২-৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার আশংকা করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধি ||    ১ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে করোনায় ৬ কোটি ৩৫ লাখ আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১৪ লাখ ৭০ হাজারের মতো মানুষ মারা গেছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৩৮ লাখ এবং মারা গেছেন ২ লাখ ৭০ হাজার। করোনার এই অবিশ্বাস্য সংক্রমণ এবং মৃত্যু সম্পর্কে অনেকটা হলফ করে কিছু বলা যায় না। কোনো ঝাঁড়-ফুক-তন্ত্র-মন্ত্রই যুক্তরাষ্ট্রে করোনার বিস্তার ও মৃত্যু ঠেকাতে পারছে না। আর প্রতিদিন করোনার দ্রুত সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বরেণ্য কয়েকজন চিকিৎসকের মতো জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক ড. যোনাথান রীনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ৮ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন ৪ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিক নয়। আর ইমার্জেন্সি মেডিসিনের চিকিৎসক এবং জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর ড. লীনা ওয়েন বলেন, করোনার ব্যাপারে হেলফলা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। সহসাই আমরা চরম দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি। সম্ভবত ৯ বা ১০ ডিসেম্বর থেকে আমেরিকায় প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি, এমনকি ৩ থেকে ৪ হাজার লোকের করোনায় প্রাণহানির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।  জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে গত ২৭ নভেম্বর আমেরিকায় ২ লাখ ৫ হাজার আক্রান্ত, প্রায় দেড় হাজার মারা গেছেন। ২৮, ২৯ এবং ৩০ নভেম্বর প্রত্যহ গড়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার আক্রান্ত, প্রায় দেড় হাজার করে মারা গেছেন এবং হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছে ৯৪ হাজার। একই সূত্রানুসার শুধুমাত্র নভেম্বরে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে লস এঞ্জেলেস কাউন্টি ৩০ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্টে অ্যাট হোম (ঘরে থাকুন) আদেশ কার্যকর করেছে। এ ছাড়াও কাউন্টির স্বাস্থ্য বিভাগ ৩০ নভেম্বর থেকে পরিবারের সদস্য ভিন্ন বহিরাগতদের নিয়ে সকল পাবলিক এবং প্রাইভেট সমাবেশ ৩ সপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ করেছে।  রোড আইল্যান্ডের প্রেস সেক্রেটারি অড্রি লুকাস জানান যে হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা অতিক্রম করায় নতুনভাবে করোনা আক্রান্তদের ২ টি ফিল্ড হাসপাতালে রাখা হচ্ছে। নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ৫ টি নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছেন। এখন থেকে সারা স্টেটে টেস্টিং জোরদার করা হবে। ভ্যাক্সিন ডিস্ট্রিবিউশনের উপর কাজ করা হবে। নিরাপদে বিদ্যালয় খোলা অব্যাহত রাখা হবে। তবে অরেঞ্জ এবং রেড জোনের আওতাধীন সাপ্তাহিক টেস্টিং কার্যকর করা হবে। প্রাইভেট সমাবেশে ১০ জনের বেশি অংশ নিতে পারবে না। কুমো বলেন, আমাদের বিশ্বাস আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন বিতরণের কাজ শুরু হবে। ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন পরিকল্পনা নিয়ে সহগামী গভর্নরদের সাথে আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন। তবে ক্যমো জানান, শুরুতে বড় ধরনের ডিস্ট্রিবিউশনের আশা করা দুরাশার শামিল।  কুমো বলেন, ব্লাক ও ব্রাউন কমিউনিটি এবং নিম্ন আয়ের কমিউনিটিগুলোতেও টেস্টিং জোরদার করা হবে। নিউইয়র্কে এখন করোনা পজিটিভের হার ৪.৫%।   অন্যদিকে থ্যাঙ্কসগিভিং পরবর্তী টেস্টিং জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিও। পেনসিলভেনিয়ার হেলথ সেক্রেটারি ড. রাচেল লেভিন জানান, গত ৩০ নভেম্বর সাড়ে ৪ হাজার নতুন করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  মাস্কের ব্যবহার অপরিহার্য : করোনা ভাইরাসের অকল্পনীয় দ্রুত গতিতে সংক্রমণ এবং ব্যাপক বিস্তার ঠেকানোর মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করা। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতা করোনা বিস্তার সম্পর্কে তদন্তকারী দলের সদস্য ড. সঞ্জয় দ্য আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব ফিজিকস অ্যাফার্মের ফ্লুইডস জার্নালে উল্লেখ করেন, কমপক্ষে ৭০% বিশ্ববাসী নিশ্চিতভাবে মাস্ক ব্যবহার করলে করোনার দ্রুত ও ব্যাপক বিস্তার প্রতিহত করা সম্ভব। অন্যদিকে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, গত ১৯ দিন ধরে আমেরিকায় গড়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক লোক নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।   আর সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের অ্যাডভাইজরি কমিটি ফর ইমিউনাইজেশন প্র্যাকটিসের পরিচালক ড. জোসে রোমেরো জানিয়েছেন, ফাইজার অ্যান্ড বায়নটেকের করোনা ভ্যাকসিনের অথারাইজেশনের ব্যাপারে ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আর ৩০ নভেম্বর মডার্নার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের অথারাইজেশনের জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কোম্পানির চীফ মেডিক্যাল অফিসার ড. টাল জাকস মডার্নার ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন হবে মূলত টাইপিক্যাল। ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন ও স্টোরেজের জন্য কোনো বিশেষ বাহনের প্রয়োজন হবে না। মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করতে হবে।  এইচএইচ সেক্রেটারি আশাবাদ : এদিকে হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস সেক্রেটারি আলেক্স আজার আশাবাদ প্রকাশ করেছেন যে ক্রিসমাসের পূর্বেই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বাজারে আসবে। হোয়াইট হাউসের জেমস ব্রাডি প্রেস ব্রিফিং কক্ষ থেকে সিবিএস দিস মর্নিংকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর ফাইজার অ্যান্ড বায়নটেকের আর ১২ ডিসেম্বর মডার্নার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সম্পর্কে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন