মকবুল হোসেন তালুকদার ||
ঢেড়স একটি সুস্বাধু প্রোটিন, ভিটামিন, ডায়েটারী ফাইবার,কার্বোহাইড্রেট ও মিনারেল সম্বৃদ্ধ সব্জী। সব্জীটি সব বয়সের মানুষের খুব পছন্দের। কিন্তু ঢেড়স গাছ পাতা হলুদ মোজাইক নামক এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে স্বাধ, আকার আকৃতি বা চেহারা নষ্ট হয়ে খাদ্যমান ও উৎপাদন কমে যায়।
ঢেড়স ছাড়াও টমেটু, বেগুন, চাল কুমড়া ও পাট গাছও বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। তবে ঢেড়স ও পাট গাছে আক্রমনের ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায় বিধায় সহজেই অনুমান করা যায় যে গাছটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত।
আমি দীর্ঘ ৩৫ বছর ফসলের রোগ-বালাই নিয়ে কাজ করেছি এবং ডেনমার্কের Agriculture & Veterinary University’তে Guest Scientist হিসেবে ১২ মাস ঢেডসের হলুদ মোজাইক ভাইরাস রোগ (Yellow Mosaic Virus ) সহ ফসলের অন্যান্য রোগ বালাই নিয়ে গবেষনা করেছি। গবেষনায় দেখেছি ফসলের ভাইরাস জনিত রোগের জীবানু প্রধানত বীজের মধ্যে লুকিয়ে থাকে এবং অনুকুল পরিবেশ পেলে পাতায় আক্রমন করে গাছের খাদ্য প্রক্রিয়াকরন বন্ধ করে দেয়। গাছ সাধারনত: পাতার সবুজ অংশ বা ক্লোরোফিলের সাহায্যে পাতায় খাদ্য প্রস্তুত করে। তাই পাতার সবুজ অংশ নষ্ট হলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরন বা খাদ্য প্রস্তুত করতে পারেনা এবং পুষ্টি বা খাদ্যের অভাবে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়।
স্বাধীনতা উওর বাংলাদেশে ঢেড়সের ভাইরাস রোগের ন্যায় রাজনীতিবিদগন বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস যথা; ডিগবাজী, খোলস বদল, আদর্শচুৎি, back to the pavilon এবং পাকি প্রেম ইত্যাদি ভাইরাসে কমবেশী আক্রান্ত হতে দেখা গেছে।এ সকল রাজনৈতিক ভাইরাস ঢেড়সের ন্যায় আক্রান্ত রাজনৈতিক ব্যক্তির আদর্শিক চরিএের স্খলন ঘটায় এবং তাদের গুরুত্ব ও মুল্যায়ন হ্রাস পায়। লক্ষ্য করা গেছে,উক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত রাজনৈতিক ব্যক্তি/ ব্যক্তিবর্গ উপরিউক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে আদর্শচ্যূৎ হয় এবং সংগত কারনেই জনবিচ্ছিন্নতা, গনধিক্কার, তিরস্কার ও হিরো থেকে জিরো হওয়ার ফলে খাওয়া-দাওয়া, ঘুম-বিশ্রাম ইত্যাদি কমে যায় এবং পুষ্টিহীন হয়ে আবোল-তাবোল বয় বক্তৃতা ও কর্ম-কান্ড করে থাকে; যেমন, ১৯৭৩ সালে রব-জলিল- ইনু- মান্নারা আদর্শচ্যুৎ হয়ে এবং উপরে বর্নিত কারনে পুষ্টিহীনতার ফলে কান্ড-জ্ঞানহীন ভাবে এক বিজ্ঞানের পুর্বে আরো একটি বিজ্ঞান যুক্ত করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্তের ভুয়া মতাদর্শ বিস্তারের চেষ্টা করে।প্রসংগত উল্লেখ্য যে, সমাজতন্ত্র হলো বিজ্ঞান ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্হা; তাই এক বিজ্ঞানের পুর্বে আরো একটি বিজ্ঞান যুক্ত করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মতাদর্শটি ভূল বলে মনে করা হয়।তাই ভূল মতাদর্শ প্রচারে ব্যর্থ হয়ে তথা কথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা গনবাহিনী গঠন করে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির লোকজন সহ মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, লুটতরাজ, ব্যাংক ডাকাতি, পাটের গুদামে আগুন ইত্যাদি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে এক ধরনের ভয়াবহ অরাজতা সৃষ্টি করে।যদিও তারা ১৯৭২ সালে মুজিববাদ আদর্শের প্রবক্তা হয়ে সারা দেশ চষে বেরিয়েছে। কিন্তু ১৯৭৩ সালের গোড়ার দিকে বিড়ালা টাটার আর্থিক প্রনোদনা পেয়ে মুজিববাদের খোলস পাল্টিয়ে “আদর্শচ্যূতি” ও “ডিগবাজি” ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তদানিন্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাড়ী আক্রমন করে তথাকথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা “গোপনীয় অবস্হান বা আন্ডার গ্রাউন্ডে” গিয়ে উপরে বর্নিত অবৈজ্ঞানিক অপকর্ম শুরু করে।এতদভিন্ন, উপরি উক্ত কর্মকান্ডের সময় তারা গ্রাম বা শহর পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি তথা রাজাকার, আলবদর, আল সামস, মুসলিম লীগের শান্তি কমিটির সদস্য সহ অন্যান্য পাকি পন্থিদের সংস্পর্শে এসে সংক্রামিত হয়ে আদর্শচ্যূতি ও ডিগবাজি ভাইরাসের modified form “back to the pavilon virus”দ্বারা contaminated হয়ে পাকি প্রেম ভাইরাস এ আক্রান্ত হয়। অতপর, তারা মুক্তিযুদ্ধের অমর বানী “জয় বাংলা” কে বিসর্জন দিয়ে নারী নির্যাতন, জ্বালাও পোড়াও ও মানুষ হত্যায় পাকি হায়েনাদের ব্যবহৃত জিন্দাবাদে দীক্ষা গ্রহন করে। অধিকন্তু তাদের শ্রেনী শত্রু খতমের ভয়ে একদিকে স্হানীয় ভাবে খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হয় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ কমে যায়।অন্যদিকে বিশ্ব বেইমান গোলাম আযমের প্ররোচনায় মার্কিন-চৈনিক-সৌদি-পাকিদের ষড়যন্ত্রে পিএল-৪৮০’র খাদ্য বহনকারী জাহাজকে about turn করিয়ে দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে সাধারন জনগনকে পাকি প্রেম ভাইরাসে উদ্ভূদ্ধ করার ঘৃন্য ষড়যন্ত্র করা হয়।
এই সুযোগে কথিত দুর্ভিক্ষের আগাম প্রচারের মানষে হলুদ সাংবাদিকতায় সিদ্ধ হস্ত এবং ডিগবাজী ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যারিষ্টার মইলুল হোসেনের তত্বাবধানে কিছু সংখ্যক সাংবাদিক কুঁড়িগ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধি “বাসন্তী”কে ১২ টাকার শাড়ী কাপড় না পড়িয়ে ৪০ টাকা মূল্যের মাছ ধরার জাল পড়িয়ে অর্ধনগ্ন ছবি তুলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার করে তদানিন্তন সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করে পাকি ষড়যন্ত্রকে শক্তিশালী করার অপচেষ্টা করে।এতদভিন্ন, তথাকথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীদের অবৈজ্ঞানিক অপকর্মের মুহুর্তে কুঁড়েঘর ও কাস্তে মার্কা কমিউনিষ্টরা বংগবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর শ্লোগান দিয়ে মুলত: বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীদের অপরাজনীতিকেই সমর্থন করে।
আর এই এই সুযোগে অনুকুল পরিবেশ পেয়েই পাকি প্রেম ভাইরাসে আক্রান্ত খুনি জিয়া ও বিশ্বাস ঘাতক মোস্তাক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীন বাংলার মহান স্হপতি, বাঙালী জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকিস্হানের আজ্ঞাবহ কলোনি রাষ্ট্রে পরিনত করে। ক্ষমতায় আসীন হয়েই পাকি প্রেমি খুনি জিয়া পরাজিত শক্তি ও পাকিস্হানকে খুশী করার জন্য গন হারে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য হত্যা, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির অসংখ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যা, বিশ্ব বিবেককে ভূলুন্ঠিত করে জেলখানায় জাতীয় চারনেতাকে হত্যা,অভিযুক্ত রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদেরকে জেলখানা থেকে মুক্তি দান, মানবতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী করে বংগবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করন,”জয় বাংলা”কে বিসর্জন দিয়ে নারী নির্যাতনের জিন্দাবাদ শ্লোগান পুন:প্রতিষ্ঠা,বাংলাদেশ বেতারকে রেড়িও বাংলাদেশে রুপান্তর এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদকে নির্বাসনে পাঠিয়ে বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদ আমদানী করে বাংলাদেশকে back to the pavilon এ ফেরৎ নিয়ে আসে। এতদভিন্ন, money is no problem শ্লোগান দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে দূর্নীতি পরায়ন ও অকার্যকর রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করে। এরই ধারাবাহিকতায় খুনী জিয়ার সহধর্মীনি বাংলার ঘষেটি বেগম খালেদা জিয়া তার কুলাংগার ছেলের মাধ্যমে গ্রেনেড ছুড়ে বংগবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা, এতিমের টাকা চুরি ও খাম্বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা বিদেশে পাচার, সাকা চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী, মোজাহীদ ও কাদের মোল্লাদের মতো কুখ্যাত মানবতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্হান গ্রহন এবং সরকার প্রধান হয়েও পাকি হায়েনা বাহিনীর সামান্য একজন মেজর জানজুয়ার আন্তোষ্টিক্রিয়ায় শোক বানী প্রেরন করে প্রমান করেছে যে “শি ইজ বাই দি পাকিস্হান, অফ দি পাকিস্হান এ্যান্ড ফর দি পাকিস্হান”।
অধুনা না হলেও প্রায় বছর দশ বার আগে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ সিডর ও আইলা নামক ঘুর্নিঝড় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সাথে সাথে রাজনীতিতেও রেখে গেছে এক ধরনের ভয়ংকর ও অদৃশ্য ভাইরাস। বিজ্ঞানীগন এখনো উক্ত ভাইরাসটিকে সনাক্ত করতে পারেন নাই; তবে ধারনা করা হচ্ছে কয়েক ধরনের মারাত্মক ভাইরাস একএিত হয়ে উহা দানবীয় ভাইরাসে রুপ ধারন করেছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন ভিন্নমত ও ভিন্ন পথের ভাইরাস আক্রান্ত রাজনৈতিক ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবি সমন্বয়ে গঠিত ড. কামাল সাহেবের তথাকথিত জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের দিকেই ইংগিত করছেন। তাঁদের যুক্তি হলো উক্ত ফ্রন্টে রয়েছে বিএনপি জামাত শিবির যুদ্ধাপরাধী,আদর্শচ্যুত ভূয়া বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের তথাকথিত কমরেডবৃন্দ এবং স্বাধীনতার কক্ষ পথ থেকে বিচ্যুত/ পতিত এবং আদর্শচ্যুত কিছু সংখ্যক লোভী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যারা প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত।বর্নিত অবস্হায় জ্যোতিষ বিজ্ঞানীগন মনে করেন একাধিক ভাইরাস এক সাথে ফ্রন্টের সহযোগীদের মধ্যে সংক্রামিত হয়ে একটি দানবীয় রুপ ধারন করে বড় ধরনের বিস্ফোরন বা একাদিক ভাইরাসের মিশ্রন রিএ্যাকশনে রাজনীতি ও দেশ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিশেষে অত্যন্ত ক্ষোভ, ঘৃনা ও পরিতাপের সাথে বলতে চাই, তথাকথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীদের অবৈজ্ঞানিক অপকর্মের ফলে দেশে ভয়াবহ অরাজক পরিস্হিতির সৃষ্টি হয় এবং এই সুযোগে পরাজিত শক্তির নেতা খুনী জিয়া ও বিশ্বাস ঘাতক খন্দকার মোস্তাক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে।আজ যদি বংগবন্ধু বেঁচে থাকতেন, তবে বাংলাদেশ দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ উন্নত দেশের স্বীকৃতি লাভ করতো।কিন্তু খুনীরা বংগবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে প্রায় চল্লিশ বৎসর পিছিয়ে দিয়েছে।তবে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমতে জাতির জনকের বেঁচে যাওয়া কন্যা জননেএী মহাত্মা শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে ইতিমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত করেছেন।তাই আসুন আমরা কথিত ভাইরাস সংক্রামিতদের থেকে দুরে থাকি(stay safe) ও দুর্নীতির উর্ধে থেকে জনননেএী শেখ হাসিনার হাত কে শক্তিশালী করে জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন স্বাধের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।
জয়বাংলা। জয় বংগবন্ধু।শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবি হউন।বাংলাদেশ চিরজীবি হউক।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষিবিদ
ই-মেইল: [email protected]
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন