ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানো জরুর

।। মুহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার ।।
করোনার ভয়াবহ ছোবলে গোটা মানবজাতি অনিশ্চয়তার মধ্যে নিপতিত। বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সুরক্ষামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি।

ইতোমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। সরকারও স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস চালু করেছে। কিন্তু অনলাইন কিংবা দূরশিক্ষণের মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পঠনের মধ্যে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত গবেষণায় স্কুল খুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে ইউনিসেফ। সংস্থাটির শিক্ষা কার্যক্রমের বৈশ্বিক প্রধান বলেছেন, করোনার কারণে দেশে দেশে স্কুল বন্ধ।

এতে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা ও সুরক্ষার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। স্কুল থেকে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর তথ্য খুব কমই আছে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়গুলো খোলার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া এবং শিশুদের যথাসম্ভব নিরাপদ রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও স্কুল খুলে দেয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পড়েছে চরম সঙ্কটে। ইতোমধ্যে ৪০ হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গত এক দশকে শিক্ষা খাতে দেশের যে অর্জন, তা ৯-১০ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় ম্লান হওয়ার পথে।

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি; কিন্তু আমলে নিতে হবে যে, দেশীয় প্রেক্ষাপটে করোনা সংক্রমণের বাস্তবতাও রয়েছে। তাই স্কুল খোলার আগে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা সবাই জানি, শিক্ষা শুধু তথ্য জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং নানা ধরনের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। এই মিথস্ক্রিয়াটা কেবল স্কুলেই সম্ভব। বাস্তবে শিশুরা পরিবারের বাইরে যেখানে মেধা, মননশীলতা ও বেড়ে ওঠার পরিবেশ পায়, সেটি হলো স্কুল। স্কুল শুধু শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে না, শিক্ষার্থীর নৈতিকতা, আচরণ, সামাজিক মূল্যবোধসহ বিভিন্নভাবে তাকে তৈরি করে।

অফিস আদালত সবকিছু চলছে, বন্ধ হয়ে আছে শিক্ষাকার্যক্রম। আমরা জেনেছি, করোনা একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এটির সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমাদের চলতে হবে। এ কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে আরো কয়েক বছরেও খোলা কি সম্ভব হবে? এভাবে দীর্ঘদিন যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার কী হবে?

লকডাউনে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য সরকার চাইলে এমন নিয়ম করতে পারে যে, প্রতি ক্লাসে প্রতিদিন অর্ধেক শিক্ষার্থী ক্লাস করবে। জোড় রোল একদিন বিজোড় রোল একদিন। পাশাপাশি নিয়ম মানার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থী কম হলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পাঠদান কিছুটা হলেও অব্যাহত রাখা যাবে। স্কুলগুলোতে স্যানিটাইজার ব্যবহার, হাত ধোয়া, তাপমাত্রা মাপাও জরুরি।

আমরা মনে করি, কখন কোন পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে, তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত নির্দেশনা দরকার। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। একই সাথে শিশুদের নিরাপদে স্কুলে ফেরার প্রস্তুতি নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বাড়াতে বড় ধরনের প্রচারাভিযান চালাতে হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থাকে বড় ধরণের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে হলে বিকল্প কিছু বোধহয় আমাদের ভাবতেই হবে। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন।

[ লেখকঃ নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আপন আলো; বিশেষ প্রতিবেদক, শ্যামল বাংলা ডট নেট; সাবেক কাউন্সিলর, বিএফইউজে ; সদস্য, ডিইউজে]

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন