ফিলিস্তিনের শহীদ শিশু, বৃদ্ধ ও নারীগণ কি আল্লাহর কাছে দুনিয়াবাসীর নামে নালিশ করেছে?
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
ভাইয়ের বিপদে যে ভাই চুপ থাকে, ভাইয়ের শত্রুর বিচার করার আগে তাকে পাকড়াও করা হবে। শিয়া না সুন্নি, আরবি না অনারবি—এই বিভেদে যারা মুসলিম ভাইয়ের রক্তকে শত্রুর হাতে হালাল হতে দিল, খোদার কসম, তাদের মুক্তি নেই।
ইসরায়েলিদের জিজ্ঞেস করার আগে বসে বসে তামাশা দেখা আরবদের আল্লাহ আগে জিজ্ঞেস করবেন। এই যে চুপ থাকা, স্বার্থ বজায় রেখে কথা বলা—এজন্য মুসলিমদের আখেরাতের সুযোগ কর্তিত হচ্ছে। জান্নাত খালি পড়ে থাকবে, তবু মুসলিম ভাইয়ের রক্তের হোলি খেলায় যারা নীরব-নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকায় ছিল, তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।
আল্লাহর দরবারে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দু’হাত তুলে ২০০ কোটি মুসলিম কী বলে দোয়া করে? যে হাতে তলোয়ার থাকার কথা, সে হাতে তসবিহ গুণতে লজ্জা হয় না? ওই হাত, ওই মুখ এবং ওই মন নিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে কি অন্তর কাঁদে না? কোথায় সেই ঈমানি জজবা? কোথায় সেই ইসলামী তেজ?
সিংহের মতো এক মুহূর্ত বাঁচার মধ্যে বাহাদুরি আছে। বিড়ালের মতো ১০০ বছর ভীরু ও কাপুরুষদের জীবন ধারণ করার আশা শুধুই লজ্জাজনক। মুসলিম মায়েরা যদি ফিলিস্তিনের ফুলগুলোর মতো বারুদ জন্ম দিতেন, তবে এতোদিনে ইসরায়েলের হায়েনারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।
৫০০ বছর পরে যখন মানুষ ফিলিস্তিনের ইতিহাস পড়বে, তখন এই সময়ে বেঁচে থাকা মুসলমানদেরকে ছিঃ ছিঃ বলে থুতু নিক্ষেপ করবে। ইসলামি রাষ্ট্রগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য চুপ করে আছে। অথচ আহাম্মক শাসকরা জানে না—দানবের কবল থেকে কারোরই মুক্তি নেই। ফিলিস্তিন প্রথম প্রতিপক্ষ; পর্যায়ক্রমে একে একে সবার ধ্বংস অনিবার্য।
মুসলিম যুবকদের ঈমানি তেজ কোথা থেকে আসবে? কী আছে তাদের কাছে? না আছে প্রযুক্তি, না আছে একত্ববাদের প্রতি একচ্ছত্র বিশ্বাস। একদিকে তারা আল্লাহকে ডাকে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের নিধনকারী দেশগুলোর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। শুধু নামেই মুসলিম—আসলে আরব বিশ্বের ইসলামিক দাবিদারদের মাঝে প্রকৃত ইসলামের কিছুই নেই।
চুপ থাকার জন্য, নিরবে দেখার জন্য আল্লাহর কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। ফিলিস্তিনিদের হত্যাকারীরা যে মাত্রায় দোষী, অন্যায় সহ্য করা ও অবিচারের প্রতিবাদ না করায় ক্ষতিগ্রস্তের ভাইও সমান পাপী। আরব বিশ্বের এই নীরবতা দেখে সন্দেহ হয়—ওমর-আলীর রক্তের স্রোত কি এখনও ইরান-তুরানের মুসলিমদের শরীরে বইছে?
নিজেদের ভূমিতে সৌদি-সিরিয়া, তুরস্ক-দামেস্ক কিংবা লিবিয়া-মিশর এমন কাপুরুষোচিত ভূমিকায় কেন? কোন আত্মগ্লানিতে এমন নির্লিপ্ত আত্মসমর্পণ?
ফিলিস্তিনের শহীদ শিশু, বৃদ্ধ ও নারীগণ কি আল্লাহর কাছে দুনিয়াবাসীর নামে নালিশ করেছে? আসামির কাঠগড়ায় কী কৈফিয়ত দেব? মুসলিমদের ঘিরে রক্তের হোলি খেলায় মুসলমানদের সারাজীবন খেসারত দিতে হবে? আল্লাহর কাছে বিচার চাওয়ার দুঃসাহস করি না। কাপুরুষ জাতির পক্ষে আল্লাহর মদদ আছে কি না—সেটাও সাংঘাতিক সন্দেহের বিষয়।
হে আল্লাহ, ফিলিস্তিনের জমিনে কিছুই তো অবশিষ্ট নেই। আমাদের বিচার করো, ইয়া রব। এই দুনিয়াতেই তোমার বিচার দেখাও।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন