নিজস্ব প্রতিবেদক।।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের অর্থ আত্মসাৎ, দূর্নীতি ও প্রতারনার অভিযোগে বর্তমান সভাপতি সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কোষাধ্যক্ষকে আসামি করে চাঁদপুরের বিচারক আমলী আদালতে মামলা করা হয়েছে। চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০১৭ সালের সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা, কল্যাণ ফান্ডের টাকা এবং অনুদানের টাকাসহ ৫,৭২,৮০০/- (পাঁচ লক্ষ বাহাত্তর হাজার আটশত) টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ ও দূর্নীতির অভিযোগে দন্ড বিধির ৪০৬/৪২০/১০৯ ধারায় মামলা করেছেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শান্ত। মামলা নম্বর ৭৮২ /২০২০ইং তারিখ ৩১-১২-২০২০ খ্রিঃ। বাদীর অভিযোগের দীর্ঘ শুনানি ও পর্যালোচনা শেষে চাঁদপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চাঁদপুরের ইন্সপেক্টরকে নির্দেশ দিয়েছে।
মামলার আসামিরা হচ্ছেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০১৭ সালের সভাপতি এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০১৮ সালের অভ্যন্তরীন অডিট কমিটির সদস্য শরীফ চৌধুরী, ২০১৭ সালের সাধারণ সম্পাদক জি.এম শাহীন, ২০১৭ সালের কোষাধ্যক্ষ এম.এ লতিফ এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি ও ২০১৮ সালের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী।
মামলার বাদী শাহাদাত হোসেন শান্ত আদালতে অভিযোগ করেন, আসামিগণ ঠক, প্রতারক, অর্থ আত্মসাৎকারী এবং দূর্নীতিবাজ লোক। চাঁদপুর পৌরসভা কর্তৃক বরাদ্দ দেওয়া সরকারি ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠানটি সরকারি-বেসরকারি এবং সদস্যদের প্রদত্ত চাঁদায় পরিচালিত হয়ে থাকে। সদস্যদের কল্যাণে কাজ করা এই প্রতিষ্ঠানটির ভবন নির্মাণের জন্য বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছেন। আসামিগণ চাঁদপুর প্রেসক্লাবের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে থেকে ২০১৭ সালের সদস্যদের বার্ষিক চাঁদার টাকা, কল্যাণ ফান্ডের টাকা এবং অনুদানের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে।
আসামি শরীফ চৌধুরী, জি.এম শাহীন ও এম.এ লতিফ ২০১৭ সালে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ৯১ জন সদস্য থেকে রসিদের মাধ্যমে বার্ষিক সদস্য নবায়ন ফি ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা এবং সদস্য কল্যাণ ফান্ডের ফি ৩০০/- (তিনশত) টাকা করে প্রতি সদস্য থেকে মোট ৮০০/- (আটশত) টাকায় এক বছরের ৭২,৮০০/- (বাহাত্তর হাজার আটশত) টাকা গ্রহণ করেছে । বাদীর কাছ থেকে গত ২১-০৭-২০১৭খ্রিঃ তারিখে প্রেসক্লাবের পাকা রশিদের মাধ্যমে ৮০০/- (আটশত) টাকা গ্রহণ করেছে। কিন্তু উক্ত টাকা প্রেসক্লাবের কোষাগারে জমা না দিয়ে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে তা আত্মসাৎ করেছে। ২০১৭ সালের প্রদত্ত অর্ধ বার্ষিক, বার্ষিক এবং সম্পূরক হিসাব বিবরণীর আয়-ব্যয়ের কোথায়ও সদস্য নবায়ন ফি ও কল্যাণ ফান্ডের ফি জমা দেখায় নি।
২০১৮ সালে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির সার্বিক পর্যবেক্ষণের ৩নং ক্রমিকে উল্লেখ করা হয় “২০১৭ সালের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব ও সম্পূরক হিসাবের কোথায়ও ওই বছরের সদস্য ফি বাবদ আয়ের কথা উল্লেখ নেই। এই বিষয়ে ওই বছরের দায়িত্বরত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের কাছে তথ্য চাওয়ার জন্য ২০১৮ সালের কমিটির কাছে সুপারিশ করা হলো।” ২০১৭ সালের সভাপতি আসামি শরীফ চৌধুরী উক্ত অডিট কমিটির সদস্য হিসেবে বিষয়টি তখন অবহিত হন এবং অডিট প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তারপরও তিনি অন্যান্য আসামিদের সাথে আলোচনা করে ২০১৭ সালের সদস্য নবায়ন ফি ও কল্যাণ ফান্ডের ফি চাঁদপুর প্রেসক্লাবের কোষাগারে জমা দেন নি। আসামি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী ২০১৮ সালের সভাপতি থাকাবস্থায় অডিট প্রতিবেদনটি নিজ স্বাক্ষরে বুঝে নেওয়া সত্ত্বেও ২০১৭ সালের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উক্ত টাকা উদ্ধারে কোন প্রকার সাংগঠনিক ব্যবস্থা অথবা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বরং তথ্যটি গোপন রেখে উক্ত টাকা আত্মসাৎ ও দূর্নীতিতে সহায়তা করেছেন।
মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়, চাঁদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার ও বাংলাদেশ পুলিশের মহা-পরিচালক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক ২০১৭ সালে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। তখন চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর প্রদানের জন্য প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আইজিপি এ কে এম শহিদুল হকের কাছে মৌখিকভাবে আবেদন করা হয়। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে আইজিপি শহিদুল হক চাঁদপুর প্রেসক্লাবে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর কেনার জন্য তখন ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা অনুদান প্রদান করেন। ২০১৭ সালের চাঁদপুর প্রেসক্লাবের বার্ষিক খাতওয়ারী হিসাবের ১৩ নং ক্রমিকে যা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু আসামিগণ উক্ত ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা দিয়ে কোন প্রকার জেনারেটর না কিনে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে উক্ত টাকা আত্মসাৎ, লুটপাট ও দুর্ণীতি করেছে। যার প্রমাণ আসামিরা চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০১৭ সালের (১ জানুয়ারী থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত) খাতওয়ারী আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণীর ব্যয়ের খাতের ৪০নং ক্রমিকে হিসাব নিরীক্ষা ও করণিক ব্যয় ১৫,০০০/- (পনের হাজার) টাকা উল্লেখ করেন। একই খরচ আবার ২০১৭ সালের খাতওয়ারী সম্পূরক হিসাব বিবরণীর (২৪-১২-২০১৭ থেকে ৩১-১২-২০১৭) পর্যন্ত এর ব্যয়ের খাতে ১৬নং ক্রমিকে অডিট ও নিরীক্ষা নামে ১৫,০০০/- (পনের হাজার) টাকা খরচ পুনরায় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন।
একইভাবে ২০১৭ সালের (১ জানুয়ারী থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত) খাতওয়ারী আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণীর ব্যয়ের খাতের ১৪নং ক্রমিকে প্রেসক্লাবে উদ্যানে গাছ লাগানো ও পরিচর্যা বাবদ ১৪,৩৬৪/- (চৌদ্দ হাজার তিনশত চৌষট্টি) টাকার খরচ দেখান। একই খরচ আবার ২০১৭ সালের খাতওয়ারী সম্পূরক হিসাব বিবরণীর (২৪-১২-২০১৭ থেকে ৩১-১২-২০১৭) পর্যন্ত এর ব্যয়ের খাতে ৮নং ক্রমিকে প্রেসক্লাবের উদ্যান ও সংস্কার বাবদ ৮,৫০০/- (আট হাজার পাঁচশত) টাকা খরচ দেখিয়ে উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেন।
খাতওয়ারী হিসাব বিবরণী-২০১৭ (১ জানুয়ারী থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ব্যয়ের খাতের ৭নং ক্রমিকে সদস্যদের জন্য ব্লেজার তৈরি বাবদ ৩,৭৯,০০০/- (তিন লক্ষ উনআশি হাজার) টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। একই খাতের খরচ ২০১৭ সালের খাতওয়ারী সম্পূরক হিসাব বিবরণীর (২৪-১২-২০১৭ থেকে ৩১-১২-২০১৭) পর্যন্ত এর ব্যয়ের খাতে ৭নং ক্রমিকে ৫৯,০০০/- (উনষাট হাজার) টাকা খরচ পুনরায় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন। ২০১৭ সালের প্রেসক্লাবের সদস্যদের জন্য ব্লেজার বাবদ ২ (দুই) বারে মোট ব্যয় ৪,৩৮,৫০০/- (চার লক্ষ আটত্রিশ হাজার পাঁচশত) টাকা খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার পরেও আসামিগণ ২০১৭ সালের প্রেসক্লাবের সদস্যদের ব্লেজার বানানোর সেলাই মুজুরী বাবদ ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা মামলার ১০নং স্বাক্ষী চাঁদপুর শহরের কুমিল্লা রোডস্থ টপ স্টার ফেব্রিক্স এন্ড ট্রেইলার্স এর মালিক বিক্রম সাহাকে অদ্যবধি প্রদান করেন নি। উল্লেখিত টাকাও আসামিগণ প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ ও দুর্ণীতি করেছেন। বিক্রম সাহার গত ২৯-১২-২০২০ইং তারিখে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা পাওনা দাবী করে দেওয়া ক্যাশ মেমো আদালতে দাখিল করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১২ অনুযায়ী সকল আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রেসক্লাবের সভায় অনুমোদন করানোর বাধ্যবাধকতা ও নিয়ম থাকা সত্ত্বেও ২০১৭ সালের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের প্রদত্ত গত ২৪-০৪-২০১৭ থেকে ৩১-১২-২০১৭ইং তারিখের আয়-ব্যয়ের সম্পূরক হিসাবের ৩,৫০,০৮৩.৩৩/- (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার তিরাশি টাকা তেত্রিশ পয়সা) টাকা ২০১৮ সালের সভাপতি আসামি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী তার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে প্রেসক্লাবের কোন সভায় উপস্থাপন ও অনুমোদন না করে গোপন করে রাখেন। এছাড়াও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১২ অনুযায়ী প্রেস ক্লাবের যাবতীয় লেন-দেন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার বাধ্য বাধকতা থাকলেও আসামিগণ তাহা পালন না করে প্রতিনিয়ত অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।
মামলায় অভিযোগের বিবরণ অনুযায়ী সকল তথ্য প্রমাণের ফটোকপি অভিযোগের সাথে দাখিল করা হয়। আসামিগণ সবাই পরস্পর যোগসাজশে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ৫,৭২,৮০০/- (পাঁচ লক্ষ বাহাত্তর হাজার আটশত) টাকা প্রতারণা ও দূর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে প্যানেল কোড এর ৪০৬/৪২০/১০৯ ধারার অপরাধ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন