সিনহার সহযোগী শিপ্রা-রিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা মিথ্যা: র‌্যাব

gbn

  জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //

মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার দিন তার দুই সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও শহিদুল ইসলাম রিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশের করা তিনটি মামলা মিথ্যা বিলে প্রমাণিত হয়েছে। এসব মামলার সপক্ষে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় আসামিদের দায়মুক্তি চেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা।

দীর্ঘ চার মাস দশদিন মামলাটি তদন্তের পর রোববার (১৩ ডিসেম্বর) কক্সবাজার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে র‌্যাব। মামলায় সর্বমোট ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমারসহ বরখাস্ত নয়জন পুলিশ, তিনজন এপিবিএন সদস্য ও স্থানীয় তিনজন বেসামরিক লোক রয়েছেন। যাদের ১৪ জনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে তারা জেলহাজতে রয়েছেন। সাগর দে নামে একজন পুলিশ সদস্য পলাতক রয়েছেন।

 

র‌্যাব মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আশিক বিল্লাহ বলেন, ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে বাহারছড়া ক্যাম্পের কাছে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যুর পর আদালতে মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। আদালতের নির্দেশে তদন্ত ভার পায় র‌্যাব। এর একটি টেকনাফ থানায় মাদক সংক্রান্ত মামলা, আরেকটি পুলিশের কাজে বাধাদান সংক্রান্ত ও শহিদুল ইসলাম সিফাত এবং মেজর সিনহাকে আসামিকে করে রামু থানায় আরেকটি মামলা করা হয়। র‌্যাব ওই তিন মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে র‌্যাবের একজন অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার এ বি এম খায়রুল ইসলামকে তদন্তে নিযুক্ত করা হয়। তিনি প্রভাবহীনভাবে তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন। আজ এই হত্যা মামলার ২৬ পৃষ্ঠার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিট দাখিল করার ক্ষেত্রে কর্মকর্তা মোট ৪ মাস ১০ দিন সময় নিয়েছেন। এই মামলায় ১৫জনকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৯জন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য, তিনজন বরখাস্তকৃত এপিবিএন সদস্য, তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি।

এরমধ্যে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে রয়েছেন ১৫জন। একজন পলাতক। তিনি হচ্ছেন কনস্টেবল সাগর দে। আরও দুজনকে অভিযুক্ত করে যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল তাদের নাম ঠিকানা ভুল থাকায় অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, এই চাঞ্চল্যকর মামলায় র‌্যাব পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে। গ্রেপ্তার ১৪ জনের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে গ্রেপ্তার ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা দায় স্বীকার করেননি। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে মোট ৮৩ জনের সাক্ষ নিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের আলামত ও ডিজিটাল কনটেন্ট সংগ্রহ করে এটি হত্যাকাণ্ড বলে চার্জশিটে বলা হয়েছে।

৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এই ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন।

আশিক বিল্লাহ আরো বলেন, গত ৭ জুলাই শিপ্রা দেবনাথ ও শহিদুল ইসলাম সিফাত এবং আরেক সহকর্মীসহ মেজর সিনহা একটি ইউটিউব চ্যানেলের কাজে যান। কক্সবাজার এলাকায় তারা ভিডিও ধারণ করছিলেন। এসময় তার সঙ্গে স্থানীয়দের সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেসময় ওসি প্রদীপের নির্যাতনের ঘটনা ও ইয়াবা বাণিজ্য সম্পর্কে তথ্য পান সিনহা। এই বিষয়ে ওসি প্রদীপের বক্তব্য নিতে সিনহা থানায় যান। ইতিমধ্যে ওসি প্রদীপ সিনহা সম্পর্কে সবকিছু জেনে যাওয়ায় তাকে বক্তব্য না দিয়ে উল্টো সরাসরি হুমকি দেন। সেই সঙ্গে এই কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, মেজর সিনহা হত্যার সাথে অন্য কোনো অপকর্ম বা অপরাধের সাদৃশ্য খোঁজা অমূলক। সেই রাতে সিনহার মাকেও ফোন করা হয়েছিল। পরিচয় নিশ্চিত হবার পরেও তাকে হত্যা করা হয় পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে। মেজর সিনহা সম্পর্কে আপনারা সবাই জেনেছেন। ওসি প্রদীপ যা করেছেন তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ।

কী ধরনের হুমকি দেয়া হয়েছিল মেজর সিনহাকে জানতে চাইলে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, অবিলম্বে মেজর সিনহাকে ইউটিউব চ্যানেলের কাজ বাদ দিয়ে টেকনাফ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। নইলে তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে মর্মে সরাসরি হুমকি দেয় ওসি প্রদীপ।

ডিজিটাল কনটেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে ল্যাপটপ ফরেনসিক করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ল্যাপটপের ডিজিটাল কনটেন্ট না পেলেও সাক্ষ্যপ্রমাণে ও জবানবন্দিতে এটা স্পষ্ট পরিকল্পিত হত্যা।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন