জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
ইতালিতে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলেন করোনায় মৃতদের আত্মীয়রা। অবহেলার অভিযোগ করে এক হাজার কোটি টাকা (১০ কোটি ইউরো) ক্ষতিপূরণ দাবি।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, উত্তর লম্বার্ডির প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে করোনা-মামলা দায়ের করছেন মৃতের আত্মীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি অবহেলায় ইতালিতে করোনা ছড়িয়েছে। যার জেরে মারা গেছেন তাঁদের আত্মীয়েরা। এই অবহেলার জন্য তাঁরা ১০ কোটি ইউরো ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
চীনের উহানের পরেই ইতালিতে দ্রুত ছড়িয়েছিল করোনা। প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এখন সেই মৃতদের ৫০০ জন আত্মীয় একজোট হয়ে মামলা করেছেন।
ইতালির উত্তর লম্বার্ডিতে করোনা প্রথমদিকে খুবই দ্রুত ছড়ায়। করোনায় মৃত এক ব্যক্তির বাবা দাবি করেছেন, করোনা ছড়াচ্ছে দেখেও সরকার ব্যবস্থা নেয়নি। চীন থেকে আসা মানুষদের কোয়ারান্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়নি। করোনা রুখতেও ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারের এই অবহেলার জন্য করোনা আরো দ্রুত ছড়িয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, উত্তর লম্বার্ডির একটি হাসপাতালে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তা সত্ত্বেও হাসপাতাল খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
করোনার সমস্যা যখন রীতিমতো চিন্তাজনক তারও তিন সপ্তাহ পরে ১০ মার্চ থেকে ইতালিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লম্বার্ডির আইনজীবীরা এখন খতিয়ে দেখছেন, লকডাউন আগে ঘোষণা করা উচিত ছিল কি না। লকডাউন ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের কর্মকর্তারা বিপাকে পড়তে পারেন, কারণ, দায় তাঁদের উপরেই আসে।
নই ডিনানসেরেমো (উই উইল ডিনাউন্স) গোষ্ঠীর সভাপতি লুকা ফাসকো বলেছেন, ইইউ এবং ডাব্লিউএইচও বারবার ইতালি সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছিল। তাদের পরামর্শ মানলে মৃতের সংখ্যা অনেক কম হতো। এই গোষ্ঠীই ৩০০টি মামলা দায়ের করেছে।
অভিযোগ, ইতালির ফেডারেল করোনাভাইরাস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানকে আপডেট করা হয়নি। ২০০৬ সালের অতিমারি নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা নিয়েই তারা করোনার মোকাবিলা করতে চেয়েছে। তার ফলে রাজ্যস্তরে যতটা প্রস্তুতি দরকার ছিল, তা হয়নি।
এরই মধ্যে ডাব্লিউএইচও-র কর্মকর্তা জামবোন গুরুতর অভিযোগ করেছেন। তিনি সংস্থার পক্ষে একটি রিপোর্ট তৈরির দলে ছিলেন। সেখানে ইতালি কীভাবে করোনা সামলেছে, তার সমালোচনামূলক তথ্য ছিল। তাঁর অভিযোগ, প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাব্লিউএইচও সেই রিপোর্ট মুছে দেয়।
সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, করোনা মোকাবিলায় মান্ধাতার আমলের পরিকল্পনা নিয়ে চলছিল ইতালি। সেখানকার হাসপাতালের অবস্থা ভয়ঙ্কর ছিল। অভিযোগ, ডাব্লিউএইচও-র অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর জেনারেল ফর স্ট্র্যাটেজিক ইনিটিয়েটিভের কাছে আর্জি জানিয়ে এই রিপোর্ট সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আগে ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রকে তিন বছর কাজ করেছেন। অতিমারি রোধের পরিকল্পনা আপডেট করার কাজ তাঁরই করার কথা ছিল।
এখনো পর্যন্ত ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। মধ্য জুলাই থেকে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে অর্ধেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, ইতালিতে সময়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি। তবে ছুটির সময়ে ইতালিতে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
আইনজীবীদের দাবি, সাধারণ মানুষ তাঁদের সুরক্ষার দায়িত্ব রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের হাতে দিয়েছিল। কিন্তু দুই সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর মতে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বড় কথা নয়। এক ইউরো জরিমানা হতে পারে। কিন্তু তাঁরা দেখাতে চান, করোনা মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ ও তারা ঠিক সিদ্ধান্ত সময়ে ঘোষণা করেনি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন