সুন্দরবনের উপকূলের কর্মহীন ৭০ হাজার জেলে নিষেধাজ্ঞার ১৪ দিন পরও সরকারি সহায়তা পায়নি

gbn

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির,  সুন্দরবন থেকে ফিরে: বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত বঙ্গোপসাগরের উত্তল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রকৃতির ভয়াল দুর্যোগ, কখনো দস্যুদের হামলা, আবার কখনো দাদনের দায়ে আটকা চির দারিদ্র্যের সঙ্গে জিম্মি সুন্দরবনের উপকূলের ৭০ হাজার জেলেরা সরকারি সহায়তা পায়নি  ।

সব সমস্যা মোকাবিলার পর তিন বেলা খেয়ে বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যান তারা। এছাড়া বছরের প্রায় সারাটা মৌসুম সরকারি বিধি-নিষেধসহ জেলেদের বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়।
উপকূলজুড়ে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে। এরই মাঝে ১৪ এপিল মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা, বলবৎ থাকবে ১১ জুন পর্যন্ত। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। দুই সপ্তাহেও সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে নানা সংকটে তারা। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না আসায় কবে নাগাদ সরকারি প্রণোদনা পাবে তাও নিশ্চিত করতে পারেনি স্থানীয় মৎস্য বিভাগ। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে মিল রেখে দেশে প্রথমবারের মতো সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় জেলেরা খুশি হলেও, যথাসময়ে সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় এর সুফল নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শরণখোলায়  প্রায় ৩৫ হাজার জেলে থাকলেও নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৫ হাজার। যাদের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে ১৫ হাজার ৫০ জন। সমুদ্রগামী একজন জেলেদের জন্য ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ থাকলেও এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি শরণখোলায় উপজেলার জেলেরা।

শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের জামাল শেখ, মোস্তফা শেখসহ একাধিক জেলে জানান, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে ট্রলার নিয়ে ঘাটে থাকতে হবে প্রায় দুমাস। দুই মাসের জন্য অন্য কোন কাজ করাও সম্ভব নয় আয়ের উৎস বন্ধ। প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি সহায়তা পেলেও এই বছর দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে আমরা কোন সহায়তা পাইনি।
জাল-ট্রলার মেরামত করে সাগরে যাওয়ার উপযোগী করতে একজন ট্রলার মালিক দুই-তিন লাখ টাকা করে খরচ করেছেন। আর জ্বালানি, খাবারসহ অন্য রসদ কেনার জন্য জেলে ও মাঝিদের ১০-২৫ হাজার টাকা অগ্রিম ঋণ নিতে হয়েছে।

তারা আরও জানান, এসব টাকার বেশিরভাগই মহাজনদের কাছ থেকে দাদন ও সুদে নিয়েছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে সাগরে যেতে না পারায় তাদের অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়ছে।, , ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের মাত্র ৮৬ কেজি চাল দেওয়া হবে। তাও এই বছর কোন সহায়তা পায়নি। পরিবার পরিজন নিয়ে বর্তমানে আমাদের খুব অভাবে দিন কাটছে। প্রতি বছরের মত এবারও সরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলে কিছুটা হলেও আমাদের উপকারে আসতো। সরকারের কাছে আবেদন জানাই অতি দ্রুত যেন আমাদের জেলেদের জন্য কমবেশি সহায়তা দেওয়া হয়।



মোরেলগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার বলেন,‘১৫ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা জারি হয়েছে। মোরেলগঞ্জ  প্রায় ৩০ হাজার জেলে থাকলেও নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার। যাদের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে ১৫ হাজার ৫০ জন। সমুদ্রগামী একজন জেলেদের জন্য ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন সহায়তা আসেনি। তবে জেলেদের সরকারি সহায়তার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অতি দ্রুতই জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দ আসবে।বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ. এস. এম. রাসেল বলেন, সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। সচেতনতা সভা করেছি যাতে কেউ সাগরে না যায়,একই সাথে বরফ কলগুলোকে বলেছি সাগরগামী কোনো ফিশিংবোটকে বরফ না দিতে। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসাব,এবং ঘাটগুলো নজরদারিতে রাখব। বাগেরহাট র জেলেদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভারতের সাথে মিল রেখে সাগরে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা, সরকার এ বছর তাই করেছে।

তিনি আরও বলেন, জেলা টাস্কফোর্সের মিটিং হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড নৌপুলিশ আমাদের সহযোগিতা করবে। জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি খাদ্য সহায়তার চালের অর্ডার এখনও পাইনি। শিগগিরই পাব। পেলে প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে।

উল্লেখ্য, বাগেরহাট জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১ জন। এর মধ্যে সাগরগামী জেলের সংখ্যা ৭০হাজার।##
 

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন