মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বাকি দুটি আসনে ভোট হবে আজ। এ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই দুই আসনে জয়ী হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি। তবে বাইডেনও পিছিয়ে নেই। ট্রাম্প এবং বাইডেন, দু’জনই ভোটের আগে সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার ভোটারদের নিজেদের দলে টানতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এই দুই নেতা। আজকের ভোটেই ভোটাররা ঠিক করবেন যে, সিনেটের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে। ডেমোক্র্যাট নাকি রিপাবলিকান, কারা শেষ হাসি হাসবে? এই ভোটের ফলাফল জানতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যেতে পারে। জর্জিয়ায় ইতোমধ্যেই ৩০ লাখের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। ওই অঙ্গরাজ্যের নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ৪০ শতাংশই আগাম ভোটে অংশ নিয়েছেন। ওই দুই আসনে ডেমোক্র্যাট পার্টির জন অসফ ও রেভারেন্ড রাফায়েল ওয়ারনকের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন দুই রিপাবলিকান প্রার্থী ডেভিড পারডু ও কেলি লফলার। ডেমোক্র্যাটরা যদি ভোটে জিতে যায় তবে কংগ্রেস এবং হোয়াইট হাউসের পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে যাবে। কিন্তু যদি রিপাবলিকানরা জয়ী হয় তবে পরবর্তীতে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। ৪ জানুয়ারি সোমবার আটলান্টায় এক সমাবেশে অংশ নিয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জর্জিয়ার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, পুরো দেশ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আগামী প্রশাসনের জন্য সিনেটের নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ বলে জোর দিয়েছেন তিনি। অপরদিকে, জর্জিয়ায় রিপাবলিকানদের জয়ের স্বপ্ন দেখছেন ট্রাম্প। গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেন জো বাইডেন। > অপরদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি ভোট। তবে ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার পরও নিজেকে পরাজিত মানতে নারাজ ছিলেন ট্রাম্প। এমনকি তিনি বাইডেনের জয়ী হওয়ার বিষয়টিও মেনে নিতে পারেননি। > > এতসব বিতর্কের মধ্যেই আরও নতুন খবর সামনে এসেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বদলাতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন কর্মকর্তাকে নাকি ভোট খুঁজে বের করার হুকুম দিয়েছিলেন ট্রাম্প। নির্দেশ না মানলে অনেক ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন বলেও সেই কর্মকর্তাকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে ট্রাম্পের ফোনকলের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। তা থেকেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। শনিবারের ওই ফোন কল অনুযায়ী, জর্জিয়ায় নির্বাচনের ফলাফল বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প। ওই অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে ১১ হাজার ৭৭৯ ভোট বেশি পেয়ে জয় নিশ্চিত করেন বাইডেন। এর আগেও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ফলাফল বদলানোর চেষ্টা করেও তিনি সফল হননি। তিনি ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে সামরিক বাহিনীকেও ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ১০ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, নির্বাচনে জালিয়াতির দাবি প্রমাণে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করলে তার পরিণাম ভয়াবহ হবে। এই পদক্ষেপকে বেআইনি উল্লেখ করে তারা বলেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র অসাংবিধানিক ভূখণ্ডে পরিণত হবে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের ১০ সদস্যের স্বাক্ষরিত নিবন্ধটি সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়। আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ট্রাম্পের সাংবিধানিক দায়িত্ব নিয়ে নিবন্ধে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে তারা বলেন, ‘ফল নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় শেষ, সংবিধান অনুযায়ী নিয়মমাফিকভাবে ইলেকটোরাল কলেজের ভোট গণনার সময় এসেছে।’ জর্জিয়ায় একাধিকবার অডিট ও নির্বাচনের ফলাফল পুনরায় গণনা করা হয়েছে। এরপরেও সেখানে বাইডেনই জয়ী হয়েছেন। আগামী ৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সিনেটে এই ফলাফল ঘোষণা হবে। কংগ্রেসের উভয় কক্ষ এক যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের হিসাব চূড়ান্ত করবে। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন