নিজাম এম রহমান FRSA || GBNEWS24 ||
বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারায় এমন কিছু মানুষ সামনে আসেন, যাঁদের নেতৃত্ব, দূরদৃষ্টি এবং নিষ্ঠা জাতিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম। আজ আমরা তুলে ধরছি একজন ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্বকে—জনাব আশিক চৌধুরী—যাঁর বহুমাত্রিক জীবন, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং দেশপ্রেম আজকের ও আগামী দিনের বাংলাদেশকে আলোকিত করতে পারে।
⸻
শৈশব ও শিক্ষা জীবন
জনাব আশিক চৌধুরীর জন্ম চাঁদপুরে, এবং শৈশব কেটেছে যশোরে। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সম্মানিত পাইলট, যার অনুপ্রেরণায় শৃঙ্খলা ও সাহসের চেতনা গড়ে ওঠে তাঁর মধ্যে। তিনি পড়াশোনা করেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে, যেখানে নেতৃত্বের বীজ রোপিত হয়।
এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (IBA) থেকে ফিনান্স ও ইকোনমিক্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চশিক্ষায় তিনি যান লন্ডন বিজনেস স্কুলে, যেখানে ফিনান্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এর পাশাপাশি তিনি অর্জন করেন চার্টার্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (CFA) সার্টিফিকেট—যা বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতে পেশাগত উৎকর্ষের প্রতীক।
⸻
আন্তর্জাতিক পেশাগত অভিজ্ঞতা
জনাব চৌধুরীর পেশাগত জীবন শুরু হয় ২০০৭ সালে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো-তে। এরপর তিনি যোগ দেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-এ, যেখানে তিনি ঋণ নীতিমালা ও আর্থিক কৌশল নিয়ে কাজ করেন।
পরবর্তীতে তিনি আমেরিকান এয়ারলাইন্স (লন্ডন)-এ ইউরোপ ও এশিয়ার ফিনান্স প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এরপর তিনি এইচএসবিসি-তে বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুরে কাজ করেন, যেখানে তিনি অবকাঠামোগত ও টেকসই অর্থায়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
এই অভিজ্ঞতা তাঁকে শুধু দক্ষ আর্থিক কৌশলী করে তোলে না—তাঁকে গড়ে তোলে একজন বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন নেতৃত্ব হিসেবে।
⸻
দেশে ফেরা ও জনসেবা
২০২৪ সালে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর আমন্ত্রণে তিনি দেশে ফেরেন। এরপর তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (BEZA)-এর মাননীয় নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে।
এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি বেসরকারি খাত থেকে উঠে এসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়—যেখানে দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও দূরদৃষ্টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তাঁকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা প্রদান করে সরকার, যা তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি।
⸻
তাঁর ভিশন: টেকসই উন্নয়নের নীলনকশা
জনাব চৌধুরীর নেতৃত্বে তিনি যে বাংলাদেশ দেখতে চান, তা ভিত্তি পায় চারটি স্তম্ভে: • বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণ—দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্বচ্ছ ও দ্রুত ব্যবস্থা। • অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিস্তার—যা কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। • সবুজ ও টেকসই অর্থায়ন—জলবায়ু সম্মত প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে মনোযোগ। • ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন—যাতে সহজে ব্যবসা পরিচালনা সম্ভব হয়।
তিনি বিশ্বাস করেন, এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজেকে বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
⸻
ব্যক্তিগত অর্জন: আকাশ ছোঁয়া দৃষ্টান্ত
২০২৪ সালের ২৫ মে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসিতে ৪১,৭৯৫ ফুট উচ্চতা থেকে স্কাইডাইভ করেন, হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। এই অভূতপূর্ব ঘটনার মাধ্যমে তিনি অর্জন করেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড—পতাকা হাতে বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে ফ্রি-ফল।
এটি ছিল এক সাহসী দেশপ্রেমের প্রতীক—একটি বার্তা, “বাংলাদেশ শুধু মাটিতে নয়, আকাশেও গর্ব নিয়ে ওড়ে।”
তিনি একজন যুক্তরাজ্যপ্রাপ্ত লাইসেন্সধারী পাইলট, যা তাঁর শৃঙ্খলা ও বহুমাত্রিক জীবনের পরিচয় বহন করে।
⸻
ব্যক্তিগত জীবন
জনাব চৌধুরীর সহধর্মিণী মিসেস নাবিলা জাবীন খান একজন আইবিএ গ্র্যাজুয়েট এবং প্রতিষ্ঠিত পেশাজীবী। তাঁদের একটি পুত্র ও একটি কন্যা রয়েছে। তিনি পরিবারকে নিজের সাফল্যের প্রেরণা ও শক্তির মূল উৎস হিসেবে বিবেচনা করেন।
⸻
উপসংহার
জনাব আশিক চৌধুরী একাধারে একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদ, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কৌশলী, একজন সাহসী দেশপ্রেমিক, এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাতাদের অন্যতম।
তাঁর কর্ম, দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবদান প্রমাণ করে যে—বাংলাদেশ এখন এমন এক নেতৃত্ব পেয়েছে, যিনি ভবিষ্যৎ তৈরি করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁর মতো মানুষের হাতেই বাংলাদেশ হতে পারে একটি উদ্ভাবনী, টেকসই ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন