মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধি ||
৪০ বছর ধরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পুষেছিল রাশিয়া। তোতাপাখির মতোই তিনি পাশ্চাত্যবিরোধী প্রচারণা চালাতে অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন যে, মস্কোতে এর জন্য আনন্দ উদযাপিত হয়েছিল। সাবেক রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির এক গুপ্তচর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ইউরি শিভেতস নামের ওই গুপ্তচরকে ১৯৮০ সালে ওয়াশিংটনে নিয়োগ দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। তিনি রুশ বার্তা সংস্থা তাসের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং নাগরিকত্ব পান।
শিভেতসকে মূল সূত্র ধরে সম্প্রতি ‘আমেরিকান কমপ্রোম্যাট’ শিরোণামে নতুন বই লিখেছেন মার্কিন সাংবাদিক ক্রেইগ আঙ্গার। তার এই বইটিতে ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ট্রাম্পকে ‘ক্যামব্রিজ ফাইভের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন ইউরি শিভেতস। এই ‘ক্যামব্রিজ ফাইভ’ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে যুক্তরাজ্যের তথ্য পাচারকারী কেজিবির গুপ্তচর চক্র। ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত ইউরি শিভেতস টেলিফোনে গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘মানুষ যখন মাত্র শিক্ষার্থী থাকে তখন তাদের নিয়োগ দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য গড়ে তোলা-তারই উদহারণ হচ্ছে এটি। ট্রাম্পের সঙ্গে এমনটাই ঘটেছে।’ ১৯৭৭ সালে ট্রাম্প কীভাবে ট্রাম্প রাশিয়ার রাডারে ধরা পড়েছিলেন ক্রেইগ আঙ্গার তার বইতে সেই বর্ননা দিয়েছেন। ওই সময় ট্রাম্প চেক মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে বিয়ে করেছিলেন। চেকোস্লোভাকিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা তখন কেজিবির সহযোগিতায় কাজ করতো।
ট্রাম্পের ওপর নজরদারির কাজটি দেখভাল করতো চেক গোয়েন্দা সংস্থাই। এর তিন বছর পর ট্রাম্প তার প্রথম বড় আবাসন ব্যবসা শুরু করেন। নিউ ইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছে গ্র্যান্ড হায়াত নিউ ইয়র্ক হোটেল চালু করেন তিনি। হোটেলের জন্য ওই সময় ট্রাম্প ২০০ টেলিভিশন কিনেছিলেন রুশ প্রবাসী সিমিয়ন কিসলিনের কাছ থেকে। নিউ ইয়র্কের ফিফথ অ্যাভিনিউতে জয়-লুড নামে একটি ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানের সহ-মালিক ছিলেন সিমিয়ন।
শিভেতস জানান, জয়-লুড নিয়ন্ত্রণ করতো কেজিবি এবং কিসলিন কেজিবির ‘স্পটার এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করতেন। তিনিই ট্রাম্পকে সম্ভাবনাময় তরুণ ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করেন। ১৯৮৭ সালে ট্রাম্প ও তার প্রথম স্ত্রী ইভানা মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গ সফর করেন। ওই সময় কেজিবির গোয়েন্দারা ট্রাম্পকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। সাবেক মেজর শিভেতস বলেন, ‘কেজিবির পক্ষে এটা ছিল মনোমুগ্ধকর। তার (ট্রাম্প) ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তারা প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছিল। তাই তারা জানত যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে কে।
তার সম্পর্কে অনুভূতি ছিল যে, তিনি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন এবং তিনি চাটুকারিতা পছন্দ করতেন।’ তিনি বলেন, ‘এটাকেই তারা কাজে লাগিয়েছিল। তারা খেলাটি এমনভাবে খেলল যেন তারা তার ব্যক্তিত্বে বেশ মুগ্ধ হয়েছে এবং বিশ্বাস করেছিল এই লোকটিরই এক দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত; তার মতো মানুষই এই পৃথিবী পরিবর্তন করতে পারে। তারা তাকে এই তথাকথিত শব্দনির্যাস দিয়ে পুষতো এবং এটি ঘটেছিল। তাই এটি সাবেক কেজিবির সক্রিয় পদক্ষেপগুলির একটি বড় অর্জন ছিল।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন