প্রত্যেকটি ধ্বংস একেকটি কিয়ামত

gbn

মানুষ ধর্মের প্রতি সহজাতভাবে আকৃষ্ট। এই অনুরাগ যদি আলেমদের বেপরোয়া বক্তব্যে আহত হয়

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক।  

মিথ্যুক রাখাল বালকের গল্পে যেমন শেষমেশ বাঘ সত্যি এসেছিল, তেমনি কিয়ামতও একদিন এসে মানুষের সামনে বাস্তবে উপস্থিত হবে। দিন-তারিখে কিছু আলেমের অনুমান হয়তো মিলেও যেতে পারে কিন্তু তখন মানুষ আর তা বিশ্বাস করবে না। কেননা কিছু আলেমের কর্মকাণ্ডে গোটা এলেমি সমাজই তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।

 

সম্ভবত সেই দিনগুলোতে আলেমদের একাংশ ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সাধারণ মানুষকে জানাতে উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু অতীতে দাঈদের এক শ্রেণির আচরণ ও বক্তব্য এতটাই বিভ্রান্তিকর ছিল যে, মানুষ তখন আর কিছুই মন দিয়ে শুনবে না। বরং তখন প্রমাণ হয়ে যাবে—নযুগের পর যুগ জান্নাতের লোভ দেখিয়ে গরিবকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, পরকালীন ফয়সালার ব্যানার তুলে ইহজাগতিক অসংখ্য অন্যায়কে অমীমাংসিত রেখে দেওয়া হয়েছে এবং শোষিতকে অবহেলায় রেখে শোষকরা ধন-প্রাচুর্যের চূড়ায় আরাম-আয়েশে অবস্থান করেছে।

 

তবে কিয়ামত মানে কি কেবল একটি নির্দিষ্ট মহামুহূর্তের বিস্ফোরণ? মধ্যপ্রাচ্যের এক প্রখ্যাত লেখকের লেখা পড়েছিলাম—লেখক ও বইয়ের নাম এই মুহূর্তে স্মরণ করতে পারছি না। তিনি বলেছিলেন, পৃথিবীর সর্বত্র একসঙ্গে কিয়ামত আসবে এমন ভাবনায় আবদ্ধ না থাকলেও চলে। যেখানে যখন কোনো জনগোষ্ঠী ধ্বংস হয়, সেটাই তাদের জন্য কিয়ামত। ধরা যাক, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে যেসব মানুষ প্রাণ হারিয়েছে—তাদের কাছে তো সেটাই ছিল কিয়ামত। ফিলিস্তিনে যা ঘটছে তা কিয়ামতের বিভৎসতার চেয়ে কম কিছু? এমন ভাবনার বিরুদ্ধে মতবিরোধ থাকতেই পারে, বিশেষত আলেমসমাজে। কিন্তু যদি বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে ভাবা যায়, তবে এই ব্যাখ্যাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ারও সুযোগ নেই।

 

আলেমদের সংযত ভাষা আজ সময়ের দাবি। হাদিস ব্যাখ্যা ও বর্ণনার ক্ষেত্রে যদি শানে-উরুদ না জানা থাকে, সহিহ কিংবা জাল হাদিস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকে, তাহকীকের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন না করা হয়— তাহলে এ বিষয়ে নীরব থাকাই ইসলাম ও মানবজাতির জন্য অধিক কল্যাণকর। এটাই ইসলামের মৌলিক সৌন্দর্যের প্রতিফলন।

 

মানুষ ধর্মের প্রতি সহজাতভাবে আকৃষ্ট। এই অনুরাগ যদি আলেমদের বেপরোয়া বক্তব্যে আহত হয়, তবে ধর্মবিমুখতা ও বিদ্বেষ জন্ম নেবে— আর সেটাই হচ্ছে আজকের ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। অথচ আলেমদের কাজ হওয়া উচিত হিকমাহ বা প্রজ্ঞার সঙ্গে ইসলামের সারাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং ধর্মকে যাপিত জীবনে প্রাসঙ্গিক করে তোলা। মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ভয় দেখিয়ে ধর্মের ভাবমূর্তি যতবার কালিমালিপ্ত হয়েছে, ততবার জনসাধারণের বিশ্বাসের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ তো ইসলামকে কৌতুকের বস্তুতে পরিণত করতেও কুণ্ঠাবোধ করছে না।

 

বিরুদ্ধ মত অকল্যাণকর নয়, তবে প্রাসঙ্গিকতা জরুরি। পার্থক্য থাকা দোষের কিছু নয়। কিন্তু কোন ডায়াসে তা বলা হচ্ছে, শ্রোতারা কারা— এই বিষয়গুলো ভাবা প্রয়োজন। দাজ্জাল, মাহদী ও ঈসা (আ.)-র আগমন এবং কিয়ামতের বিশ্বাস ইসলামি আকিদার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেহেতু কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো বার্তা পাননি কিংবা পেলেও তা স্পষ্ট করেননি এবং নিজেও তা নির্ধারণ করেননি, সেহেতু নবীগণের উত্তরসূরিদেরও এমন কিছু বলা উচিত নয় যা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াপনার প্রমাণ দেয়।

 

হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে আমরা শেষ জমানার দিকে এগোচ্ছি— এই কথা বহু শতাব্দী ধরে বলা হচ্ছে। তবে তাই বলে পৃথিবী আরও হাজার বছর টিকে থাকবে না— এ কথা বলার নির্ভরযোগ্য কোনো ভিত্তি নেই। সুতরাং আশাহত হয়ে বসে থাকার বদলে আশাবাদী হওয়াই ভালো। এই বসুমতিতে যেন আরও সহস্র প্রজন্ম চাষ করে, বাঁচে, স্বপ্ন দেখে—আমাদের প্রার্থনায় সেই সম্ভাবনাটাই থাকুক। বসুমতি হোক আরও সহস্র প্রজন্মের ধারক ও বাহক।

 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন