হাকিকুল ইসলাম খোকন,
বাংলাদেশে অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার এবং নাগরিক অধিকার হরণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করা হলো ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে। ‘বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’র ব্যানারে গত বুধবার,২৩ এপ্রিল ২০২৫,সন্ধ্যার এ সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয় যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম গণমাধ্যম জবর-দখল এবং পেশাজীবী ৩২৭ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কথিত হত্যা মামলা দায়ের, এবং মামলার তদন্তের আগেই সম্পাদক, সাংবাদিকগণকে নির্বিচারে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। মালিকানা জবর-দখলের পর হাজারো সাংবাদিককে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়নভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সকল ভোটারের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এবং সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তের বিরুদ্ধে কথিত হত্যা মামলার পর তাদের অফিসও দখলে নিয়েছে উগ্রপন্থিরা। এহেন অরাজক পরিস্থিতির সঠিক তথ্য বাংলাদেশে গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার পাচ্ছে না। তাই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সহায়তা চাওয়া হয় ‘শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে চলমান অশান্তি-অব্যবস্থাপনার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ’ প্রকাশের জন্যে। এ সময় মার্কিন কংগ্রেসের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, শীঘ্রই একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঠানো এবং কংগ্রেসে শুনানীর আয়োজন করা জরুরী। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক সংস্থার প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ড. নুরুন্নবী আরো জানান, ইতিমধ্যেই আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমীপে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। গণতান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থা পুনর্বহাল তথা অবিলম্বে সংবিধান-সম্মত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে সসম্মানে ফিরিয়ে নিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আন্তরিক সহায়তাও কামনা করা হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি সাহাবউদ্দিন চুপ্পু সমীপে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সেখানেও কথিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার পর দেশব্যাপী রাজাকার-শিবির নয় এমন সচেতন মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটতরাজের পর অগ্নি সংযোগ করা হচ্ছে। আইনের শাসনের অনুপস্থিতি জনজীবনে চরম উৎকন্ঠা তৈরী করেছে। বৈষম্যহীন সমাজের স্লোগানের আড়ালে চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিধনের অকল্পনীয় কান্ডকারখানা চলছে সারা বাংলাদেশে। স্মারকলিপিতে অবিলম্বে জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানানো হয় প্রবাসীদের পক্ষ থেকে। স্মারকলিপি হস্তান্তরকালে ছিলেন সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা ও কম্যুনিটি লিডার ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, সংগঠনের পরিচালক এডভোকেট শাহ বখতিয়ার, সংগঠনের পরিচালক জালালউদ্দিন জলিল, খন্দকার জাহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক ও লেখক সাজ্জাদ হোসেন সবুজ প্রমুখ।খবর বাপসনিউজ ।
অপরদিকে ‘হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন্স, রাইজ অব মিলিট্যান্ট ইসলামিস্টস অ্যান্ড করাপশন অ্যালিগেশন্স অ্যাগেইনস্ট ড. মুহম্মদ ইউনূস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন হোস্ট সংস্থার প্রধান নিউজার্সির প্লেইন্সবরো সিটির কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন্নবী। জাতীয় প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী তথা বাংলাদেশী আমেরিকানদের সমন্বয়ে গঠিত কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই প্রথম সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এতে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত বাংলাদেশী সাংবাদিক ছাড়াও মূলধারার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাংবাদিক ছিলেন এবং ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে ধর্মীয় চরমপন্থি উত্থানের তথ্য জেনে উদ্বিগ্নচিত্তে সংবাদদাতারাও প্রশ্ন উত্থাপন করেন। প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপনের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দীলিপ নাথ, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রানা হাসান মাহমুদ এবং আরিফা রহমান রুমা। এ সময় ফ্লোরে বিশিষ্টজনের মধ্যে আরো ছিলেন ড. জিনাত নবী, ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, এডভোকেট শাহ বখতিয়ার, জালালউদ্দিন জলিল, খন্দকার জাহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, মিসেস আদনান, শ্যামল চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ সরকার, শিবু চৌধুরী, জিয়া করিম এবং শুভ রায়। বাংলাদেশে গত সাড়ে ৮ মাসে বর্বরতার একটি ভিডিও-চিত্র এনেছিলেন লন্ডনের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন ।
বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির ব্যাপারে নিকট প্রতিবেশী বন্ধু হিসেবে ভারতের অবস্থান কী জানতে চাইলে ড. দীলিপ নাথ বলেন, বাংলাদেশের ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘুকে নির্মূলের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন মুহম্মদ ইউনূস। ইতিমধ্যেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশের নামও পরিবর্তন করে ‘ইসলামিক বাংলাদেশ’ করার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। দীলিপ নাথ বলেন, মুহম্মদ ইউনূস প্রতিনিয়ম মিথ্যাচার করছেন এবং বাংলাদেশে আইনের শাসন একেবারেই ভেঙ্গে পড়ার অন্যতম কারণও এমন মিথ্যাচার। ৫ আগস্টের কথিত ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ৫ শতাধিক পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, অস্ত্র লুট, কারাগার থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। সাড়ে ৩ হাজারের অধিক পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের হাজারো নেতা-কর্মীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. নুরুন্নবী উল্লেখ করেন, আমরা বাংলাদেশী আমেরিকানরা উদ্বিগ্ন শুধু ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ নিয়ে নয়, দক্ষিণ এশিয়া তথা গোটাবিশ্বে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের ব্যাপক উত্থান নিয়েও উদ্বিগ্ন। কারণ, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহম্মদ ইউনূসের অপকর্ম, দু:শাসন, মিথ্যাচারের পথ বেয়ে প্রকারান্তরে ধর্মীয় জঙ্গিদের উত্থান ঘটছে-যা শান্তি ও সম্প্রীতির জন্যে বড় ধরনের হুমকি। ড. নুরুন্নবী বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, ‘পাশ্চাত্যের কেউ কেউ মুহম্মদ ইউনূসকে শান্তির দূত ভাবলেও প্রকৃত সত্য হচ্ছে ইউনূস হলেন সন্ত্রাসবাদের লালন-পালনকারি ।
‘দারিদ্র বিমোচনের লেবাসে মুহম্মদ ইউনূস গরিবের চেয়ে গরিব মহিলাদের রক্ত চুষে নিজের ধন-সম্পদের পরিধি বিস্তৃত করেছেন এবং এক পর্যায়ে দুর্নীতি ও প্রতারণামূলকভাবে অর্জিত অর্থ ব্যয়ে বাংলাদেশ থেকে সাংবিধানিক সরকার উৎখাতের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মানুষটি। তার সাম্প্রতিক আচরণে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আজ হতভম্ব’-মন্তব্য ইঞ্জিনিয়ারি মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর। দারিদ্র বিমোচনের সস্তা স্লোগানে পাশ্চাত্যের সহজ-সরল কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করার পর বিভিন্ন সেবামূলক প্রকল্পে প্রাপ্ত অনুদান কিংবা নামমাত্র সুদে প্রাপ্ত তহবিল একের পর এক নয়া সংগঠনে স্থানান্তর করেন মুহম্মদ ইউনূস। এরফলে বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচনে গ্রামীন ব্যাংকের ভ’মিকা বরাবরই প্রশ্নবোধক চিহ্নে আবদ্ধ হয়েছে। তবে মুহম্মদ ইউনূসের খায়েশ কখনোই অপূর্ণ থাকেনি বলে মন্তব্য করেন মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে গ্রামীন ফান্ডকে নিজের স্বার্থে ব্যবহারের অভিপ্রায়ে ৪৮টি সংগঠনের ইতিবৃত্ত উপস্থাপন করেন মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী।
সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় বাংলাদেশে আইনানুগ সরকার প্রতিষ্ঠার পর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার জন্যে। একইসাথে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিও আহবান জানানো একটি প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্যে। কারণ, বাংলাদেশে মানবাধিকারের লেশমাত্র নেই। আইনের শাসন বলতে ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের রাজত্ব চলছে। হত্যা, লুটতরাজ, ছিনতাই, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণের সাথে জড়িত একজনকেও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেনি। প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐসব জঙ্গির হামলার শিকার হচ্ছেন। গ্রেফতারও করা হচ্ছে ভিকটিমদেরকেই। সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতি উদাত্ত আহবান জানানো হয় বাংলাদেশের সঠিক সংবাদ প্রচার ও প্রকাশের জন্যে। এসময় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যমই মুহাম্মদ ইউনূসের অপকর্মের ব্যাপারে সংবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। চরম ভীতিকর অবস্থায় নিপতিত করা হয়েছে গণমাধ্যমকে।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন