আবেগে মগ্ন উম্মাহর আত্মবিস্মৃত প্রতিচ্ছবি

gbn

সারাবিশ্বের মুসলিমরা এটা হয়ত কখনোই বুঝবে না যে, তাদের সগৌরবে ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আছে।

রাজু আহমেদ,  প্রাবন্ধিক।  

মুসলিমদের আবেগ কত সস্তা! কত অল্পতে এরা সন্তুষ্ট হয়! ইসরায়েলের ২৫০০ হেক্টর বনভূমি আগুনে পুড়েছে এবং তাতেই বাংলাদেশে "সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ" বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর বিচার লিখে সে অগ্নিকাণ্ডের চিত্র ফেইসবুকে দেদারসে শেয়ার হচ্ছে। ফিলিস্তিনের একটা শিশুর জীবনের দাম কত? মুসলিমরা বোধহয় গাজা ও রাফার শহিদদের লাশের সাথে ইসরায়েলের লেলিহান আগুনে পুড়ে যাওয়া বৃক্ষের কয়লাকে এক পাল্লায় তুলে দিয়ে ক্ষতির খতিয়ান মাপছে! 

 

সারাবিশ্বের মুসলিমরা এটা হয়ত কখনোই বুঝবে না যে, তাদের সগৌরবে ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আছে। ভবিষ্যতে তাদের জন্য সুখবর আছে। অথচ কত গভীর আত্মবিস্মৃতির প্রতিচ্ছবি দেখছি। তাদের কর্মকাণ্ডের কী করুণ অবস্থা অবলোকন করছি। শত্রুর দেশে ভূমিকম্প হলে তারা "আলহামদুলিল্লাহ" পড়বে, আগুন লাগলে "সুবহানাল্লাহ" বলবে। তবুও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার প্রকল্প হাতে নেবে না। নিহত ও আহত ভাইদের ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে মিছিল করবে, শত্রুর ছবিতে জুতোর মালা দেবে কিংবা কুশপুত্তলিকা দাহ করবে—তবুও সঠিক পথে হাঁটবে না। প্রতিবাদের মঞ্চে স্লোগানে স্লোগানে পরিবেশ পরিস্থিতি মুখর করে বটে তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি কি আদৌ হাসিল হয়? 

 

তরবারি বিক্রি করে তসবি কেনা তৌহিদি জনতাকে উহুদ-বদরের গল্প বলে লাভ নাই। যারা গড় আয়ুর সবটুকু বাঁচতে চায়, তাদের দ্বারা ফিলিস্তিনের মানুষের দরদ কোনোদিন প্রকাশ পাবে না। তারা কোকাকোলা বন্ধ করবে, মোজোর ব্যবসা জাগিয়ে দিতে। তারা বাটার শোরুম লুট করে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে চুরি করা জুতো বিক্রি করবে। মুসলিমদের অধিকার রক্ষার জন্য যা করা দরকার, সেটুকু বাদে তারা সব করছে। পনেরো জন মুসলিম মোটামুটি পঁচিশটি মতাদর্শে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের সাথে কথার লড়াইয়ে লিপ্ত থাকছে। 

 

তাদের দলেরও অভাব নাই, অনুসারীরও কমতি নাই। অভাব শুধু ঐক্যের। শায়খরাই যেখানে শত্রু সেখানে তাদের অন্ধ মুরিদ পরস্পরের বন্ধু হবে কী করে? জ্ঞানের রাজ্যের দখল, নতুন কিছু ইনোভেশন—এসবে মুসলিমদের অংশগ্রহণ খুব কম। গরুর গোশত ভাগাভাগি নিয়ে মারামারি করা জাতির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কত কম দামে বিক্রি করে গেলো। লুট হয়ে গেলো পূর্বপুরুষদের সম্মান। তারা মুরিদদের ক্ষেপিয়ে দিয়ে আদালতকে জিম্মি করে মেয়রের রায় বাগিয়ে নিতে চায়!

 

কাশ্মীর পরবর্তী ফিলিস্তিন। ভারতীয় মিডিয়া এবং বিজেপির শুভেন্দুরা সে ব্যাকগ্রাউন্ড ইতোমধ্যেই তৈরি করছে। মোদীর মমতায় নেতানিয়াহুরা সহায়তা করতে একপা বাড়িয়ে আছে। অথচ ইসলামের ইজারাদার সৌদি আরব রাজতন্ত্র টিকাতে ব্যস্ত। মানচিত্রে পাকিস্তান নামক একটা দেশ আছে, যেখানে অধিকাংশ মানুষ মাথামোটা শ্রেণির! আর বাংলাদেশ? এইট পাশ তৌহিদি জনতাকে নিয়ে যারা স্বার্থ হাসিলের লড়াইয়ে অবতীর্ণ, তারা দেশটার বারোটা না বাজিয়ে থামবে না। 

 

যে পৃথিবীতে অস্ত্রের যুদ্ধ হয়, আকাশের দখল নিয়ে লড়াই চলে, সমুদ্রের তলদেশে ঘাঁটি হয় কিংবা বিজ্ঞান পৌঁছে যায় মহাকাশ পর্যন্ত— সেখানে আল্লাহর কাছে নালিশ এবং স্বার্থপরতার দখলদারিত্বের ঈমানে ফেরেশতারা মুনাফেকদের পক্ষে যুদ্ধ করে না। নিজেদের মধ্যে হানাহানি, মারামারিতে যে জাতি বিভক্ত, সে জাতির কাউকেই শত্রুপক্ষ ছাড় দেবে না। একজনও রক্ষা পাবে না। মুসলিমের আবাসস্থল ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হতে হতে মক্কা-মদিনায় গিয়ে ঠেকবে। 

 

সময় যত সামনে গড়াবে, 'ইসলাম ভার্সেস অলে'র লড়াই তত ঘনীভূত হবে। মুসলিমের শত্রু ঘরে এবং দূরে। মত ও পথের পার্থক্য পৃথিবী থেকে ইসলামের ঝান্ডা বিলুপ্ত করবে। ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সিরিয়া—কাদের বুলেটে কারা মরছে? কাদের বিরুদ্ধে কারা লড়ছে? শত বছর ধরে কাশ্মীরের নাগরিকদের রক্তে পৃথিবীর ভূস্বর্গ রঞ্জিত হচ্ছে—মানবতাবাদীরা কোথায়? 

 

স্ব স্ব ধর্মের সীমানা প্রচীরকে কৃত্রিম মানবতাবোধ অতিক্রম করতে পারে না। যারা প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার, তাদের দেশে সংখ্যালঘুদের আবেগ ও রক্ত নিয়ে হোলিখেলা চলছে- সেদিকে খেয়াল নাই। মসজিদ ভাঙছে, জমিন দখল হচ্ছে এবং সরকার সেসবকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। কেউ যদি নিজেকে রক্ষা করতে না পারে— অন্য কেউ সহায়তা করবে না। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় পরিচয় থাকলে অন্যরা তো ফিরেও তাকাবে না।

 

সবকিছু আল্লাহ দেখবেন, বিচার করবেন- এমন আশায় বসে আছে দুনিয়ার স্বার্থ উদ্ধার করা পক্ষ। তবে তো আর চেষ্টা করা লাগে না! নিজেকে সুরক্ষা দিতে সুরম্য প্রাচীরঘেরা দুর্গে থাকা লাগে না। যে যুগে তসবির চেয়ে তরবারির প্রয়োজনীয়তা বেশি ছিল, সে যুগের বীররা তাই করেছিল। এখন সেয়ানে সেয়ানের লড়াইয়ের জন্য আকাশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সমুদ্রের দখল নিতে হবে। যুদ্ধাস্ত্রে ভূমি ভারী করতে হবে। শত্রুপক্ষের কাছে মিসাইল, আর তুমি খেঁজুরের লাঠি হাতে নিয়ে মানবতার নাসিহা শুনালে— কে শুনবে তোমার বাক ওয়াজ? আজগুবি কিচ্ছা কাহিনি বলে জনতাকে সাময়িক বোকা বানানো যায় কিন্তু শত্রুপক্ষকে মোকাবিলা করা যায় না। 

 

মুসলিম বিশ্বকে পরমাণু শক্তিধর হতে হবে। আকাশ প্রতিরক্ষার আধুনিক টেকনোলজি উদ্ভাবন করতে হবে। জমিনে বিচরণের জন্য   আধুনিক নিরাপত্তার সমন্বয় করতে হবে। মোটকথা,  সমরবিদ্যায় পরাঙ্গম হতে হবে। নাহু-সরফ আর শরহে বেকায়া-মুতাওয়ালা করার উপযুক্ত সময় এখন নয়। মসজিদের কোণে বসে মোশাহাদার সময় শেষ হয়েছে। 

 

তাবলিগের ক্ষেত্রটাকে মর্যাদা রক্ষার ময়দানে সম্প্রসারিত করতে হবে। মর্দে মুজাহিদ হতে হবে। পানিতে ফুঁক দেওয়া, বালি ছুড়ে মারা কিংবা বান মেরে মান মারা— এসব আধিভৌতিক ব্যাপার দিয়ে সমরে শত্রুপক্ষের মোকাবিলা করা যায় না। কৌশলী হয়ে পৃথিবীর দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে হবে। আদর্শ দিয়ে অন্যদের আকৃষ্ট করতে হবে।  আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হবে। মুসলিমদের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে। ২০০ কোটি মুসলিম- মোটেও সামান্য সংখ্যা নয়। শরাব এবং নারীতে বুঁদ থাকলে, সম্পদ ও ক্ষমতার কাছে বিক্রি হলে মুসলিমদের জন্য অচিরেই দুনিয়াজোড়া জাহান্নাম নাজিল হবে। ইতোমধ্যে আলামত বোধহয় প্রকাশিত হয়েছে। নয়তো গোটা আরব বিশ্বকে এক ইসরায়েলের সাথে বারবার নাকানিচুবানি খেতে হতো না।

 

 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন