নিউইয়র্কে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা বয়কটের আহ্বান

gbn

নিউইয়র্ক: আগামী ১৯ ও ২০ এপ্রিল নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে ‘বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা’ অনুষ্ঠিত হতে যচ্ছে। এই মেলার মূল আয়োজক বিশ্বজিৎ সাহা সহ মেলা নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে মেলাটি বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নিউইয়র্ক-এর ব্যানারে শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। খবর ইউএনএ’র।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নিউইয়র্ক-এর অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী এবং জেবিবিএ’র সভাপতি গিয়াস আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আরেক সমন্বয়ক কাজী মোহাম্মদ হাসান সিদ্দিকী। বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক দেলোয়ার হোসেন শিপন, ফাহাদ হোসেন প্রমুখ।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনের দাবীর সাথে একাত্ততা প্রকাশ করে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক নিউইয়র্ক সময় সম্পাদক ও আইবিটিভি’র সিইও জাকারিয়া মাসুদ জিকো, সাংবাদিক ফরিদ আলম, যুক্তরাষ্ট্র জাগপা’র সভাপতি এ এস এম রহমতউল্লাহ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ।  
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহ আমরা নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করছি যে, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশ ও প্রবাসে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। এরই অংশ হিসেবে নিউইয়র্ক ভিত্তিক দেশের অর্থ পাচারকারী একটি সিন্ডিকেট আগামী ১৯ ও ২০ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে রেমিট্যান্স মেলা আয়োজন করছে। পতিত ফ্যাসিবাদের চিহ্নিত দোসর, নামসর্বস্ব ভুঁইফোড় সংগঠনের বিতর্কিত ব্যক্তিদের উদ্যোগে আয়োজিত তথাকথিত এই রেমিট্যান্স মেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, ডেপুটি গভর্নর ড. মোঃ হাবিবুর রহমান ও পরিচালক মনোয়ার উদ্দীন আহমেদ অংশগ্রহণ করছেন বলে জানা গেছে। গভর্নর প্রধান অতিথি হিসেবে এই মেলা উদ্বোধন করতে ১৮ এপ্রিল নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। এছাড়া মেলায় উপস্থিত থাকবেন, বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একঝাঁক চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শীর্ষ কর্মকর্তা। এমন সংবাদে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে প্রবাসীদের মাঝে। সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন এই প্রচেষ্টা রুখে দেওয়ার।
অন্তবর্তীকালীন সরকার কাজ করছে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং দেশ থেকে নতুন করে অর্থপাচার বন্ধ করতে। সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে ফ্যাসিবাদী আমলে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে নিতে। এসময়েও দেশ বিদেশে ঘাপটি মেরে থাকা দেশের লুটেরারা নানাভাবে ফন্দি আঁটছে নতুন করে দেশ থেকে অর্থ পাচারের। আমরা মনে  করি, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর এদের খপ্পড়ে পড়েছেন। হাটছেন ফ্যাসিবাদী আমলের বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আতিউর রহমানের পথে। নিউইয়র্কে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় এক ডজন রেমিট্যান্স হাউজ রয়েছে। তাদের একটি সংগঠনও সক্রিয়। এই সংগঠনকে পাশ কাটিয়ে আয়োজকদের সম্পর্কে অবহিত না হয়ে নিজেদেরকে বিতর্কিত করছেন বাংলাদেশের ব্যাংক কর্মকর্তাগণ।
আওয়ামী স্বৈরশাসনামলে সুবিধাভোগী বিশ্বজিৎ সাহার ইউএসএ বাংলাদেশ বিজনেস লিঙ্ক ও মুক্তধারা নিউইয়র্ক এই মেলার মূল আয়োজক। যদিও বাংলাদেশ-ইউএসএ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিইউসিআই) এবং ইউএসএ বাংলাদেশ বিজনেস লিঙ্কের নামে নিউইয়র্কের অখ্যাত দু’টি সংগঠনকে আয়োজক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে বিশ্বজিৎ সাহা প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী ঘরানার সক্রিয় কতিপয় বুদ্ধিজীবী ও অ্যাক্টিভিষ্টদের ব্যবহার করেন ঢাল হিসেবে নিজের অসদুদ্দেশ্যকে আড়াল করার জন্য। আয়োজকরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বেসরকারি খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের অর্থ। এই মেলার মূল আয়োজক বিশ্বজিৎ সাহার সিন্ডিকেটের সাথে বিগত দেড় দশকে জড়িয়ে পড়েন দেশের এক শ্রেনির লুটেরা ও অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তা। বছরে একাধিকবার বিশ্বজিৎ এর এসব মেলার আড়ালে চলতো বড় ধরণের অর্থ পাচার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান বরাবরই ছিলেন মেলার প্রধান অতিথি। এবারো একই কায়দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গর্ভনর ডঃ আহসান এইচ মনসুরকে করা হয়েছে প্রধান অতিথি। সাধারণ প্রবাসীদের সাথে নূন্যতম কোন সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তি বিশ্বজিৎ সাহার মেলায় তাদের অংশগ্রহণ কার স্বার্থে? প্রশ্ন উঠেছে এখনো কিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক গর্ভনর এমন দায়িত্বহীন কর্মকান্ডে জড়াচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়: স্বৈরাচারের শীর্ষ পর্যায়ে অবাধ বিচরণকারী বিশ্বজিৎ সাহা গত বছরের অক্টোবর মাসে ম্যানহাটানে মেলা প্রাঙ্গণে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছবি নিজ হাতে সরিয়ে ফেলেন। এর আগে সাবেক সরকার প্রধানকে খুশী করতে ‘শেখ মুজিব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বিশ্বজিৎ। এর মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের সান্নিধ্যে চলে যান তিনি। রেমিট্যান্স মেলার উসিলায় বিশ্বজিৎ সখ্যতা গড়ে তুলেন শেখ হাসিনার অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাথে। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও থেমে নেই বিশ্বজিৎ সাহার এসব প্রতারণাপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন। এজন্য তিনি যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে।
সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ নেই তার কোন অনুষ্ঠানেই। বিশ্বজিৎ সাহা দীর্ঘ তিন দশক যাবত মুক্তধারা বইমেলার নামে করে আসছেন বিভিন্ন ধরনের ‘প্রতারণা ও আদম ব্যবসা’। অবৈধভাবে মুক্তধারার নাম ব্যবহার করার কারণে বাংলাদেশে মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে।  রোড শো, রেমিট্যান্স ফেয়ার, ট্রেড ফেয়ারের নামে গত ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে যে সব সমাবেশ হয়েছে কোনোটি থেকেই বাংলাদেশ লাভবান হয়নি। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র পুত্রের নাম ভাঙিয়েছেন বিশ্বজিৎ সাহা। প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রশ্ন অন্তবর্তী সরকারের অভ্যন্তরে থেকে কারা এসব প্রতারণামূলক কর্মকান্ডে সহযোগিতা করছে বিশ্বজিৎ সাহাকে?
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক গর্ভনরের এমন বিতর্কিত কর্মকান্ডের প্রতিবাদ এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট আহ্বান জানাই, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে দেশের স্বার্থপরিপন্থি এসব কর্মকান্ডে যারা সম্পৃক্ত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার।
উল্লেখ্য, উল্লেখিত সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা’র প্রধান আয়োজক বিশ্বজিৎ সাহার বক্তব্য জানতে তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমন কি তার ফোনের ভয়েস ম্যাসেজ রাখা হলেও তিনি এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (শনিবার মধ্যরাত) তিনি যোগাযোগ করেননি।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন