জিবি নিউজ প্রতিনিধি//
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারদের সাথে নিয়ে ইফতার আয়োজন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রর্বি) কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব’। এতে শাবি ক্যাম্পাসের একমাত্র শহীদ রুদ্র সেনসহ চারটি শহীদ পরিবারকে আমন্ত্রণ করা হয়।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় শাবি প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে শাবি প্রেসক্লাবের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। ইফতার পরবর্তী সময়ে শহীদ পরিবারদের নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিচারণ করেন এবং শহীদদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।
শাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি জুবায়েদুল হক রবিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ শুভ'র সঞ্চালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেটের সাংবাদিক শহীদ আবু তাহের মো. তোরাব'র ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ জাবুর, শহীদ মোস্তাক আহমেদের মাতা মায়া বেগম ও শহীদ ওয়াসিম আহমদের বাবা মো. কনর মিয়া। এছাড়াও শহীদদের স্ত্রী, ভাইসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শহীদ ওয়াসিমের পিতা কনর মিয়া বলেন, ‘আমার সন্তান শহীদ হয়েছে। আমরা সঠিক বিচার চাই। দেশের মানুষের ভালোর জন্য সে তার জীবন উৎসর্গ করেছে। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। কিন্তু আমার আফসোস, আমার ছেলে শহীদ হয়েছে কিন্তু এরপর কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না ঠিকমতো। আমাদের কষ্ট কেউ দেখছে না।’
শহীদ আবু তাহের মো. তোরাবের ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ জাবুর বলেন, ‘আমার ভাইয়ের শরীরে ৯৮ টি রাবার বুলেট আর ১০টি গুলি পাওয়া গেছে বলে ময়না তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি। আমার ভাইয়ের জানাজায় যেন লোকজন যেতে না পারে তারা এতেও বাঁধা দেয়। উন্মুক্ত জায়গায় যেন জানাজা না দিতে পারি সেক্ষেত্রেও তারা বাঁধা দেয়। এমনকি তারা মাইকিং করতেও দেয়নি। সেসময় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আমরা জানাজা সম্পন্ন করতে পেরেছি। তারা আমার ভাইকে হত্যার মামলা নেয়নি। আমাদের নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। আমার পরিবারের সদস্যরা যারা দেশের বাইরে ছিল তারা আমার মৃত ভাইয়ের মুখটি পর্যন্ত দেখতে পারে নি। গত ১৯ আগস্ট আমরা কোর্টে মামলা করেছি। আমরা ন্যায় বিচার পাবো বলে আশা করছি।’
শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি জুবায়েদুল হক রবিন বলেন, ‘যে বৈষম্য দূর করার জন্য প্রাণ দিয়েছেন দেশের অসংখ্য মানুষ, তাদের হত্যার বিচার দীর্ঘায়িত করে তাদের সাথেই যেন বৈষম্য না হয় আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। দেশের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছেন, তারা নিজেদের কথা চিন্তা করেননি, নিজেদের পরিবারের কথা চিন্তা করেন নি। আমরা তাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।’
উল্লেখ্য, শহীদ রুদ্র সেন ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর সুরমা আবাসিক এলাকায় পুলিশের ধাওয়ায় খালে ডুবে মারা যান। শহীদ সাংবাদিক আবু তাহের মো. তোরাব ১৯ জুলাই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সিলেট নগরীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার ফতেহপুর গ্রামের মাস্টার আব্দুর রহীমের ছেলে। শহীদ ওয়াসিম আহমদ ১৯ জুলাই দুপুর তিনটার দিকে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে মারা যান। তিনি সেখানে একটি মুরগির দোকানে কাজ করতেন। তার বাড়ি সিলেটের জালালাবাদ থানার ইনাতাবাদ গ্রামে। শহীদ মোস্তাক আহমদ হবিগঞ্জে পুলিশের গুলিতে মারা যান। তিনি কারেন্টের কাজ করতেন। তার বাড়ি সিলেটের জালালাবাদ থানার টুকেরবাজারের গৌরিপুর গ্রামে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন