ড. ইউনূস কোনো গতানুগতিক সরকার পদ্ধতি নয়
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
কাতারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এলএনজি আমদানি বাবদ বাংলাদেশের কাছে কাতারের পাওনা ছিল ২৫৪ মিলিয়ন ডলার। এই বকেয়া গত আট মাসের সৃষ্ট নয় বরং বিগত শাসনামলের। ড. ইউনূসের কাতার সফরের মধ্যেই সব বাকি শোধ করে দেওয়া হলো। আপনাদের এই গল্প শোনাতে বসিনি। তবে? গতকাল কাতারে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যকার আলোচনায় এক অন্যরকম বাংলাদেশ সন্ধান পেয়েছি।
ড. ইউনূস ব্যবসায়ীদের সাথে মতামত প্রদান শেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আরেকজন উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খানকে কথা বলতে মাইক্রোফোন দিলেন। তিনি প্রবাসীদের নিয়ে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন। জানাচ্ছিলেন, প্রবাসীদের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ঋণ ও কৃতজ্ঞতার কথা। কথার ফাঁকে ড. কবিরকে উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বললেন, “ফাওজুল, কাতারের পাওনা টাকা পরিশোধের কথাও একটু বলো।” ফাওজুল কবির খান ড. ইউনূসের বাক্য শেষ না হতেই কথার মাঝে কথা বললেন।
এভাবে তিন-চারটি বিষয় ড. ফাওজুলকে ড. ইউনূস মনে করিয়ে দিলেন। ড. ইউনূসের কথা একবারও শেষ হয়নি। এর মধ্যে ড. ফাওজুলও কথা বলতে শুরু করেছেন। ঘটনা এমনও হয়েছে, ড. ইউনূস এবং ড. ফাওজুল দুজনেই একসাথে কথা বলছেন। ভাবুন অন্য সময়ের কথা—সরকার প্রধানের কথা শেষ না হতেই তার মাঝে অন্যরা কথা ঢুকিয়ে দিলে, তার কোথায় কী ঢুকিয়ে দেওয়া হতো!
ড. ইউনূস কোনো গতানুগতিক সরকার পদ্ধতি নয়। বরং তিনি একটা টিম তৈরি করেছেন, যাদের প্রায় সবাই দেশের জন্য কাজ করছেন। দিন-রাত খাঁটুনি দিচ্ছেন। অন্যদের কর্মঘণ্টা ৮ ঘন্টা, সরকারের কর্মকাল দৈনিক ১৮ ঘন্টা। ভাবুন তো, এত পারিপার্শ্বিক চাপ, নিকট প্রতিবেশীদের অসহযোগিতা এবং শত্রুতা, দেশে একশ্রেণির নিত্য দাবিদাওয়ার আন্দোলন—সবকিছু যেখানে প্রায় ভঙ্গুর ছিল, বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান ছিল- সেখানে কাতারের এত অধিক ঋণ পরিশোধের সাহস দেখানোর জন্য সরকারকে কতটা আত্মবিশ্বাসী হতে হয়েছে?
রাজনৈতিক দলগুলোর মতো যদি এই সরকারও একবার চিন্তা করতো যে, যেহেতু ঋণ রাজনৈতিক সরকার সৃষ্টি করেছে, কাজেই পরিশোধও কোনো রাজনৈতিক সরকার করবে— তখন কারও কিছু বলার ছিল? প্রবাসী আয় বাড়ছে, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ রেকর্ড স্পর্শ করছে। অতীতের চেয়ে এই সময়ে প্রবাসীর সংখ্যা বিদেশে বেশি? মোটেই না। বরং সরকারের প্রতি সম্পূর্ণভাবে আস্থা তৈরি হয়েছে। দেশের প্রতি টান ও দায়বদ্ধতার বোধ জাগ্রত হয়েছে। টাকায় দেশ চলে না! দেশ চলে বৈদেশিক মুদ্রায়। যার প্রধানতম উৎস রেমিট্যান্স এবং গার্মেন্টস!
নিম্নমুখী রিজার্ভ এখন ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আছে। মানুষের দাবিদাওয়া সরকার শুনছে এবং যৌক্তিক দাবিদাওয়া পূরণ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দিনকে দিন উজ্জ্বল হচ্ছে। ড. ইউনূসের ম্যাজিকে তরুণ প্রজন্মের চিন্তার জগত প্রসারিত হচ্ছে। কতিপয় বৃদ্ধদের পৌত্তলিক মনোভাব চূর্ণবিচূর্ণ হচ্ছে। তবে সরকারের কোথাও কোথাও দুর্বলতাও আছে। আইনশৃঙ্খলা দর নাজুক পরিস্থিতি এখনো আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে পৌঁছেনি। অনেকের চাঁদাবাজি সরকার এখনও কঠোরভাবে বন্ধ করতে পারেনি।
মানুষ অতীতের চেয়ে ভালো আছে না মন্দ আছে, তা বিচার করতে ভবিষ্যতে যাত্রা করতে হবে। তখন অতীতকেও স্মরণে রাখতে হবে। তবে ড. ইউনূস সরকার আট মাসে যে ক্যারিশমা দেখিয়েছে, তাতে হতাশার খুব বেশি স্থান নাই। আগামী ডিসেম্বর কিংবা জুন পর্যন্ত ড. ইউনূসের সরকার থাকবে। আশা নয়, বিশ্বাস—আরও অনেক কিছু অর্জন হবে দেশের ও দেশের মানুষের। একটা সময় অবশ্য আফসোসও জাগবে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন