বড়দের কাছে পহেলা বৈশাখ মানেই শৈশবের দিনগুলোতে ফিরে যাওয়া। জামা-কাপড়, খাবার, হৈহুলোড়, হালখাতা এরকমের কত শত বৈশাখের স্মৃতি রয়েছেন সবার জীবনে। টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীরও রয়েছে এমন দারুণ দারুণ স্মৃতি।
শৈশবের পহেলা বৈশাখের স্মৃতিচারণ করে মিমি বলেন, ‘মা ছোটবেলায় বলতেন, নতুন বছরে তুমি যা করবে, সারাবছর সেরকমই চলবে। তাই কাজ দিয়ে শুরু করাটাই আমার মনে হয়, সবথেকে ভালো। আর কাজ মানেই আমার কাছে “হ্যাপি প্লেস”।’
এবারের পয়লা বৈশাখের কি করছেন জানতে চাইলে মিমি বলেন, ‘আমার “রক্তবীজ ২”র শুটিং রয়েছে। সেটেও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। নববর্ষে খাওয়াদাওয়া আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পয়লা বৈশাখ বলে নয়, আমি বরাবরের খাদ্যরসিক। কিন্তু যেদিন থেকে নিরামিশাষী হয়ে গিয়েছি, সেদিন থেকে অবশ্য আমার খুব একটা খাওয়া হয় না। অগত্যা মিষ্টিটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। নতুন বছরের শুরুটা হোক মিষ্টি দিয়েই। বছরভর মিষ্টি কাটুক, এই কামনা রাখি। আমি যেহেতু পোলাও খেতে খুব ভালোবাসি। তাই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বাড়িতে পোলাও রান্না হবে।’
এছাড়া প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে মিমিদের বাড়িতে পূজা হয়। ছোটবেলা থেকেই সেই রীতি দেখে আসছেন এ অভিনেত্রী। এ প্রসঙ্গে মিমি বলেন, ‘এদিন আমাদের বাড়ির সব ঠাকুররাও নতুন জামাকাপড় পরেন। শুধু নিজেরাই নতুন পোশাক পরলেই হবে? এছাড়াও মৌসুমের প্রথম ফল ওনাকেই উৎসর্গ করা হয়। সারাবছর কাজের সূত্রে তো সকলের তেমন একসঙ্গে হওয়া হয় না। তাই পয়লা বৈশাখে সবাই একজোট হওয়ার চেষ্টা করি। আমার অবশ্য এবছর সারারাত শুটিং রয়েছে। আর এদিন তো নতুন জামাকাপড় পরা মাস্ট! আমাদের বাড়িতে নববর্ষ উপলক্ষে একটা চল রয়েছে। সেটা হল একে-অপরকে উপহার দেওয়া। বিশেষ করে, যাদের হয়তো এই উৎসব, অনুষ্ঠানের দিনে নতুন জামাকাপড় কেনার সামর্থ নেই, তাদের জন্যই কেনাকাটাটা হয় বেশি। ছোটবেলা থেকে বাড়িতে মা-বাবাকে এই রীতি পালন করতে দেখে এসেছি। আমিও সেটাই করি। আমার নানাভাই বলতেন- শুধু নিজে খুশি থাকলেই হয় না। অন্যকে খুশি রাখাটাও একটা দায়িত্ব।’
শৈশবের স্মৃতির পাতা থেকে মিমি বলেন, ‘মনে পড়ে, ছোটবেলায় জলপাইগুড়িতে এই দিনটায় মা-বাবার সঙ্গে হালখাতা করতে যেতাম। এছাড়াও সারাদিনটা সব আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে হইহই করে কাটত। নানি আমাদের সবাইকে নতুন জামা দিতেন। আর ওই নতুন জামা পরেই পূজায় বসতাম। আমার মামার যেহেতু নিজের হোলসেল মুদিখানার দোকান রয়েছে। কাজেই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পূজা হত। তাই সকাল সকাল মামার দোকানে পৌঁছে যেতাম। আমার দায়িত্ব ছিল, তরমুজ কাটা। কখনো কখনো আবার ফলফলারি সাজিয়ে রাখা। আর যত মিষ্টি আসত, সেগুলো প্যাকেট করার দায়িত্ব পড়ত আমার আর নানা ভাইয়ের উপর। বাক্সে দেওয়ার আগে অবশ্য বেশিরভাগ নিজেই খেয়ে ফেলতাম!’
নতুন বছরের বর্ষপঞ্জি সংগ্রহ করা ছিল মিমির ভীষণ শখের কাজ। সেই কথা উল্লেখ করে মিমি বলেন, ‘আমি ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করতাম। কে কতগুলো সংগ্রহ করলাম, সেটা রীতিমতো প্রতিযোগিতা হত। মনে পড়ে, হলুদ রঙের প্যাকেটে রকমারি লাড্ডু, দরবেশ আসত। রাত্রিবেলা ভাইবোনরা জড়ো হয়ে দেখতাম কে, কতগুলো, কোন লাড্ডু সংগ্রহ করতে পারল। দারুণ মজার স্মৃতি। আশেপাশের গ্রাম থেকে আমন্ত্রিত অনেকে আসতেন। পহেলা বৈশাখে কেউ যেন মিষ্টিমুখ না করে যান, সেদিকটা বরাবর নজরে থাকত বাড়ির বড়দের। নতুন বছর সবার ভালো কাটুক, এটাই প্রত্যাশা করছি।’
জিবি নিউজ24ডেস্ক//

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন