মন্দ কিছু করার চিন্তা করতে দেরি কিন্তু সেখানে গ্রেফতার হতে বিলম্ব হয় না
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
কাশ্মীর বর্তমান বিশ্বের সম্ভবত সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য তথা সেনা বেষ্টিত স্থান। সংখ্যার বিচার ও সেনা জনতার আনুপাতিক হিসাবে দুইয়ের নিচে কোনোভাবেই যাবে না। একটা খেলনা বন্দুক নিয়েও আপনি সেখানে বড়জোর ঘন্টা দুয়েক লুকিয়ে চলতে পারবেন। সম্ভবত সেখানে ১৫ জন নাগরিকের জন্য একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা। তাদের তল্লাসি চৌকি এবং চোখ ফাঁকি দেওয়া অত সহজ নয়।
মন্দ কিছু করার চিন্তা করতে দেরি কিন্তু সেখানে গ্রেফতার হতে বিলম্ব হয় না। অথচ সেখানে আতঙ্কবাদীরা এত অস্ত্রশস্ত্র, আরডিএক্স বোমা এবং অন্যান এতকিছু নিয়ে গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিয়ে সফল হামলা চালালো কীভাবে? সন্দেহ হয় না? তবে সন্দেহের চেয়েও মৃতদেহগুলো বিশ্ব বিবেকের সামনে আরও প্যাথেটিক বাস্তবতা।
মৃতদের তালিকা দেখুন। সাধারণ পর্যটকদের সংখ্যা খুব কম। সরকারি অফিসার, গোয়েন্দা দলেরর সদস্য, নৌবাহিনীর সদস্য এবং বিদেশী পর্যটক- ইতালি এবং ইসরাইলের নাগরিক- সন্দেহ দানা বাঁধে না? মাত্র একজন স্থানীয় নাগরিক, সে আবার মুসলমান। ২৬ লাশের বিপক্ষে দুইশত ষাট লাশ পড়লে নাকি এ আগুন নিভবে- স্বয়ং শুভেন্দুর ঘোষণা।
সংশয়বাদীরা বলছে, পরিবর্তিত ওয়াকফ আইন টিকিয়ে রাখতে প্রাণ দিতে হলো ২৮ জন নিরীহ ভারতীয়কে। সবখানে পাপের কাফফারা আদায় করতে হয় নির্দোষ মানুষকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লাশের সারি যে কত দীর্ঘ হবে তা স্রষ্টা জানে! কী নির্মমভাবে সাধারণ মানুষকে হতাহত করা হলো। ধিক্কার ও নিন্দা জানাই এমন বর্বরতাকে। মানুষের দয়ামায়া এভাবে কমে গেলো কীরুপে?
জঙ্গিদের টার্গেট কখনোই সাধারণ মানুষ নয়। জঙ্গিদের সব সময় টার্গেট থাকে সামরিক স্থাপনা ও সামরিক বাহিনী। মোদিজী যখন সৌদিতে ঠিক তখন হামলা হলো কাশ্মীরে। সহমর্মিতা জানায় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ইজরায়েল। পাশে আছি সে কথা দৃঢ়ভাবে জানায় ট্রাম্প। অথচ এই ত্রয়ীর হাতে সবচেয়ে বেশি রক্ত লেগে আছে। প্রত্যেকটি নিরীহ প্রাণের জন্য মানুষের প্রাণ কাঁদে। যাদের জিহ্বায় প্রতিবেশীদের রক্তের স্রোত তাদের মায়াকান্না দেখলে সন্দেহ আরও প্রবল হয়।
ট্রাম্প গাজায় বিশ্রামাগার নির্মানের স্বপ্ন দেখেছিলেন অতীতে। এবার তবে কাশ্মীরে হবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় রিসোর্ট? মুসলিম নিধনের আরেকটি ব্যাটেল গ্রাউন্ড সম্পূর্ণ প্রস্তুত? হিটলারও ন্যাৎসীদের চোখে ছিল শান্তিবাদী দেবতা। ফ্যাসিস্টদের কাছে মুসোলিনী ছিলেন ঈশ্বর। খুনীরাও খুন হওয়াদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েই হত্যা করে। পৃথিবীর বুক এখন বুলেটের কাছে রোজ বিদ্ধ হচ্ছে। পৃথিবীর বৃন্ত থেকে খসে পড়ছে অগণিত প্রাণ।
পৃথিবীর প্রত্যেকটা হত্যা নিন্দনীয়। সবচেয়ে দাগী আসামীরও ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। মৃত্যু পথযাত্রীর জানা উচিত- তার মরণের কারণ। দায়ীদের ধরে ধরে বিচার হোক। প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হোক। সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নাই, জাত নাই কিংবা দেশও নাই। জিহাদিস্টরা এতোটা বেকুব না যে হিন্দু ধর্ম জিজ্ঞেস করে, কালেমা শুনে তারপর হত্যা করবে। এসব আরও পঞ্চাশ বছর পূর্বে মানাতো।
'খান'রা সব সময় সন্ত্রাসী। পৃথিবীবাসী গুজরাটের কসাইকে, খুনী নেতানিয়াহুকে, রক্তচোষা বুশকে একবারও সন্ত্রাসী বলবে না। অতীতে কখনোই বলেনি। ভারতে এবার ভয়ঙ্কর ধর্মীয় দাঙ্গা হওয়ার শঙ্কা আছে। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে উঠলেও পাল্টাপাল্টি হামলা হবে না। এখানে দুদেশই চরম চতুর। মুখের যুদ্ধ বাকবিতন্ডা পর্যন্তই। ভারতে আরও আরও মসজিদ গুঁড়ানো হবে, হামলা হবে ওয়াকফ এস্টেটে। জীবন যাবে আরও কতিপয় ভারতীয়দের। রক্তস্নাত হবে রাজপথ। পৃথিবীর সর্বত্রই সংখ্যালঘুরা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এটা সারাবিশ্বে সংক্রমিত হবে। কাউকে খুনী সন্ত্রাসী ঘোষণা করা যত সহজ, প্রমাণ করা তত সহজ নয়। সন্দেহের শত্রু সত্যকে তাড়িয়ে বেড়াবে। পাশের রাষ্ট্র পাকিস্তান ও চীন আছে- তাই দায় দেওয়া যাবে। কাউকে দায় চাপিয়ে দিলেই বাহবা মিলবে। লাশের হিসাব মিলবে না কখনোই।
দশকের পর দশক কাশ্মীরীদের সাথে যা হয়েছে তার প্রত্যেকটাই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। স্বাধীন মানুষকে এমনভাবে শৃঙ্খলায়িত করে রাখলে তাদের বুকে বিদ্রোহের বারুদ জ্বলে ওঠা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় বইছে রক্তের নহর। কাউকে লোভ পেয়ে বসলে সভ্যতা তাকে মুক্ত করতে পারে না। কাশ্মীর পৃথিবীর ভূস্বর্গ হয়েও কারাগারের ভাগ্য বরণ করেই সামনে যাবে। গাজার পরে মানবিক বিশ্বকে কাশ্মীরের জন্য কাঁদতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন