আগামীকাল ২০ আগস্ট, ২০২০ ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ গণআজাদী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।
তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আশির দশকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অবধি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন৷ পরবর্তীকালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগে যোগ দেন। মাওলানা তর্কবাগীশ পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ে সংগ্রামরত ছাত্র জনতার উপর পুলিশী নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে প্রাদেশিক পরিষদ থেকে বেরিয়ে এসে মহান ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন ৷ তিনি ১৯৫২ সালে ২২শে ফেব্রুয়ারি মুসলীম লীগ ত্যাগ করে প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দল গঠন করেন এবং নুরুল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। পরের দিন তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। আওয়ামী লীগের দলীয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তান গণপরিষদে ১৯৫৫ সালের ১২ই আগস্ট তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। মাওলানা তর্কবাগীশ ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯০০ সালের ২৭শে নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার তারুটিয়া গ্রামে জন্ম নেয়া আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ বড়পীর হযরত আবদুল কাদির জিলানী এর বংশধর। শৈশব থেকেই তার মধ্যে দেশপ্রেমের উন্মেষ ঘটে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি জমিদার মহাজনদের বিরুদ্ধে অসহায় দুধ বিক্রেতাদের সংগঠিত করে দুধের ন্যায্যমূল্য প্রদানে মহাজনদের বাধ্য করেন।
১৯১৯ সালে তিনি খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯২২ সালে ২২ বছর বয়সে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী ঐতিহাসিক 'সলংগা আন্দোলন'-এ নেতৃত্ব দান করেন, যার জন্য তাকে কারাভোগ করতে হয়। এই 'সলংগা আন্দোলন' ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে "রক্তসিঁড়ি" হিসেবে পরিচিত ৷ ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত বাংলার এম.এল.এ হিসেবে তৎকালীন ব্যবস্থাপক পরিষদে পতিতাবৃত্তি নিরোধ, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ও বিনা ক্ষতি পূরেনে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি নির্মাণে যে সব মনীষী কালজয়ী অবদান রেখেছেন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম৷ তিনি একজন সুসাহিত্যিকও ছিলেন ৷ তার রচিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে : শেষ প্রেরিত নবী, সত্যার্থে ভ্রমণে, ইসলামের স্বর্ণযুগের ছিন্ন পৃষ্ঠা, সমকালীন জীবনবোধ, স্মৃতির সৈকতে আমি, ইসমাইল হোসেন সিরাজী ইত্যাদি ৷ জাতীয় ইতিহাসের এই ব্যক্তিত্ব ১৯৮৬ সালের ২০শে আগস্ট ইন্তেকাল করেন।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে তার গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ মরহুম মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে "স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০০" (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।
আগামীকাল আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ গণআজাদী লীগের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ সভাপতি সৈয়দ শামসুল আলম তর্কবাগীশ ও মহাসচিব মুহম্মদ আতাউল্লাহ খান আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে যথাযোগ্য মর্যাদায় ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য দলের সকল স্তরের কমিটির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন