি পায় এগিয়ে যাই- রোজ এগিয়ে যাই।

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন