স্বীকৃতি বড়ুয়া, ১৬ই আগস্ট, ২০২০, নিউইয়র্ক ||
বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে পালিত হল জাতীয় শোকদিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী। ১৫ই আগষ্ট ২০২০, শনিবার অনলাইনে জুম-এর মাধ্যমে আয়োজিত আলোচনা সভায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে স্বাধীনতা বিরোধী খুনী চক্রের হাতে নিহত সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে নেতৃবৃন্দরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভায় বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ, ১৫ই আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন দলের ও নেতৃবৃন্দের ভূমিকা, বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়ন নিয়ে আলোকপাত করেন।
সভাপতি ডঃ নুরুন নবী বলেন ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান সশস্ত্র বাহিনী শপথ ভঙ্গ করেছেন, যা সশস্ত্র বাহিনীর আইনে মৃত্যুদণ্ডের অপরাধ। ষড়যন্ত্রের কথা ২০শে মার্চ জানতে পেরেও শপথ অনুযায়ী ষড়যন্ত্রের সংবাদ সাথে সাথে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা, প্রেসডেন্টকে অবহিত করা, ষড়যন্ত্রকারীদেরকে গ্রেফতার করা - জিয়াউর রহমান তার কোনটাই করেননি, যদিও প্রায় পাঁচ মাস সময়ে পেয়েছিলেন। খন্দকার মোস্তাক এই ষড়যন্ত্রের কথা ২রা আগস্ট জানতে পারেন, কেবিনেট সদস্য হয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুকে অবহিত না করে নিজেই ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত মিলান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, সংবিধানকেও অবমাননা করা হয়। প্রেসিডেন্ট মৃত্যুবরণ করলে সংবিধান অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেশ পরিচালনা করার কথা ছিল। কিন্তু ক্ষমতালোভী মোস্তাক নিজেই ক্ষমতায় বসেন। এই ষড়যন্ত্রে আন্তর্জাতিক হাত রয়েছে কিনা তাও পরিপূর্ণ তদন্তের প্রয়োজন আছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে পর্যন্ত সৌদি আরব ও চিন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় সৌদি আরব ও চিন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এতেই বুঝা যায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পরাজয়কে তারা মেনে নিতে পারেননি।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন বঙ্গবন্ধু এমন একজন মহান নেতা ছিলেন, যিনি সর্বস্তরের মানুষ এমনকি ধর্মীয় মৌলবাদীদের পর্যন্ত বাঙালী জাতীয়তাবাদে একত্রিত করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানীরাও হত্যা করতে পারত এবং পাকিস্তানে কারাগারে থাকা অবস্থায় পাশে কবর পর্যন্ত কোরা হয়েছিল, কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুর মত বিশাল নেতাকে হত্যা করার সাহস করেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে বাঙালীরাই, যে বাঙালীদের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি জীবনের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন।
২১শে আগস্টে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে সেই বাঙালিরাই আবার বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার অপচেষ্টা চালায়। বক্তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আজ উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু আমরা শঙ্কিত তার জীবন নিয়ে। আমরা বিএনপি কিংবা জামায়েত নিয়ে যত শঙ্কিত নই, তত শঙ্কিত শেখ হাসিনার চারদিকে ঘুর ঘুর করা সুযোগসন্ধানী মোস্তাকের মত নেতাদের নিয়ে। ১৫ই আগস্টের মাধ্যমে বাঙালী জাতির ইতিহাসে কলঙ্কের যে কালিমা লেপন হয়েছে, সেই কলঙ্কের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই কামনাই আমরা করি। সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতেই হবে, কারণ শেখ হাসিনাই হচ্ছে বাঙালীর শেষ ভরসা। শেখ হাসিনা বাঁচলেই, বাংলাদেশ বাঁচবে।
সভায় যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে নিম্নোক্ত দাবি জানানো হয় ঃ
১) তদন্ত কমিশন গঠন করে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোস্তাকের মরণোত্তর বিচার করা।
২) তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে পাকিস্তান, সৌদি আরব ও চিনসহ অন্যান্য দেশের সম্পৃক্ততা যাচাই করা।
৩) জিয়াউর রহমানসহ যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নামের পূর্বে "শহীদ" শব্দ ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ করা।
৪) জিয়াউর রহমানের কবরকে "মাজার" বলা আইনত নিষিদ্ধ করা।
৫) রাষ্ট্রীয় সম্পদ সংসদ ভবনের জায়গা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর অন্য কোথাও স্থানান্তর করা ।
সভায় বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা ড. বামন দাশ বসু, সহসভাপতি ফাহিম রেজা নূর, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাফায়েত চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক দস্তগির জাহাঙ্গীর (ওয়াশিংটন), বঙ্গবন্ধু পরিষদ ক্যালিফোর্নিয়া শাখার সভাপতি নজরুল আলম, সহসভাপতি শহীদ আলম, সহসভাপতি শওকত আলম, সাধারণ সম্পাদক রানা মাহমুদ, সদস্য রানা বড়ুয়া, সদস্য তপন মণ্ডল, বঙ্গবন্ধু পরিষদ আটলান্টা শাখার সভাপতি সাংবাদিক রুমি কবির, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব রহমান ভুঁইয়া, বঙ্গবন্ধু পরিষদ বোস্টন শাখার আহ্বায়ক সফেদা বসু, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নিউ ইংল্যান্ড শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান, মোহাম্মদ হোসেন রানা, প্রমুখ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন