সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা ||
প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলা বছরের মাঘ মাসের প্রথম দিনটি পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইন উৎসব হিসেবে উদযাপন করেছেন পুরান ঢাকার মানুষ।
আজ শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনে ডিএসসিসি সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তিনি নিজেই ঘুড়ি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। এসময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “এই প্রথম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ঘুড়ি উৎসব করা হচ্ছে। আমরা এই উৎসব ঢাকাব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতায় আজকে ৭৫টি ওয়ার্ডে ঘুড়ি উৎসব করা হচ্ছে। আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে পুরো ঢাকাবাসী তা উপভোগ করছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ঢাকার ঐতিহ্যকে লালন করা, সংরক্ষণ করা, পালন করা। সেই লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখন থেকে প্রত্যেক বছর এই আয়োজন করবে। এর মাধ্যমে আমরা ঢাকার সকল সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে পারব।
তিনি আরো বলেন, “করোনা আমাদেরকে গত মার্চ থেকে অনেক ক্ষতি করেছে। তার মধ্যেও যে আমরা উৎসব করতে জানি, আনন্দ করতে জানি তা সাকরাইন উৎসবের মাধ্যমে আমরা বিশ্বব্যাপী জানাতে চাই।”
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব হাসিবুর রহমান মানিক শহীদ আব্দুল আলীম মাঠে বিশাল জমকালো ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করেন। দুপুর ১২টায় তিনি নিজেই ঘুড়ি উড়িয়ে উৎসবের শুভ সূচনা করেন। এতে শত শত ঘুড়ি প্রেমিক অংশ নেয়।
কাউন্সিলর মানিক বলেন,“ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃতে এই পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে ধারণ করার জন্য এই আয়োজন। আমি মনে করি এই আয়োজন একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।”
পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইন উৎসবকে ঘুড়ি উৎসবও বলা হয়। তাই হয়ত দিনের শুরু থেকেই পুরান ঢাকায় গান-বাজনা-পিঠে-পুলির আয়োজনের পাশাপাশি চলে ঘুড়ি-নাটাই নিয়ে দুরন্তপনার উৎসব।
সাকরাইন শুধু সনাতন ধর্মের মানুষ উদযাপন করলেও তা এখন পুরান ঢাকার অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই সাকরাইন বা ঘুড়ি উৎসব পুরান ঢাকাতে সর্বজনীন এক উৎসব হিসেবে উদযাপন করা হয়। সকাল থেকেই এসব এলাকার ছাদে ছাদে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা। ছোট বড় সবার অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে মুখরিত হতে থাকে প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদ। তবে সকালের তুলনায় বিকেলে দেখা গেছে পরিপূর্ণতা। উৎসবের আনন্দ আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে কিশোরদের ঘুড়ি কাটাকাটি খেলা।
লালবাগ, নারিন্দা, গেন্ডারিয়া, মুরগীটোলা, ধুপখোলা, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, কলকতাবাজার, ধোলাই খাল, নারিন্দা, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতী বাজার এবং সদরঘাট এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি ওড়ান। আয়োজন করেন নানা খাবারের।
এছাড়া সারাদিন ঘুড়ি উৎসব শেষে সন্ধ্যার পর থাকছে আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজি ফোটানো ও ফানুস উড়ানো। যা উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন