বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কিংবা অসম্মান—এসবের ঘাত-প্রতিঘাতে হৃদয়ে পাথরচাপা পড়তে শুরু করে
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
কেউ কারও সঙ্গে কঠোর আচরণ করলে কেবল কঠোরতা প্রদর্শনকারীকেই এককভাবে দায় দেওয়া ঠিক নয়। প্রত্যেক মানুষ কোমল হৃদয় নিয়ে জন্মায়। একদিনে, প্রথম দেখায় কিংবা সবার জন্য কেউ সমানভাবে কঠোরতা দেখায় না, দেখাতে পারে না। তবে মানুষ কঠোর হয় কেন? সাধ্য থাকলেও অনেক সময় এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ‘না’ বলে দেওয়ার পরিস্থিতি বা পরিবেশ একেবারেই তৈরি হয় না।
অনেকেই চলার, থাকার এবং জানার মানুষের কারণে কঠোরতা প্রদর্শন করে। ভালোবেসে যে বঞ্চনা পেয়েছে, প্রতারিত হয়েছে—তার বিশ্বাস আর সর্বসাধারণের বিশ্বাস একরকম থাকে না। বারবার আঘাত পেতে পেতে যখন আর সহ্য করতে পারে না, তখন হৃদয় বাধ্য হয়ে কঠোরতার পথ বেছে নেয়।
বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কিংবা অসম্মান—এসবের ঘাত-প্রতিঘাতে হৃদয়ে পাথরচাপা পড়তে শুরু করে। তবে মনের কঠোর হয়ে ওঠার প্রধান কারণ উপেক্ষা।
মানুষ যখন তার কাছের, মনের এবং ভরসার মানুষ দ্বারা অবহেলিত হয়, অনাদরে পড়ে কিংবা উপেক্ষিত হয়—তখনই সেই সম্পর্ক থেকে মন উঠে যেতে থাকে। মানুষের দেওয়া আঘাতে হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হলে মানুষ নিজেকে রক্ষার জন্য, নতুন করে না ঠকার জন্য এবং মনের দুর্বলতা গোপন রাখতে বাধ্য হয় কঠোর হতে।
অবশ্য কেউ কেউ নিজের দুর্বলতা ঢাকতে, অপরাধ লুকাতে কিংবা ক্ষমতা দেখাতেও কঠোর আচরণ করে।
যাদের জন্য একসময় কাজ করা হতো ভালোবেসে, ঝাঁপিয়ে পড়া যেতো বিপদের সময়, কিংবা যাদের জন্য জীবন দেওয়া যেত—তাদের থেকে দূরে থাকার বা এড়িয়ে চলার পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয় না। স্বার্থপরতার অভিযোগ কেবল একপাক্ষিক আচরণে গঠিত নয়।
যার অভিজ্ঞতা যত তিক্ত, তার কঠোরতার মাত্রাও তত প্রবল। একবার কঠোর হয়ে যাওয়া হৃদয়কে গলানো কিংবা বিশ্বাস করানো খুব সহজ কাজ নয়—তাতে লাগে উঠেপড়ে যত্ন। অথচ মানুষ এখন মানুষের মনের যত্নে প্রতিদিন পিছিয়ে যাচ্ছে।
মানুষ মানুষের জন্য সহজ-সরল এবং সাধারণ থাকবে—এটাই কাম্য। তবে আমাদের সমাজব্যবস্থায়ও ত্রুটি আছে, যা পূর্বতনরা তাদের সুবিধার জন্য সৃষ্টি করেছে। এখানে কেউ সরল থাকলে তাকে চরমভাবে শোষণ করা হয়, কেউ আবেগ না দেখালে—নীতির পক্ষে দাঁড়ালে—তাকে পাষাণ বলা হয়।
তবুও ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও মানসিক উন্নয়নে সারল্যই সবচেয়ে জরুরি। মানুষ যেন মানুষের সঙ্গে কথা বলে তৃপ্তি পায়, আচরণে শুদ্ধতা থাকে এবং বিশ্বাসে একে অন্যকে জড়িয়ে রাখে।
কঠিনতার চেয়ে সরলতার শোভাই বেশি। সৌন্দর্যের যে মাত্রায় মানুষ মহৎপ্রাণ হয়ে ওঠে, তা যেন প্রত্যেকেই অর্জন করতে পারে—এই প্রত্যাশা।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন