কাওছারুল আলম রিটন: বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে ইউকে বিডি টিভির প্রধান উপদেষ্টা অমর একুশের কালজয়ী গান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি”এর রচয়িতা বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিস্ট সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর ৮৭ তম জন্মদিন পালন উপলক্ষে গতকাল ইউ কে বিডি টিভির বিশেষ ভার্চুয়াল অনুষ্টান বাংলার আলোকবর্তিকা গাফ্ফার চৌধুরী শীরোনামে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান প্রদান করা হয়েছে। ইউকে বিডি টিভির উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবাসের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ এর সভাপতিত্বে এবং ইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মকিস মনসুর এর উপস্থাপনায় অনুষ্টিত আলোচনা সভায় বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিস্ট সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী ছাড়া ও প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ১৪ দলীয় সমন্নয়ক ও মূখপাত্র প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি, ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা প্রাক্তন প্রেসিডিয়াম মেম্বার ঢাকসুর সাবেক ভিপি ও প্রাক্তন মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ এমপি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী সাবেক সচিব এম এ মান্নান এমপি, বৃটেনের বাংলাদেশের হাইকমিশনার বিশিষ্ট কূটনীতিক হ্যার এক্সেলেন্সি সাইদা মুনা তাসনীম,একুশে পদকপ্রাপ্ত যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. নুরুন্নবী, বৃটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিষ্টার আশিকুন্নবী চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজ. যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাংবাদিক ও লেখক সুজাত মনসুর, ইউকে বিডি টিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাংবাদিক ইন্জিনিয়ার খায়রুল আলম লিংকন, জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপিকা হেলেন ইসলাম, হলহাম্ভার আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি রাধা কান্ত ধর. ইউকে নিউপোট আওয়ামী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ শাফি কাদির প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি" কালজয়ী গানের রচয়িতা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর জন্মদিন নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন অসিমা দে, মিশেল দে ও তরা দে এবং কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট লেখক ও কবি ফকির ইলিয়াস। এছাড়া ও অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবুল হাসান মাহমুদ আলীর শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠ করে শুনানো হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয়। লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত কবিতা, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’। এই কবিতাটিতেই পরে সুর দেন অমর সুরকার আলতাফ মাহমুদ। বক্তারা আর ও বলেন ইতিহাসের সাক্ষী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ব্রিটিশ ভারত থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশের জন্ম এই ইতিহাসের অনেক কিছুরই সাক্ষী তিনি। জন্মেছিলেন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে, ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, অবিভক্ত বাংলার কংগ্রেস কমিটি ও খেলাফত কমিটির বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি প্রয়াত হাজি ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী তাঁর বাবা, মা জোহরা খাতুন। উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসা ও উলানিয়া করোনেশন হাই ইংলিশ স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। স্কুলজীবনেই নিয়েছিলেন রাজনীতির পাঠ। ছাত্রজীবনেই লেখালেখিতে হাতেখড়ি। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন সম্পাদিত মাসিক সওগাত পত্রিকায় তাঁর গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে। ১৯৫২ সালে সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি ছাত্রজীবনেই। ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকাকালীন যোগ দেন দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায়। ১৯৫১ সালে যোগ দেন খায়রুল কবীর সম্পাদিত দৈনিক সংবাদের বার্তা বিভাগে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন ১৯৫৬ সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কলমযোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। জয় বাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মডারেটরের ভূমিকাও পালন করেছেন। স্বাধীনতার পর ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জনপদের প্রধান সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয়। লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত কবিতা, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’। এই কবিতাটিতেই পরে সুর দেন অমর সুরকার আলতাফ মাহমুদ। সেই কবিতাটি আজ গীত হয় বিশ্বজুড়ে একুশের প্রভাতফেরির গান হিসেবে। যত দিন একুশে ফেব্রুয়ারি থাকবে, ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রভাতফেরি হবে, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি যত দিন থাকবে, তত দিন এই গানটির ভেতর দিয়ে স্মরণ করা হবে তাঁকে। আজ সারা বিশ্বে গানটি গাওয়া হয়। বিশ্বের নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে গানটি। গাওয়া হয়েছে। বেরিয়েছে রেকর্ড। বাঙালির জন্য এ এক অনন্য সম্মান। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে এই অনন্য সম্মান এনে দিয়েছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বাংলাদেশে সেলিব্রিটি সাংবাদিকের সংখ্যা হাতে গোনা। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সেই স্বল্পসংখ্যক সাংবাদিকের একজন, যাঁর কলামের অপেক্ষায় থাকে দেশের সিংহভাগ পাঠক। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কলামে যে মত প্রকাশ করেন, তার সঙ্গে অনেক পাঠকেরই হয়তো মতের মিল হবে না। কিন্তু তিনি কী লিখছেন, কী ভাবছেন, তা জানার আগ্রহ পাঠকের আছে। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধ রাজনৈতিক মতবাদের মানুষও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কলাম পড়েন সমান আগ্রহে। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে শুধুই একজন সাংবাদিক কিংবা কলাম লেখকের পরিচয়ে সীমাবদ্ধ করে ফেলা যাবে না। নন্দিত কথাশিল্পী তিনি। একাধারে লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস। লিখেছেন গান ও কবিতা। তাঁর পাঠকনন্দিত ছোটগল্পের বই ‘সম্রাটের ছবি’। পেয়েছেন ইউনেস্কো পুরস্কার। ভূষিত হয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারেও। পেয়েছেন একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সবচেয়ে বড় পুরস্কার তাঁর পাঠকপ্রিয়তা। অসাধারণ এক কথক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। অসামান্য দক্ষতায় তিনি পাঠককে টেনে নিয়ে যান। সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। লেখার দায়ে নয়, লেখাকে অর্পিত দায়িত্ব হিসেবে মনে করেন তিনি। পাঠকের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা থেকেই লেখার অনুপ্রেরণা পান, এ কথা প্রায়ই বলেন। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম করে লিখতে বসেন। লেখা তাঁর কাছে সাধনার মতো। লেখার আগে ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে ফোন করে জেনে নেন সর্বশেষ খবরটি। যে কারণে বিদেশে থাকলেও তাঁর কলামে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতির চুলচেরা বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। আজ তাঁর ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। এই বয়সেও তিনি সমান সক্রিয়। নিয়মিত লিখছেন, পাঠককে জোগান দিচ্ছেন চিন্তার খোরাক। তাঁর মতো গ্রগতিশীল মানুষকে আমাদের খুব প্রয়োজন। অসাম্প্রদায়িক, উদারনৈতিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে তাঁকে চাই আরো অনেক দিন। আরো অনেক দিন লিখবেন তিনি, সক্রিয় থাকবে তাঁর কলম ও চিন্তার জগৎ, বেঁচে থাকুন শত বছর জন্ম দিনে এটাই সকালের প্রত্যাশা বলে বক্তারা অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন